মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। যিনি যৌবনের শুরুতেই গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চিরদিনের জন্য গৃহত্যাগ করেন। যিনি সূফী এবং তাসাউফের সাধনা শেষে দেওবন্দ থেকে রবুবিয়াতের রাজনৈতিক দর্শনের শিক্ষা নিয়ে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর আন্দোলনের ভাষা তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি কারাবরণ পর্যন্ত করেছিলেন। ৬৯ এর আন্দোলনেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বিলম্বে হলেও তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা একেবারে ফেলে দেবার মত নয়।
দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৪ সালে ভাসানীর ভুখা মিছিল বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। কৃষক আন্দোলনের নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি সবসময় রাজনীতি করেছেন অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানে তিনি উড়িয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পতাকা। গত ১৭ ই নভেম্বর ছিল মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা এই মহান নেতাকে সেইভাবে মনে রাখতে পারিনি। আসুন দেখা যাক কেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ এই মহান নেতাকে মনে রাখতে পারিনি, কেন ধর্মান্ধরা অস্পষ্ট হলেও অসাম্প্রদায়িক এই নেতাকে স্মরণ করছে। শোনা যাক ইতিহাসের কথা।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার সয়াধানগড়া গ্রামের এক বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খান। তার ডাকনাম চেগা মিয়া। পাঁচ বছর বয়সে মক্তবে ওস্তাদের কাছে পড়ালেখায় হাতেখড়ি।
বাবা বেঁচে থাকতেই ময়মনসিংহের কল্পাগ্রামে ভাসানীকে পাঠানো হয়েছিল পীর সৈয়দ নাসিরউদ্দিন বোগদাদীর কাছে। পরবর্তী সময়ে তিনি পীর বোগদাদীর সংস্পর্শে জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯০৬ সালে বোগদাদীর মুসাফিরখানায় হক্কুল্লাহ ও হক্কুল এবাদ মিশনের কাজ জোরেশোরে চলছিল।মওলানা ভাসানী ছিলেন তার একজন যোগ্য সাগরেদ।পীর বোগদাদী বড় হুজুর এবং ভাসানী ছোট হুজুর হিসেবে পরিচিত হন। তখন থেকে তিনি তালের আঁশের টুপি ব্যবহার করা শুরু করেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি পিতৃহীন হন এবং ১২ বছর বয়সে মা মারা যান। পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে তার দুই ভাই ও এক বোনও মারা যান। নিজ প্রচেষ্টায় উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, অসমিয়া, আরবি ও ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন।
মক্তব হতে শিক্ষাগ্রহণ করে কিছুদিন মক্তবেই শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম যান। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৬-এ আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় ‘ভাসানীর মওলানা’।এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়। ক্ষণজন্মা এ ব্যক্তি জীবনে অনেকবার শাসকগোষ্ঠীর রোষাণলে পড়ে কারান্তরীণ হয়েছিলেন। এ জন্য তাকে ‘মজলুম জননেতা’ বলা হয়। চৈনিক কম্যুনিজমের প্রতি তার বিশেষ বিশ্বাসের জন্য তাকে ‘রেড মওলানা’ও বলা হতো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে তিনি গুরুর মতো, পিতার মতো, উস্তাদের মতো পরম শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। এই মওলানাই বঙ্গবন্ধুকে নিজের সাথে রেখে রাজনীতি শিখিয়েছেন।শিখিয়েছেন প্রেম, দ্রোহ আর সংগ্রাম। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আর শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি চেতনার এক অভিন্ন নাম। এই দুজন নেতা আমাদের চেতনার দুটি স্রোতধারার মিলিত একটি মোহনা।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত করেন।
এরপর ভাসানী ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬পর্যন্ত ৮ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। টাঙ্গাইলের মোহাম্মদ শামছুল হক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন সহ সাধারণ সম্পাদক পরে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
একদিনের ঘটনা, মওলানা ভাসানী তখন দলের সভাপতি আর বঙ্গবন্ধু দলের সাধারণ সম্পাদক। একদিন মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুকে আট আনা পয়সা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে একটি কাজে পাঠান। বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জ থেকে সারা দিনে সেই কাজ সম্পন্ন করে এসে বিকেলে মওলানা ভাসানীর হাতে আট আনা পয়সা ফেরত দেন।
ভাসানী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, মুজিব তুমি নারায়ণগঞ্জ কিভাবে গেলে? উত্তরে মুজিব বলেন: সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলাম, টাকাটা বেঁচে গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মওলানা পুত্রসম স্নেহ করতেন। তিনি নিজেই বলেছেন: আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক সেক্রেটারি এসেছে। কিন্তু মুজিবরের মতো যোগ্য সেক্রেটারি অন্য কাউকে পাইনি।
মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুও মওলানাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায়ই কোনো নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই শুধুমাত্র গাড়ির ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মওলানার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।
বঙ্গবন্ধু যতোদিন জীবিত ছিলেন ভাসানীর নামে মাসিক ভ্রাতা পাঠাতেন। চিকিৎসা ও ঔষধপত্রের জন্য আলাদা খরচ দিতেন। নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন। ঈদ উৎসবে ভাসানী পরিবারের সদস্যদের জন্য জামা কাপড় জুতা ও খাবার পাঠাতেন। এই ছিল মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর প্রেমময় হৃদ্যতা।
১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় কৃষক সম্মেলন করেছেন। ১৯৩৭ সালে মাওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং একই সাথে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। সেসময় তিনি আসামে লাইন প্রথা চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ।
সেসময় তিনি আসাম চাষী মজুর সমিতি গঠন করেন এবং ধুবরী, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ।
১৯৪৫ সাল থেকে ৪৬ সাল পর্যন্ত আসামজুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বাঙ্গাল খেদাও আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। সেসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা,, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতার হন। ১৯৪৮সালে মুক্তি পান। তারপর তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে ফিরে আসেন।
