পদ্মার ইলিশের নামডাক শোনেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ এটাও অনেকেরই জানা। তবে প্রচারের আওতায় তেমন না আসা মেঘনার ইলিশ কিন্তু এর চেয়েও সুস্বাদু, আর ইলিশের প্রকৃত বাড়িও ভোলা উপকূলের মেঘনায়। মিঠা পানির এ নদীর ইলিশ যেমনই সুস্বাদু, তেমনই ঘ্রাণে মাতিয়ে রাখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এতসব কথা শুনে মেঘনার ইলিশ খেতে মন চাইছে নিশ্চয়ই। একবার দেখতে চান এ তথ্য কি আসলেই সত্য? কিন্তু ভাবছেন মেঘনা অববাহিকার তাজা ইলিশ পাবেন কোথায়? এসব চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। এজন্য সলিউশন নিয়ে এসেছে ‘সাধ্যের মধ্যে ইলিশের স্বাদ’ নামক একটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ। ঢাকা ও ঢাকার পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষের জন্য হোম ডেলিভারি সার্ভিস নিয়ে এসেছে তারা।
সাধ্যের মধ্যে ইলিশের স্বাদ এর উদ্যোক্তা এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রিহান সরদার প্রিয়দেশ নিউজকে বলেন, ‘টিভিতে বা পত্রিকায় আমরা জেলেদের প্রায়ই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার কথা শুনি। কোথায় ধরা পড়ছে সেসব ইলিশ? সাগরে কিংবা সাগর মোহনায়। সেসব ইলিশ তো ঢাকার বাজারেই বিক্রি হচ্ছে। কখনও ইলিশ ক্রয় করতে গিয়ে মাছ বিক্রেতাকে বলতে শোনা যায় না যে- সাগরের ইলিশ নেন। সব বিক্রেতাই পদ্মা, মেঘনার ইলিশের কথা বলে সাগরের ইলিশই দিচ্ছে। সেসব মাছ নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে, নদীর ইলিশের কথা বলে বিক্রি করে। এতে ইলিশ খেলেও আসল ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতারা। অথচ দাম দিচ্ছেন একই।
‘আমরা এই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। আমার বাড়ি যেহেতু ভোলার মেঘনা পাড়ে, তাই আমরা দিচ্ছি শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে মেঘনার ইলিশ। আপনি ইলিশ খাবেন অথচ ইলিশের ঝাঁঝালো গন্ধে আশপাশ মাতাবেন না, তা কী করে হয়? সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে সতেজ ইলিশ আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রয়েছে আমাদের এই প্রয়াস’, বলছিলেন উদ্যোক্তা রিহান সরদার।
নিজেদের পৈতৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও হঠাৎ উদ্যোক্তা হওয়া কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিহান সরদার বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যুবকদের উদ্যোক্তা হতে। সেই নিউজের লিংকে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছে। কয়েকজনের মন্তব্যের রিপ্লাই দিয়েছি। আসলে আমরা চাইলেই উদ্যোগ নিয়ে উদ্যোক্তা হতে পারি। তারজন্য চাই কাজ করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও একটি স্বচ্ছ মানসিকতা। আমাদের ব্যবসায়িক পরিবেশ আমাদেরকেই তৈরি করতে হবে। এটা মনে রাখা জরুরি যে সমাজ, পরিবার, পরিবেশ তেলের মাথায় তেল দেয়।
এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগেই ইয়াসিন আরাফাত ভাইয়ের সাথে কিছু একটা করা যায় কিনা এমন আলোচনা হচ্ছিল। তিনি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বললেন ইলিশ নিয়ে কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখতে। তারপর আমাদের একাধিক আলোচনা হয়। এরপর চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়ে আমরা ইলিশের অনলাইন ভিত্তিক বিকিকিনিতে নেমে যাই। একটি গ্রুপ খুলি সাধ্যের মধ্যে ইলিশের স্বাদ। শুরু করি ঢাকা ও ভোলায় গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী মেঘনার ইলিশ সরাসরি জেলেদের থেকে সংগ্রহ করে দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। এ উদ্যোগ নেওয়ার পর যেরকম উৎসাহ, সহযোগিতামূলক সাড়া পেয়েছি এবং পাচ্ছি তাতে আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’’
‘এমন উদ্যোগের কথা বলে অনলাইনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের প্রতারণা হয়’ এর জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এই গ্রুপে এখন পর্যন্ত যারা যুক্ত হয়েছেন তারা আমার/আমাদের পরিচিত। তাদের দিয়েই আমরা শুরু করেছি। তারা সবাই জানেন যে, ভোলায় আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। সুতরাং এখানে প্রতারণার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া ব্যবসার মূলধন হলো সততা, বিশ্বাস, অধিকতর সেবার মানসিকতা; এটা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। এজন্য খুব দ্রুত আমাদের আশার চেয়েও অধিক সাড়া পেয়েছি। যেহেতু ব্যবসা একদিনের না, সম্পর্কও একদিনের না, সেহেতু একবার স্বাদ নিয়ে দেখেন। আমি নিশ্চিত সম্পর্ক অটুট থাকবে। আমরা আমাদের সততা দিয়েই গ্রাহক আকৃষ্ট করতে বদ্ধপরিকর।
যেভাবে ঘরে বসেই কেনা যাবে মেঘনার ইলিশ
রিহান সরদার বলেন, আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে সপ্তাহে একদিন পৌঁছে দিবো আপনার দোরগোড়ায়। বিকেলে যেই ইলিশ জেলেদের থেকে সংগ্রহ করা হবে, সেই ইলিশ আপনার ঘরের দুয়ারে পৌঁছে দিবো কাক ডাকা ভোরে, ইনশাআল্লাহ। অর্ডার করতে এবং দাম সম্পর্কে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া 01726905476 কিংবা 01515286917 নাম্বারে কল করেও ইলিশ অর্ডার করতে পারবেন। এজন্য ইলিশের দামের ৫০% আমাদেরকে অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে এবং সকালে অবশ্যই মোবাইল খোলা রাখতে হবে।