বিশ্বের প্রায় সব স্টেলথ ফাইটার জেট একক ইঞ্জিনের। কিছু ফাইটার জেট অবশ্য দুই ইঞ্জিনেরও রয়েছে। কিন্তু চীন তার নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার জেটে তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। বিশ্বের আর কোনো দেশই ফাইটার জেটের এমন নকশা করেনি। তাহলে চীনের নতুন ফাইটার জেটের এমন নকশার পেছনে রহস্য কী?
গেল ২৭ ডিসেম্বর চ্যাংডু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের ফ্যাক্টরি এয়ারফিল্ডের ওপর তিন ইঞ্জিনের J-36 আকাশে ওড়ায় চীন। এই চ্যাংডু এয়ারক্রাফট করপোরেশনই চীনের পঞ্চম প্রজন্মের J-20 যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ত্রিভুজাকার J-36-র ডানা থাকলেও উলম্ব লেজ নেই। রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম যুদ্ধবিমানটির ইঞ্জিনের জন্য রয়েছে তিনটি নজেল। সর্বশেষ প্রযুক্তির স্টেলথ কমব্যাট ড্রোনের ক্ষেত্রেও এমন নকশা দেখা যায়। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোপনে তাদের ষষ্ঠ প্রজন্মের যে স্টেলথ ফাইটার ওড়ায় সেটিরও কোনো লেজ নেই।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদের ফাইটার জেটে তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করেনি। কেননা জেনারেল ইলেকট্রিক এবং প্রাট অ্যান্ড উইটনির মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠান খুব শক্তিশালী ইঞ্জিন তৈরি করে থাকে। প্রাট অ্যান্ড উইটনির F135 ইঞ্জিন F-35 যুদ্ধবিমানকে অনায়েসে আকাশে ভাসিয়ে রাখে।
আবার এই ইঞ্জিন আফটার বার্নার মোডে ২০ টন পর্যন্ত থ্রাস্ট উৎপন্ন করে। অথচ চীনের তৈরি কোনো ইঞ্জিন এতটা থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম নয়। চীন কয়েক বছর আগে, ফরাসি-মার্কিন CFM56 ইঞ্জিনের একটি চীনা ধরন WS-10 তৈরি করে। এই ইঞ্জিন সর্বোচ্চ ১৫ টন পর্যন্ত থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে পারে। অবশ্য চীন এখন WS-10-র চেয়ে উন্নততর WS-20 ইঞ্জিন তৈরি করতে চাইছে।
পুরোপুরি লোড করার পর J-36-র ওজন হতে পারে ৫০ টন। ধারণা করা হচ্ছে J-36 ফাইটারে তিনটি WS-10 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে ভারী বিস্ফোরক বহন করলেও হাইপারসনিক গতিতে ছুটতে পারবে J-36। তবে তিন ইঞ্জিন ব্যবহারের পেছনে আরও কারণ থাকতে পারে।
বিশেষ করে আধুনিক যুদ্ধবিমানের ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইঞ্জিন থেকেই আসে। আবার রাডার সেন্সরে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এছাড়া ডিরেক্টেড এনার্জি উইপেন, হাই-এনার্জি লেজারের মতো অস্ত্রেও প্রচুর শক্তি খরচ হয়।
তিন ইঞ্জিন ব্যবহার করে J-36 যুদ্ধবিমান অন্য ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার জেটের প্রচলিত নকশার ধারণা বদলে দিয়েছে। কারণ চীনা যুদ্ধবিমান নির্মাতাদের ধারণা, এই ফাইটার জেটের হয়তো অনেক শক্তি লাগে। দুটি WS-10 ইঞ্জিন দিয়ে হয়তো সেই শক্তি উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই হয়তো তৃতীয় আরেকটি ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে চীন।
তিন ইঞ্জিন ব্যবহৃত চীনের নতুন এই স্টেলথ ফাইটার একই সঙ্গে ইঞ্জিনের নকশা নতুনত্ব এবং চীনের ফাইটার প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ফুটিয়ে তুলেছে।