নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২,৬৮৬ জন। প্রথম রোগী শনাক্তের পর সাড়ে তিনমাসে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হলো এক লাখ ৮১ হাজার ১২৯ জন।
এই সময়ের মধ্যে যতগুলো নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ২৪ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষায় একজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১,১৯৩ টি নমুনা পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানা গেছে।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৯,২৯৪৬৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার ১৯.৪৯ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে এই রোগে মোট ২৩০৫ জনের মৃত্যু হলো।গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ আর পাঁচ জন নারী।বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় আটই মার্চ। তবে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ই মার্চ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১,৬২৮ জন আর এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮৮,০৩৪ জন।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এন্ড মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, এই পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ ৫৫৩ জন। এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ২৭১ জন।
দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে একধরনের ঘোলাটে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে বলা হচ্ছে, করোনার সংক্রমণ কমে আসছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২০-২৩ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ অবস্থাকে স্থিতিশীল হিসেবে দেখছেন তারা। পাশাপাশি দেশে করোনাভাইরাসের রিপ্রোডাকশন রেট (আর-নট) কমে শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশে নেমে আসাকে পজিটিভ হিসেবে দেখছেন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা কমে আসায় ধীরে ধীরে মোট সংক্রমণও কমবে।
একইভাবে, করোনাা মোকাবিলায় গঠিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, করোনার সংক্রমণ পিকের কাছাকাছি ও করোনার সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এভাবে থাকলে চলতি মাসের তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহ থেকে করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করতে পারে।
অনুরূপভাবে গত পাঁচ দিনের হিসাবে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ হার নিম্নগামী বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্সশবিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ট্র্যাকার। সেখানে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে বিশ্বের ২০টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ আটটি দেশে সংক্রমণ নিম্নমুখী। অন্য দেশগুলো হলো ইরান, রাশিয়া, চিলি, পাকিস্তান, মিসর, সৌদি আরব ও ইকুয়েডর। আর করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, ভারত, পেরু, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরাক, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনায়।
কিন্তু করোনা পরীক্ষার বিভিন্ন ল্যাবরেটরির গবেষক এবং দেশের বিশেষজ্ঞরা এ তথ্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। তাদের মতে, সংক্রমণ কমার জন্য যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন, সেগুলোর কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। উল্টো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। নমুনা সংগ্রহ কমেছে। সংক্রমণের প্রকৃত গতি-প্রকৃতি জানার জন্য যেসব উপাত্ত দরকার, সেগুলো নিয়ে একধরনের লুকোচুরি করা হচ্ছে। ফলে করোনার সংক্রমণের সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ করে সরকারি ল্যাবে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা সংগ্রহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফি নির্ধারণসহ নানা ধরনের শর্ত আরোপ করায় মানুষ পরীক্ষা করতে আসছে না। ফলে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও সেটাই প্রকৃত চিত্র কি না, তা বোঝা যাচ্ছে না।
