যশোরে দুটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে সেই শিমুল-জিহাদ

 

যশোরের অভয়নগর উপজেলার দামুখালীতে সুব্রত মন্ডল ও দত্তগাতিতে খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলায় আদালতে ডিবি পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও উভয় মামলার চার্জশিটে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত দু’জনই এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

যশোরের হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল শুক্রবার (২৪ মে) আদালতে চার্জশিট জমা দেন। খুলনার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খুলনা গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ১২ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম বর্ষা গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা বেগম ১৩ মে অভয়নগর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।

ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল জানান, নিহত খন্দকার রকিবুল ইসলাম চরমপন্থি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ ছিল। তারজন্য প্রতিপক্ষ চরমপন্থিরা ওই এলাকায় সুবিধা করতে পারতো না। এ কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেতে ডেকে এনে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।

অন্যদিকে, সুব্রত মন্ডল হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার শিমুল ভুইয়া, সোলায়মান মোল্লা, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার, ইসরাফিল মুন্সী, আরমান মুন্সী, গাজী আরাফাত হোসেন কাইফ, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দামুখালী গ্রামের শ্যামল মন্ডল, পিন্টু হালদার, চলিশিয়া গ্রামের আমিনুর মোল্লা, সরখোলা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, শাকিল সরদার, রাজিব মোল্লা, উত্তর সরখোলা গ্রামের সুমন মোল্লা, বুইকারা হাসপাতাল এলাকার রাব্বি হোসেন ও দত্তগাতি গ্রামের সাইফুল আলম মোল্লা।

২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অভয়নগর উপজেলার দামুখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেন সুব্রত মন্ডলকে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অমৃত মন্ডল ১৩ জানুয়ারি অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এ মামলা তদন্তকালে ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুইয়াসহ উল্লিখিত ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পান। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা সুব্রত মন্ডলকে হত্যা করেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে ভারতে নিয়ে হত্যার ঘটনায় শিমুল ভুইয়া ও জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিমুল ভূইয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে যশোরসহ বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে শিমুল ভূইয়া ঢাকার ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। কসাই জিহাদ কলকাতা পুলিশের হেফাজতে আছেন। এমপি আনারের মরদেহের টুকরো উদ্ধারে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন আনোয়ার উল আজিম আনার। এরপর থেকে আর তার খোঁজ মেলেনি। ফোন করলেও বারবার রিং হয়ে কেটে যায়। সাংসদের শেষ মোবাইল লোকেশন দেখাচ্ছিল ভারতের বিহারে। গত ১৪ মে থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও তার ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয় যে সে নয়াদিল্লি চলে গেছে। এরপর জানা যায়, তিনি ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের একটি বাড়িতে যান, সেই বাড়িতেই তাকে খুন করা হয়।