আব্দুর রহমান নোমান: ভোলার বোরাহানউদ্দিন উপজেলায় এক চালচোরকে ২৫ হাজার টাকায় মোবাইল কোর্টে সাজার নামে মুক্তি দেওয়ার অভিযোগে বোরহানউদ্দিনের ইউএনও এবং ওসি’র বিরুদ্ধে সুয়ামোটো মামলা করেছেন ভোলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফরিদ আলম বোরাহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির উদ্দিন গাজী ও ওসি এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। যার সুয়ামোটো মামলা নং- ০১/২০২০ (বোরহানউদ্দিন)।
কোর্ট পরিদর্শক রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ১৫ এপ্রিল ‘বোরহানউদ্দিনে চালচোর ২৫ হাজারে মুক্ত’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ ভোলার আদালতের দৃষ্টিগোচরে আসায় আদালত সুয়ামোটো এই মামলার আদেশ দেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে জানা যায়, বর্তমান করোনা দুর্যোগের পরিস্থিতিতে ত্রাণের চাল আত্মসাৎ ও কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশে মজুদের অপরাধের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ বশির গাজী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন এবং আসামী আব্দুল মান্নানের নিকট হইতে ২৫০০০ টাকা এবং সেলামতকে ১০০০০ টাকা জরিমানা করে মুক্তি দেন। বিদ্যমান ঘটনার সংবাদে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইহা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারার (১) ও (২) ধারার অপরাধ, যাহা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিচার্য এবং যাহার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।
একই সাথে এই ঘটনা যদি Penal Code এর ১৮৬০ এর ৩৭৯ ধারা ( যাহার সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর কারাদণ্ড) ৪০৩ ধারা যাহার (সর্বোচ্চ সাজা ২ বছর কারাদণ্ড) ৪১১ ধারা যাহার (সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর কারাদণ্ড) ৪১৪ ধারা (যাহার সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর কারাদণ্ড) সহ আরও অন্যান্য ধারায় অপরাধ মর্মে গণ্য করা যায়। একই সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি সরকারি কর্মচারী হলে এই ত্রাণের চাল দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে এবং তৎসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় মর্মে প্রতীয়মান হয়। দুর্নীতি দমন বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্ত এবং স্পেশাল ট্রাইবুনাল কর্তৃক বিচার্যের অপরাধ।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, ইউএনও ভারপ্রাপ্ত বশির গাজী এখতিয়ার বিহীন অর্থদণ্ড আরোপের মাধ্যমে অপরাধীকে দায়মুক্তি প্রদান করেছেন এবং রাষ্ট্রীয় আইন, ফৌজদারি বিচার কাঠামো ও বর্তমান সরকারের নীতির সুস্পষ্ট লংঘন করা হয়েছে মর্মে সংবাদ দৃষ্টে প্রতীয়মান হয়। অপরাধের প্রকৃত বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাকে নামমাত্র শাস্তি তথা জরিমানা করে দায়মুক্তি দেয়ায় ইউএনও’র বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুয়ামোটো মামলাটি রুজু করে আগামি ২৮ এপ্রিল মোবাইল কোর্ট পরিচালনার যাবতীয় ডকুমেন্ট ও আইনানুগ ব্যাখ্যাসহ সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিঃ মোঃ ফরিদ আলম এর কোর্টে উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিনের ইউএনও’র বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ০১৩০৫****৫৬ নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।