লকডাউন ও অনাবৃষ্টিতে কেমন আছে চট্টলার কৃষক

মাঈনুল ইসলাম ডিউক, মীরসরাই প্রতিনিধি: গত বছর কোভিড-১৯ যখন অর্থনীতিতে ছোবল দেয় সেই মন্দা কাটিয়ে উঠতে কৃষির বিকল্প ছিল না। সেই বছরের অর্ধেক সময় করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকায় তৈরি পোশাক শিল্পের আয় বন্ধ ছিল, বন্দরের আয় বন্ধ ছিল, রেমিট্যান্স আশানুরূপ হয়নি। এই মন্দা কাটিয়ে উঠার জন্য জুতসই সিদ্ধান্ত ছিল কৃষি বিপ্লব।

সেসময় অর্থাৎ গত বছরের ১৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বব্যাপী যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বিশ্ব নেতারা জানিয়েছেন, তা থেকে রক্ষা পেতে দেশের একখণ্ড জমিও অনাবাদি না রাখতে আমি সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেছিলেন, সারা বিশ্ব করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অনেকেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। আমাদের উর্বর মাটি আছে, তাই এই সময় যে যেভাবে পারেন- ফলমূল, শাকসবজি আবাদ করুন। এই সময় আমাদের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যার এই আহ্বানে সাড়া দিয়িছিলেন এদেশের কৃষক সমাজ। তারা নিজেদের শরীরে রক্ত পানি করা পরিশ্রম দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। এজন্য তখন কোন জমিই অনাবাদি ছিল না। এর ফলে হতাশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে লাফিয়ে চলছিল অর্থনীতির চাকা।

ফাইল ছবি

একাজে যুক্ত হয়েছিল চট্টলার কৃষক সমাজও। কারণ, চট্টগ্রাম জেলা পাহাড় ও সমুদ্রের মিশেলে গড়া এক জনপদ বলে যে কোন কৃষিক পণ্যের উদপাদনে এ অঞ্চলের মাটি বেশ উর্বর। আগে এখানে কৃষিটা একান্ত পারিবারিক প্রয়োজনের নিরিখে হয়ে থাকলেও গত ১০ বছর কৃষিটা বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। ধান, গম, খেসারী, বিউলী, মুগ, মসুর, ছোলা, মটর যদিও নিয়মিত চাষ হতো তার উপর এ বছর সূর্ষমুখী ফুল, ভূট্টা, কলা, পেঁপে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে।

এবার কৃষকরা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা জিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, ঢেড়স বিক্রি করে কয়েক চালান ভালই আয় করেছে। তবে অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে অনেক ক্ষেত অসময়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে চৈত্রের দাবদাহে খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি ছাড়া কোন গতি দেখা যাচ্ছে না। দুয়েক পশলা বৃষ্টি পড়লে কৃষকদের হয়তো প্রাণ ফিরে আসতো।

কৃষক বলছেন, মরিচ, বিউলি ক্ষেত, ঢেঁড়স এবং করলার জন্য বৃষ্টিটা খুব জরুরী৷ বৃষ্টিবিঘ্নতার কারণে এবং লকডাউন ঘোষণার ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে করলা, ঢেঁড়স, মরিচ চাষীদের। ক্রমাগত বাজারে পাইকারী দর কমতে থাকায় কিছু কিছু চাষী এখনও লোকসান গুনছেন।

এরপরও আশায় বুক বাঁধছেন চট্টলার কৃষক সমাজ। বলছেন, আশা করা যায় কৃষিজ পণ্যবাহী পরিবহন যদি যথাযথ সেবা দেয়, বাজারদর যদি কৃষকদের অনুকূলে থাকে তাহলে দ্বিগুণ উৎসাহে পরবর্তী ফলনের ক্ষেত্রে নজর দিবেন তারা।

স্থানীয়দের দাবি, কৃষক নিরাশ হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে চরম খাদ্য সংকটে পড়বে মানুষ। ওই দিকে বাজার সিন্ডিকেট বরাবরের মত সুবিধা হাসিল করে কৃষক এবং সাধারণ ভোক্তাদের অসুবিধায় ফেলবে।