রোহিঙ্গা সমস্যার কথা পুরো বিশ্ব জানে, সেখানে সৌদি আরবের এ বিষয়টি না জানার কথা নয়। এরপরও তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের চালানো জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে কথা না বলে বাংলাদেশের কাছে অন্যায় আবদার করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘সৌদি আরব আমাদের বলেছে, তারা তাদের দেশে স্টেটলেস লোক রাখে না। তোমাদের দেশের রোহিঙ্গা অনেকেই আসছে। তাহলে তোমরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু করো। আমরা বলেছি, ওদের যদি আগে কখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকে কিংবা কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারে যে, তারা কোনোদিন বাংলাদেশে ছিল, তাহলে তাদের পাসপোর্ট দেব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘বহুদিন আগে প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৭৭ সালের দিকে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছিল। তখন সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা ঘোষণা দিলেন যে, তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবেন। পরবর্তী সময়ে আশি-নব্বইয়ের দশকে অনেক রোহিঙ্গা দেশটিতে যান। তাদের ছেলেমেয়েরা কখনোই বাংলাদেশে আসেনি। তারা সৌদি সংস্কৃতি জানে এবং আরবি ভাষায় কথা বলে। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানে না।
কিন্তু ওদের কোনো পাসপোর্ট নাই, ওখানেই আছে। সৌদি আরব আমাদের বলেছে, তারা তাদের দেশে স্টেটলেস লোক রাখে না। তোমাদের দেশের রোহিঙ্গা অনেকেই আসছে। তাহলে তোমরা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু করো। আমরা বলেছি, ওদের যদি আগে কখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকে কিংবা কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারে যে, তারা কোনোদিন বাংলাদেশে ছিল, তাহলে তাদের পাসপোর্ট দেব।’
রোহিঙ্গা সংকটে সৌদি আরবের এমন দায়িত্বহীন আচরণ মুসলিম বিশ্বের কাম্য নয়। এমনকি মানবিক বোধসম্পন্ন কোনো মানুষ বা দেশও এমন আবদার মেনে নেবে না। সুতরাং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা যুক্তিযুক্ত। আমরা মনে করি, সৌদি আরব এমন অন্যায় আবদার থেকে বেরিয়ে এসে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে আসবে।
বাংলাদেশ বহুদিন ধরে মিয়ানমারের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের দায় বহন করে আসছে। বিশ্বনেতাদের মানবিক আহ্বানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখন রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। সৌদি আরবও যেহেতু রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভুক্তভোগী, তাই তারা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে তারাও যেমন উপকৃত হবে, তেমনই রোহিঙ্গারাও নিজভূমে ফিরতে পারবে।
এজন্য বাংলাদেশের কাছে অন্যায় আবদারের বদলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সৌদি আরবের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।