১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন। ১৯৪৮সালে মার্চের ১৭ তারিখে ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলি বাংলায় পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপীড়ি করেন ।
১৯ মার্চ বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে বলেন যেসব কর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে তার শতকরা ৭৫% প্রদেশকে দিতে হবে ।
এখানে উল্লেখ যে, ব্রিটিশ আমলে বঙ্গপ্রদেশ জুটেক্স ও সেলসট্যাক্স রাজস্ব হিসেবে আদায় করত এবং এই করের ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ সরকারের হাত থেকে এই কর ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই আদায় করতে থাকে যার ফলে পূর্ববঙ্গ সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে ।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা । মুসলিম লীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলিম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর ওপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচনে ত্রুটি ছিল এই অজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং মওলানা ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন ।
পরিশেষে মওলানা ভাসানী ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতদসত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গভর্নর এক নির্বাহী আদেশ বলে মওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩ এবং ২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করলেন ।
২৩ জুন ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কর্মী সে সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতি ক্রমে এই দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ।
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। ২৪ জুন আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ১১ অক্টোবর আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ জনসভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান ।
১৯৫০ সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের খাপরা ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরী হলে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া এক জনসভা আর সে সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগিতার কারণে গ্রেফতার হয়ে মওলানা ভাসানী ১৬ মাস কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অবশ্য সে জন্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
পূর্ব বাঙলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেলেন। সেই নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টে বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭টির মধ্য ২২৮টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন ।
ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে ১৯৫৪ মাওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন। ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারি করে এবং মওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন ।
১১ মাস লন্ডন, বার্লিন, দিল্লী এবং কলকাতায় অবস্থান করার পর তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর তিনি ১৯৫৫ সালের ২৫ এপ্রিল দেশে ফিরে আসেন। পূর্ব বাংলায় খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে ১৯৫৬ সালের ৭ মে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেলেন।
সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪শে মে অনশন ভঙ্গ করেন। একই বছরে ১২ই সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার গঠিত হলে মাওলানা ভাসানী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে যে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পেশ করা হয় তাতে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং তখন মাওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় তার বিরোধিতা করে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখেছিলেন ৷
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি বলেন: পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওআলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে। এছাড়াও কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী পাক ও মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন ।
প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলেন এবং ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। একই বছর ২৫শে জুলাই তার নেতৃত্বে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ গঠিত হয় । ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভাসানী প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর পর থেকে সবসময় বাম ধারার রাজনীতির সাথেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
১৯৫৭ সালের ৭ই অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি হলে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এবং ১২ অক্টোবর মওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় ৪ বছর ১০ মাস কারারুদ্ধ থাকলেন মওলানা ভাসানী।
বন্দী অবস্থায় ১৯৬২ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের সাহায্য এবং পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করলেন তারা। ৩ নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হলেন।
১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাত করেন। ঠিক এই একই বছর ২৪শে সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবসের উৎসবে যোগদানের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন মওলানা ভাসানী। ১৯৬৪ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল কপ গঠনে ভূমিকা পালন করেন ।
১৯৬৫ সালের ১৭ই জুলাই আইয়ুব খানের পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচীর বিরোধিতা করেন। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন ।
১৯৬৭সালে নভেম্বর মাসে ন্যাপ দ্বি খণ্ডিত হলে চীনপন্থি ন্যাপের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে মওলানা ভাসানী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি দাবি করেন। এবং ১৯৬৯সালের ৮ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে সেখানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাত করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে একমত হন ।