ল্যাবের এসব বিশেষজ্ঞ এমনও বলেছেন, সংক্রমণ এক জেলায় কমলে অন্য জেলায় বাড়ছে; বিশেষ করে যশোর ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। এসব বিশেষজ্ঞের মতে, কয়েক দিনে সংক্রমণের হার ১-এর নিচে নেমে এলেও তাতে সংক্রমণ কমেছে ঠিক এমনটা বলা যাবে না। কারণ দুই সপ্তাহ ধরেই পরীক্ষা কম হচ্ছে। উপসর্গ নেই এমন সন্দেহজনকদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে গেছেন এমন লোকজনদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে না। এমন হতে পারে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীও কম আসছে। বৃষ্টির কারণেও লোকজন কম বাইরে বের হচ্ছে। ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ কম হচ্ছে। এসব কারণে আপাতদৃষ্টিতে সংক্রমণের হার হয়তো ১-এর নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে নমুনা পরীক্ষা বেশি করা হলে এবং বন্যা ও বৃষ্টির কারণে লোকজনের পরীক্ষা কেন্দ্র বা হাসপাতালে উপস্থিতি কম না হলে সংক্রমণের হার ঠিক কী বোঝা যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের সঠিক চিত্র কী জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দৈনিক পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার ২০-২৩ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আগের তুলনায় ঢাকায় সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু জেলায় সংক্রমণ অবশ্য কিছুটা বেড়েছে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রিপ্রোডাকশন রেট দুই সপ্তাহ ধরে কমছে। আমরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে সার্ভিলেন্স করি। তাতে দেখা গেছে, গত রবিবার আর-নট ১-এর নিচে, শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। তার আগের সপ্তাহে আর-নট রেট ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪। গত রোজার ঈদের পর এটি বেড়ে ১ দশমিক ৯৯ হয়েছিল। এপ্রিলে করোনার আর-নট রেট ছিল ২ শতাংশ।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আর-নট রেট ১-এর নিচে থাকা একটা পজিটিভ সাইন। কারণ আর-নট রেট হ্রাস পাওয়ায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তি একজনের কম মানুষকে সংক্রমিত করবে। এটি আমাদের জন্য ভালো দিক। ফলে আস্তে আস্তে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। আশা করছি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করবে।
অবশ্য আর-নট রেট কমলেও করোনার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতির ক্ষেত্রে সামনে কিছু ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, সামনের কোরবানি ঈদ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ঈদ উপলক্ষে মানুষ বাড়ি যাবে ও আবার কর্মস্থলে ফিরে আসবে। পশু কেনাবেচা করতে হাটবাজারে যাবে। এতে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানা হলে ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর রাখলে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সংক্রমণ কমতে শুরু করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়, একটি দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না। সংক্রমণ কমছে কি না, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় আরটির মান কত? একজন করোনা রোগীর মাধ্যমে কতজন সংক্রমিত হন, সেটাই সংক্রমণ হার বা ইফেকটিভ রিপ্রোডাকশন রেট (আরটি)। আরটি ১-এর বেশি থাকার অর্থ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিপজ্জনক পর্যায়ে। এটি অন্তত দুই সপ্তাহ একের নিচে থাকলে বলা যায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তা কমতির দিকে। এ ছাড়া রোগী শনাক্তের হার ও মৃত্যু এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু কমে এলে বোঝা যায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে। দেশে এসব নির্দেশকের বিশ্লেষণ থেকেই সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে এমন ঘোলাটে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, কী কী কারণে আর-নট কমছে, সেসব কারণ খুঁজে পাই না। এর জন্য যদি আমরা তিন-চারটা ভালো কারণ পেতাম, তা হলে বলতে পারতাম আর-নট কমে এসেছে। খেয়াল করে দেখবেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল লাল-হলুদ-সবুজ জোন কার্যক্রম। এক মাসের বেশি সময়ে সেটা হয়েছে ঢাকার মাত্র দুই জায়গায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও সেটার বাস্তবায়নই যদি ভালো না হয়, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগ কী এমন কাজ করল যে সংক্রমণ কমে গেল। তা হলে কি তারা লুকিয়ে লুকিয়ে সারা দেশে অনেক ট্রেসিং ও টেস্টিং করছে, কোয়ারেন্টাইন করছে? এমন কোনো তথ্যও তো নেই।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেক রোগী যদি গড়ে ২০ জন লোকের সংস্পর্শে এসে থাকে, তা হলে সে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখের মতো। তারা কত লাখ লোককে ট্রেস করেছে? আমরা জানি করেনি। টেস্টিং কতটুকু হচ্ছে? হচ্ছে না। বরং কমে যাচ্ছে। কেবল একটা সাযুজ্য পাচ্ছি যে টেস্ট কমিয়ে দিলে রোগীর সংখ্যা কমছে। টেস্ট বাড়িয়ে দিলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সুতরাং এসব তথ্যের কোনো গুরুত্ব নেই। এটা বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্র না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) এক দিনেই ৬০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেখানে যদি বাড়তে পারে, বাংলাদেশে কী ফ্যাক্টর আছে যে বাড়বে না। বাংলাদেশের তিন দিক বেষ্টিত ভারত যদি সংক্রমণে তৃতীয় স্থানে যায়, তা হলে বাংলাদেশে কেন কমবে? সে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, সংস্কৃতি, আমাদের মতোই। