‘আমরা দোয়া কালাম পড়ে রেডি হইছি, বাচ্চারে কোলে নিছি, আর কোনোদিন দেখা হবে না। দেখা হবে কেয়ামতে- এই বলে ছেলেকে যখন চুমু দেই। তখন সেও আমার গালে চুমু দেয়।’
এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের কথা বলছিলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ডেকের যাত্রী রিনা বেগম।
এই নরকণ্ড থেকে বেঁচে ফিরতে পারবেন, সেই আশা অনেকটা হারিয়েই ফেলেছিলেন বরগুনার এই যাত্রী। শেষ পর্যন্ত আরও অনেকের মত নদীতে লাফ দিয়েই বাঁচতে হয়েছে মধ্যবয়সী ওই নারী আর তার ছেলের।
মধ্যবয়সী ওই নারী বললেন, আগুন যখন এখানে আসছে, আমি ঘুমে ছিলাম, বিকট একটা শব্দ আসছে, আমার ছেলে ১৩ বছর বয়স, এ বছর এইটে পরীক্ষা দিছে। ওরে আমি উঠাইছি। ও তো লম্বা হয়ে গেছে, ওরে টাইন্না এইখান থেকে ওইখানে নিছি। মানুষ আর মানুষ। ছেলে তো সাঁতার জানে না, যখন সবাই লাফ দেয়, আমার তো লাফ দেওয়ার ই নাই, ছেলে বাঁচবে না, আমি বেঁচে কী করব?
‘আমরা দোয়া কালাম পড়ে রেডি হইছি, বাচ্চারে কোলে নিছি, আর কোনোদিন দেখা হবে না। কেয়ামতের দিন দেখা হইলে… বাবা, তোমারে ভালো রেজাল্টের জন্য কত মারছি, তুমি আমারে ক্ষমা কইরে দিও। আমার ছেলে আমারে ধইরে বসছে চুমু দিয়া, বলে ‘আম্মু, তোমারে ছাড়া বাঁচব না’।
‘আস্তে আস্তে স্রোতে ভাসতে ভাসতে লঞ্চ পারে যখন আসছে,… যখন খেলাম যে গাছ দেখা যায়, ছেলেরে বললাম যে বাবা, তুমি পানির নিচ দিয়া হাঁটবা। হাইট্টা দেখবা গাছ পাইলে গাছ ধইরা উরপে উইঠ্ঠা যাইতে পারবা। ও লাফ দিছে, আমি বোরকা ছিড়ড়া ঝাঁপ দিছি। আমি মনে হয় ৫ ফুট না কয়ফুট গেছি জানি না, হঠাৎ কইরা ভাইসা উঠছি, সাঁতার দিয়া ছেলেরে ধরছি।’
তিনি বলেন, ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় আমাদের বসবাস, বাবার বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আর শ্বশুর বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। তিন দিনের ছুটিতে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম।
এই দুই যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি অনেকেই।