২৬ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক প্রত্যাখান করে শ্রমজীবীদের ঘেরাও কর্মসূচী পালনে উৎসাহ প্রদান করেন। আইয়ুব খান সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ভোটের আগে ভাত চাই, ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করা হয়।
কাগমারী সম্মেলনও ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর ৮ ফেব্রুয়ারি ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে তা আরম্ভ হয়েছিল ।
১৯৭০ সালের ৬ ও ৮ আগস্ট বন্যা সমস্যা সমাধানের দাবিতে অনশন পালন করা হয়। তারপর সাধারণ নির্বচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার জন্য ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেন। এবং ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি উত্থাপন করলেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন এবং ১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য তার প্রতি আহবান জানালেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেন ।
২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করছিলেন। পাকিস্তান বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে টাঙ্গাইল ছেড়ে তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জে চলে গেলেন। পাকিস্তান বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দিলেন। তারপর মওলানা ভাসানী মোজাফ্ফর ন্যাপ নেতা সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে ভারত সীমানা অভিমুখে রওনা হয় ।
সর্বশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে মওলানা ভাসানী এবং সাইফুল ইসলাম ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ অতিক্রম করে আসামের ফুলবাড়ী নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। তারপরে তাদের হলদীগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হলো। এরপর মওলানা ভাসানী এবং সাইফুল ইসলামকে প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবং পার্ক স্ট্রিটের কোহিনুর প্যালেসের ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট তাদের অবস্থানের জন্য দেয়া হয়েছিল ।১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল মওলানা ভাসানী একটি বিবৃতি প্রদান করেন যা ভারতীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল ।
এছাড়াও মওলানা ভাসানী চীনের নেতা মাও সে তুং, চৌ এন লাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে তাদের অবহিত করেন যে, পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপকহারে গণহত্যা চালাচ্ছে। সেজন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করেন । এমনকি মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বববান জানান। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলেনন ।
৩১ মে মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার পাক বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই। ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ কয়েক লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে ।
এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দুইবার কোহিনুর প্যালেসে এসে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলেন এবং তার পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় চরিত্র দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আট সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় যার সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। ঐ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন ১।তাজউদ্দীন আহমদ ২।মণি সিংহ ৩।অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ৪। মনোরঞ্জন ধর। মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঐ উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছিল যে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মওলানা ভাসানী কলকাতা ছাড়াও দেরাদুন, দিল্লী এবং অন্যান্য স্থানে অবস্থান করেছেন। পরবর্তীকালে অনেকে অভিযোগ করেন যে, ভারতে থাকাকালীন তিনি নজরবন্দি অবস্থায় ছিলেন। ভারতে অবস্থানকালে মওলানা ভাসানী দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে দিল্লী অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছিল ।
মওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন ।১৯৭২ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক কথা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারত মৈত্রীচুক্তির বিরোধিতা করলেও মুজিব সরকারের জাতীয়করণ নীতি এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন ।
১৯৭৩ সালে খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ১৫ এবং ২২ মে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ৮ এপ্রিল হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি গঠন করেন। একই বছর জুন মাসে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে গৃহবন্দি হন। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দিলেন। একই বছর ২ অক্টোবর খোদাই খিদমতগার নামে নতুন আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন।
রাজনীতির পাশাপাশি মওলানা ভাসানী সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতও ছিলেন ।জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহিপুর হাজী মহসীন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয়। আসামে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও মওলানা ভাসানী কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কাগমারিতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ ও পঞ্চবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন ।
তিনি ১৯৭৬ সালে ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন ।
তথ্যসূত্র:
১) স. গুপ্ত, ‘বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস ১৯৬৯-১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত’, in বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১ . আগামী প্রকাশনী, ch. ৫.
২) ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বিতীয় খণ্ড’, p. ৫৮৪.
৩) Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-3