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কমাটা কতটা সঠিক। রোগী বেশি পাচ্ছে, কিন্তু সেটা লুকাচ্ছেÑ স্বাস্থ্য বিভাগ যেন এটা না করে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনা সংক্রমণে আমরা খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি। সংক্রমণে যে ঊর্ধ্বগতি, সেটা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধির পৌনঃপুনিক ধারার মধ্যে আছি। এখানে সমস্যা হচ্ছে, কেসগুলো ঠিকমতো রিপোর্টেড হচ্ছে না। ট্রেস হচ্ছে না। সামনে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গত ঈদের মতোই একটা ঝুঁকি রয়ে গেল সংক্রমণের ধারাটা আরেক ধাপ এগোবে কি না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এখন যদি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হয়, ওয়ারীর মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা হলে আমার ধারণা দৈনিক ৬-১০ হাজারের মতো রোগী শনাক্ত হবে। এটা হলে লাভ আছে। কারণ আমরা যত বেশি রোগীকে শনাক্ত করে আইসোলেট করতে পারব, তখন সংক্রমণ অধঃগতিতে নামানোর একটা সুযোগ পাব। তা না হলে এ ধরনের মুখরোচক তথ্য দিয়ে সাময়িক স্বস্তি পেতে পারি। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণ হবে না।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংক্রমণের হার কিছু জায়গায় কমছে, কিছু জায়গায় বাড়ছে। এই ভাইরাসের নিয়মটাই এমন। একটা জায়গায় বেশি হবে। সেখানে কিছু মানুষ রেজিস্ট্যান্স তৈরি করবে। পরে সেখানে কমবে ও সেখান থেকে ছড়াবে আরেক জায়গায়। ফলে সার্বিকভাবে সংক্রমণ কমেছে, এমনটা বলা যাবে না। আমরা একটা ‘পিক’-এ গিয়ে একই জায়গায় রয়েছি। নামছি না। অথচ বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ নিচের দিকে নামার কথা।
বাংলাদেশে এখনো করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী না হওয়ার কারণ হিসেবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শহর ও গ্রামকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারছি না। যেখানে বেশি সংক্রমণ, সেখানকার মানুষ কম সংক্রমণ এলাকায় মিশে যাচ্ছে। এটা আলাদা রাখতে পারছি না।
এই বিশেষজ্ঞ খুলনা বিভাগের সাত জেলার তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, আমরা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ সাত জেলার করোনা পরীক্ষা করি। এর বাইরেও অনেক নমুনা আসে। এখন সংক্রমণ যশোরে বেশি। এখানে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ। কিন্তু নড়াইল, বাগেরহাট, ঝিনাইদহে কমছে। এসব জায়গায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এর পাশের জেলায় অনেক কম। মোট পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার আগের মতোই রয়েছে। কমেনি-বাড়েনি। তবে সংক্রমণ কমবে। যদি কোরবানির ঈদে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি না করি, তা হলে এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ বা শেষের দিক থেকে কমবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, তিন-চার দিন ধরে শনাক্ত বেশি কম পাচ্ছি। আগে কিন্তু অনেক বেশি পেয়েছি। কারণ পরীক্ষাও কমেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে সংক্রমণের হার কমেছে। তবে সেটা প্রকৃত চিত্র কি না, তা পরিষ্কার নয় চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাবপ্রধান ডা. শাকিল আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমেছে। যে পরিমাণ টেস্ট করছি, সেখানে পজিটিভের হার কমে আসছে। আগে ২২-২৩ শতাংশ পজিটিভ কেস পেতাম, এখন সেটা ১৭-১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে নমুনার সংখ্যাও বেশ কমেছে। ৫৫০-৬০০ নমুনা এখন ৩০০-৩৫০-এ নেমে এসেছে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, সংক্রমণ কমছে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না পরীক্ষার ফি নির্ধারণের জন্য। কারণ আগে সবাই টেস্টের আওতায় ছিল। এখন দুইটা গ্রুপের মানুষ বাদ পড়ছে। যারা গরিব মানুষ টাকা দিতে পারে না, তারাও বাদ পড়ছে। আরেকটা গ্রুপ যাদের উপসর্গ খুবই কম, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে কিন্তু এখনো উপসর্গ দেখা দেয়নি, তারা আগে টেস্ট করতে আসত। এখন আসছে না। যেহেতু তারা টেস্টই করতে আসছে না, তার মানে কিছু রোগী নেটওয়ার্কের বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাই সত্যিকারভাবে আমি নিশ্চিত না সংক্রমণ কমেছি কি না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আর-নট রেট যদি এক হয়, তাহলে সে আর সংক্রমণের সংখ্যাটা বাড়াতে পারবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আর-নট কমিয়ে দেওয়া। সেটা কমে গেলে আর সংক্রমণ হবে না।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত