একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আখ্যায়িত করে উদযাপন করলেও বিএনপি বলছে মধ্যরাতের ভোটডাকাতির কলঙ্কিত নির্বাচনের দ্বিতীয়বর্ষ আজ।
বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতেই সারাদেশের বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্র দখল করে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতভর ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখে। ভোটের দিন শুধু মাত্র আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়েছিল।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সে নির্বাচরের ফলাফল প্রত্যাখান করে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আগের রাতের ভোট দেয়ার খবর ফলাও করে প্রচার করে। সে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো। তারা ব্যাপক ভোট কারচুপির তদন্ত দাবি করে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে একতরফা নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মালায় সাজা দিয়ে বন্দি করে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবি মামলা দিয়ে নির্বাচন ময়দানকে ফাঁকা করে ভোট ডাকাতির নির্বাচন আয়োজন করে ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে আসে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতেও। টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের ফলাফল জাতির সামনে তুলে ধরে। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২১৩টি কেন্দ্রে ১০০% ভোট পড়েছে। আর অন্তত ১ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৫% থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ। ৫৮৬ কেন্দ্রে সব ভোট নৌকা মার্কায়। এসব কেন্দ্রে ধানের শীষ কিংবা অন্য প্রার্থী কোনো ভোটই পাননি। এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। যেটা হয় না। পৃথিবীতে কোথাও এত ভোট পড়ার নজির নেই।
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের এত ভোট পড়ার তথ্য থাকলেও অনেকে ভোট দিতে পারেননি এমন অভিযোগ করেছে বেশির ভাগ ভোটারেরা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি ৫০টি আসন পর্যবেক্ষণ করে ৪৭টিতে বুথ দখল করে জাল ভোট, এমনকি ভোটের আগে ব্যালটে সিল মারার মতো অনিয়মের প্রমাণ রয়েছে। মূলত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসনের লোকেরাই নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছে। পরের দিন ১০ শতাংশ লোকও ভোট দিতে পারেনি। অনেকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপার না থাকায় ভোট না দিয়েই ফিরে গেছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থারা উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোথাও ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়লেই সেখানে কমিশনের আলাদা নজর দেয়া উচিত। ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোটের হার এত বেশি কেন সেটা নির্বাচন কমিশনকেই তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে ঘোষিত ফলাফল বাতিল ও অবিলম্বে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সে নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিষয়টি আগে থেকেই ছিলো সুপরিকল্পিত। ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে ভোটের আগের রাতে। এ নির্বাচনে জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ নির্বাচনে ভীতি ছাড়া কিছু ছিলো না। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে নজিরবিহীনভাবে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে ত্রাস-ভীত সৃষ্টি করে এই নির্বাচনটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন যেটা নজিরবিহীন সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং ভোট ডাকাতি বলা যেতে পারে, এই ভোট ডাকাতির ফলে আমরা এই নির্বাচনের ফলাফলকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মনে করি, এই কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় অনুষ্ঠিত করতে হবে এবং এটা অনতিবিলম্বে করতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।