রঙ ফর্সা করার ক্রিম কতটুকু কার্যকর

আমরা খুব ভালো মানুষ বোঝাতে বলি সাদামনের মানুষ। কালো হৃদয়, কালো ইতিহাস বা কালো রাত, অর্থাৎ নেতিবাচক কিছু বোঝাতে ব্যবহার হয় ‘কালো’ শব্দটি।”এছাড়া শিল্প, সাহিত্য, সিনেমায় সৌন্দর্য বলতে, দুধে-আলতা রংয়ের বর্ণনাই উঠে এসেছে বার বার। শিশুদের রূপকথার গল্প কিংবা কার্টুনেও ফর্সা রঙের বন্দনা।

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন থেকে নাম পরিবর্তন

গায়ের রং নিয়ে মানুষের মনে গেঁথে থাকা এমন ধারণাকে পুঁজি করে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে রং ফর্সাকারী প্রসাধনীর বিশাল বাজার।

ফেয়ারনেস ক্রিমের এসব বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, তাদের ক্রিম ব্যবহারের ফলে একজনের চেহারা কালো থেকে ফর্সা হয়ে উঠছে। আর এই ফর্সা হয়ে ওঠার ফলে তিনি পৌঁছে গেছেন জীবন এবং ক্যারিয়ারের সফলতার শিখরে।

এসব বিজ্ঞাপন একটা অর্থই বহন করে যে, ফর্সা ত্বক হচ্ছে সফলতার প্রতীক। যা প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে থাকা বর্ণবাদকে উস্কে দিচ্ছে।”রং ফর্সাকারী ক্রিম মেখে বা রূপচর্চা করে গায়ের রং কালো থেকে ফরসা করার চেষ্টা এক ভয়াবহ সামাজিক চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।”এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন ও বিক্রির বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে প্রতিবাদ কম হয়নি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের ঝড় বয়ে যায়।তারই ধারাবাহিকতায় রং ফর্সাকারী পণ্য বা বর্ণবৈষম্য সমর্থন করে এমন পণ্যগুলো নিষিদ্ধের চাপ সৃষ্টি হয়।

চাপ আসে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে সুপরিচিত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ব্র্যান্ডটির ওপরেও।

গত দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী চেঞ্জ অর্গানাইজেশনের তিনটি পিটিশন, বিশ্ব বাজার থেকে এই ক্রিম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। সেখানে এশিয়া এবং পশ্চিমের এশিয়ান দোকানগুলো থেকে ক্রিমটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।

‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’র বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগে কয়েক হাজার মানুষ সেখানে সাক্ষর করেছিলেন।ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপন ও বিক্রি নিষিদ্ধের দাবিতে ভারতেও শত শত মানুষ টুইট করেছে।

এমন নানা চাপের মুখে বিশ্বখ্যাত রং ফর্সাকারী ব্র্যান্ড ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, তাদের ক্রিমের নাম থেকে ‘ফেয়ার’ অর্থাৎ ‘ফর্সা’ শব্দটি বাদ দেবে বলে জানায়।ফেয়ার এন্ড লাভলির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয়। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করে।

কালো রংকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই ব্র্যান্ডটি অতীতেও নানা সমালোচনার শিকার হয়েছিল। তাদের বিজ্ঞাপনের মূল বিষয় ঘুরে ফিরে একটাই যে প্রেমের সন্ধানে বা আকর্ষণীয় চাকরি পেতে ফর্সা রং চাই।ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মেখে গায়ের রং ফর্সা হতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় এমন বিজ্ঞাপনও তারা প্রচার করেছে।

ক্রিমের প্রচারে ফর্সা, উজ্জ্বল এসব শব্দের ব্যবহার বর্ণ-বৈষম্যকে উস্কে দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই সৌন্দর্যের ধারণায় আরও গ্রহণযোগ্যতা আনতে নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সেখানে জানানো হয়।তারা বলছে, ‘ব্র্যান্ডটির নতুন নাম অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নামটি পরিবর্তিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

সত্তরের দশক থেকে যাত্রা শুরু করা এই ক্রিম বাজারে আসার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।ভারতে এখনও বছরে ২৪০০ কোটি রুপি ব্যবসা করে এই একটি মাত্র পণ্য।

ওদিকে গত সপ্তাহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জনসন এবং জনসন ঘোষণা করেছে তারা তাদের দুটি রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিক্রি বন্ধ করে দেবে।

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তারই ধারাবাহিকতায় এশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যে জনপ্রিয় দুটি ক্রিম উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

বাজার

সারা বিশ্বে গায়ের রং ফর্সা করার এই বাজারের আকার ২০১৭ সালে ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৮৯০ কোটি ডলারে।এর চাহিদা মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যবিত্ত পরিবারে।

রং ফর্সাকারী এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সাবান, ক্রিম, ব্রাশ, ট্যাবলেট। এমনকি ইঞ্জেকশনও রয়েছে। মানব দেহে মেলানিন পিগমেন্টের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এই ইঞ্জেকশন এবং এগুলো অনেক জনপ্রিয়।

নাইরোবিতে এক নারী মুখে ক্রিম মাখছেন রং ফর্সা করার জন্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেবে দেখা গেছে, আফ্রিকাতে প্রতি ১০ জন নারীর চারজন রং ফর্সাকারী পণ্য ব্যবহার করে থাকেন।

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নাইজেরিয়াতে। সেখানে ৭৭% নারী ত্বকের রং উজ্জ্বল করার জন্যে নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। তার পরেই রয়েছে টোগো, ৫৯% এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫%।এশিয়ায় ৬১% ভারতীয় নারী এবং চীনে ৪০% নারী এসব ব্যবহার করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব জিনিসের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদাও বাড়ছে। একই সাথে এসব মোকাবেলা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত বছর ঘানাতে কর্তৃপক্ষ গর্ভবতী নারীদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিল রং ফর্সাকারী ট্যাবলেট না খাওয়ার জন্যে। কারণ এসব ট্যাবলেটে পাওয়া গেছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গ্লুটাথিওন।

গর্ভবতী নারীরা মনে করেন তারা যদি এই ট্যাবলেট খান তাহলে তাদের গর্ভে থাকা সন্তানের গায়ের রং ফর্সা হবে।এধরনের পণ্য মোকাবেলার জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকাতে আছে কঠোর কঠোর আইন। গাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট এবং রোয়ান্ডাতে রং ফর্সাকারী যেসব পণ্যে হাইড্রোকুইনোন আছে সেগুলো নিষিদ্ধ করেছে।

শরীরে মেলানিনের (বাদামী কিম্বা কালো পিগমেন্ট, যার কারণে ত্বকের রঙ নির্ধারিত হয়) উৎপাদন কমিয়ে দেয় হাইড্রোকুইনোন। একই সাথে এটি স্থায়ীভাবে ত্বকের ক্ষতিও করতে পারে।

চিকিৎসা

ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশন বলছে, “চর্ম চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে হাইড্রোকুইনোন আছে এরকম পণ্য নিরাপদে ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের যেসব স্থানে কালো দাগ পড়ে গেছে সেগুলো এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং তাতে ভালো ফল পাওয়াও সম্ভব।”

“রং ফর্সাকারী ক্রিমের কোনো কোনোটি হয়তো সহায়ক। কিন্তু সেটা একজন ত্বক বিজ্ঞানীর পরামর্শে ও তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে,” বলেন ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশনের একজন মুখপাত্র এন্টন আলেকজানড্রফ।

কার্যকারিতা

তবে ব্রিটিশ স্কিন ফাউন্ডেশন বলছে, “পুরো ত্বক ফর্সা করার নিরাপদ কোন উপায় নেই।” “দোকানে যেসব ক্রিম বিক্রি হয় সেগুলো যে আসলেই গায়ের রং ফর্সা করে এমন প্রমাণ নেই। এর উল্টো ফলও হতে পারে। এই ক্রিম আপনার ত্বককে অস্বাভাবিক রকমের শাদা অথবা আরো কালোও করে দিতে পারে। এর ফলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ত্বকের স্বাভাবিক গুণাবলীও,” সতর্ক করে দিয়েছেন আলেকজানড্রফ।

চিকিৎসকরা বলছেন, আসলে কোন ক্রিমই শরীরের রংকে ফর্সা করতে পারে না।

তবে ম্যালাসমার মতো কিছু কিছু সমস্যার চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসকরা রং ফর্সাকারী পণ্য প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

বয়স হলে শরীরে এরকম সমস্যা দেখা দেওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। এতে ত্বকে বাদামী কিম্বা ধূসর রঙের দাগ তৈরি হয়। বিশেষ করে মুখে। নারীদের দেহে এরকম হওয়ার হার বেশি। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়।

“একজন চর্ম চিকিৎসকের মাধ্যমে ত্বকের রং ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে সেজন্যে অনুমোদিত কিছু ক্রিম আছে যা ডাক্তারদের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে,” বলেন আলেকজানড্রফ।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

                 অনিরাপদ ক্রিম ব্যবহারের ফলে মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নারীরা চিকিৎসকদের পরামর্শ ও নজরদারি ছাড়াই এসব রং ফর্সাকারী কসমেটিক ব্যবহার করতে শুরু করে দেন। কিন্তু এসব প্রসাধনীর গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন:ক)ত্বকে চুলকানি খ) প্রদাহ গ) জ্বালাপোড়া ঘ) ফুলে যাওয়া ঙ) ফুসকুড়ি পড়া

মার্কারি

অনেক ক্রিমে ক্ষতিকর মার্কারিও পাওয়া গেছে।

কিছু কিছু পণ্য যেগুলো দ্রুত রং ফর্সা করার দাবি করে সেগুলোতে নানা রকমের ক্ষতিকর উপাদানও থাকতে পারে।”যেসব পণ্যে মার্কারি আছে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর,” বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।কিন্তু তারপরেও মার্কারি আছে এরকম পণ্য চীন, লেবানন. মেক্সিকো, পাকিস্তান, ফিলিপিন, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হচ্ছে।

শরীরে মেলানিন গঠনের প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেয় এই হাইড্রোকুইনোন

যেসব পণ্যে মার্কারি আছে সেগুলোর বিক্রি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আফ্রিকার বহু দেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফিলিপিন এবং আরো কয়েকটি দেশ অল্প পরিমাণে মার্কারি আছে যেসব পণ্যে সেগুলো বিক্রির অনুমোদন দিয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য

“মার্কারি হচ্ছে বিষ,” বলেন আলেকজানড্রফ। তিনি বলেন, এর ফলে নানা রকমের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।মার্কারি আছে যেসব সাবান ও ক্রিমে সেগুলো ব্যবহার করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে: ১)কিডনির ক্ষতি ২)ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া, রং বদলে যাওয়া, কালশিটে দাগ পড়া ৩) ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাওয়া ৪) উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা, মানসিক অস্থিরতা থেকে বৈকল্য ৫) স্নায়ু-জনিত সমস্যা

রং ফর্সাকারী ক্রিম কি আসলেই ত্বক ফর্সা করে?

লেজার মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক ডা. ঝুমু জাহানারা খান বলছেন, আসলে কোন ক্রিমই শরীরের রংকে ফর্সা করতে পারে না। কারণ ত্বকের রঙের সাথে শরীরের ভেতরের অনেক উপাদান জড়িত রয়েছে।

”আমরা কখনোই গায়ের রংকে সাদা করতে পারি না, উজ্জ্বল করতে পারি। আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক যে মেলানোসাইড সেলগুলো আছে, যা রঞ্জক তৈরি করে, সেটাই আমাদের গায়ের রংটা ধারণ করে। এটা ত্বক রক্ষায় অনেকভাবে কাজ করে। ”

তিনি বলছেন, ”এখন বাজারে অনেক সস্তা ক্রিম এসেছে, যেগুলোয় অনেক ভারী রাসায়নিক এবং ক্ষতিকারক পদার্থ রয়েছে। এগুলো খুব তাড়াতাড়ি হয়তো ফর্সা বা সাদা ইফেক্ট দিয়ে দেয়, কিন্তু কিছুদিন পরেই সেটা বরং ত্বকের জন্য নানা ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। যেমন ত্বকটা হয়তো খুব লাল হয়ে ওঠে, জ্বলছে বা রোদে যেতে পারছে না। বাংলাদেশের বাজারে যেগুলো পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগ ক্রিমই আসলে এরকম।”

”আমাদের উচিত, নিজেদের যে স্বাভাবিক সৌন্দর্য রয়েছে, সেটাকেই ঠিকভাবে রাখা এবং যত্ন করা। মনে রাখতে হবে, সাদা হয়ে যাওয়া সম্ভব না। তবে কিছু মেডিকেশন আছে যেগুলোয় ত্বক হয়তো উজ্জ্বল হয়।” বলছেন মিজ খান।

কিন্তু যেভাবে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে অহরহ শরীরের ত্বক ফর্সা করার বিজ্ঞাপন বা ঘোষণা দেয়া হয়, তাহলে সেগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

ডা: ঝুমু জাহানারা খান বলছেন, ”মেডিকেল পণ্যের ওপর নানা নজরদারি আছে, আইন আছে। কিন্তু কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে সেটা নেই। সে কারণে ওরা যা খুশি তাই, অনেক আজেবাজে জিনিসও কনজ্যুমার পণ্য হিসাবে বাজারে ছাড়া হয়। যেমন ফর্সা করার সস্তা ক্রিম তো অবশ্যই ত্বকের ক্ষতি করবে।”

তিনি বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একজনের কথা শুনে আরেকজন পণ্য ব্যবহার করেন। কিন্তু একেকজনের ত্বক একেক রকম হওয়ায় কারো কারো জন্য সেটা চরম ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

বলিউড তারকাদের ফরসা হওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার :

‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্রিম থেকে অবশেষে উঠতে চলেছে ফেয়ার শব্দটি। উচ্ছ্বসিত সোশ্যাল মিডিয়া। বিপাশা বসু, রিচা চাড্ডা-সহ ‘কালো মেয়ে’রা ইনস্টাগ্রামে আবেগে ভাসছেন। আর এ সব দেখে আড়ালে মুখ টিপে হাসছেন নেটাগরিকদের একাংশ। কেন? আসলে ‘সুন্দর’ হওয়ার দায়ে বলিউডের অনেকেই যে স্ক্রিন লাইটেনিং অপারেশন করিয়েছেন, তা জানেন অনেকেই। বলিউডে গায়ের রং-ই কি তবে যোগ্যতার মাপকাঠি! প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কালো থেকে রাতারাতি ফরসা হওয়ার এই দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন যে সব বলিউড তারকারা:

শ্রীদেবী: দক্ষিণী এই অভিনেত্রীর জলবায়ুগত কারণেই দুধে আলতা রং ছিল না কোনো দিনই। তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের ছবিগুলি দেখলেই খানিক ঠাওর করা যায়। যত দিন এগিয়েছে শ্রীদেবীর গায়ের রং-ও বদলেছে সঙ্গে সঙ্গে। শোনা যায়, ফরসা হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তিনিও। শ্রীদেবী নিজে কখনো তা স্বীকার করেননি যদিও।

রেখা: পুরুষ হৃদয়ে হিল্লোল তোলা এই অভিনেত্রী এভারগ্রিন। তার ক্যারিশমায় মুগ্ধ আট থেকে আশি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, ফরসা হওয়ার অমোঘ আকর্ষণ নাকি উপেক্ষা করতে পারেননি তিনিও! রেখার প্রথম দিকের ছবি এবং পরের ছবিগুলির মধ্যে তুলনা করলে স্পষ্টতই গায়ের রঙের পার্থক্য চোখে পড়বে। সাহসী, বলিষ্ঠ সব সময় নিজের শর্তে চলা এই মানুষটিরও নিজের আসল গায়ের রং ঢাকতে হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে? এ নিয়ে মুখ খোলেননি রেখা। তবু চোখকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না।

কাজল: ফিল্মি পরিবার থেকে উঠে আসা কাজল নিজের অভিনয়ের দক্ষতার কারণে খুব সহজেই ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার কালো রং, জোড়া ভুরু আর সাবলীল অভিনয়ই ছিল তার ইউএসপি।

কিন্তু ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ছবি থেকেই কাজলকে দেখা যায় আগের থেকে অনেকটাই ফরসা হয়ে গিয়েছেন! কী ভাবে? তিনিও কি তবে…? কাজল বলেছিলেন, একেবারেই নয়। মেকআপের জন্য এমনটা মনে হয়েছে। কাজলের কামব্যাক ছবি ‘দিলওয়ালে’তে তার লুক কিন্তু বলছিল অন্য কথা।

দীপিকা পাড়ুকোন: বলিউডে নায়িকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান তিনিই। তার ফ্যান-ফলোয়ারের সংখ্যা আকাশছোঁয়া। বারবারই নিজেকে সুদক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। কিন্তু বলিপাড়ার অন্দরের গুঞ্জন, সিনিয়রদের দেখান পথেই নাকি হেঁটেছেন এই সুন্দরী। তবে দীপিকা মানতে চাননি, তবে তার মডেলিং জীবনের ছবি আর এখনকার ছবির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। নিজের বক্তব্যকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা দীপিকাও কী করে এই ফরসা হওয়ার মোহ থেকে বেরতে পারলেন না, প্রশ্ন অনুরাগীদের।

বিপাশা বসু: ইনস্টাগ্রামে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্রিম থেকে ‘ফেয়ার’ কথাটি উঠে যাচ্ছে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে একটি পোস্ট করেছেন বিপাশা। কীভাবে তার সেক্সিনেস-কে রঙের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বলিউড তার গায়ে ‘ডাস্কি’ লেবেল সেঁটে দিয়েছিল, তা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনিও। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, বিপাশা নিজেও কিন্তু বলিউডের এই দ্বিচারিতার শিকার। স্কিন লাইটনিং করিয়েছেন তিনিও। ফরসা হতে চেয়েছেন তিনিও! অন্তত বলিউডের গুঞ্জন তেমনই।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: সারা বিশ্ব আজ চেনে তাকে। একদা মিস ওয়ার্ল্ড প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এখনকার লুক আর আগের লুকের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। অনেকেই বলেন, নোজ জব করিয়েছেন তিনি। আর স্কিন লাইটনিং? সে দিকেও নাকি হাত বাড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী।

(উৎস: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিবিসি,ইন্টারনেট)