ভোলায় চাল বিতরন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-১৫

ভোলার মনপুরা উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (ভিজিএফ) এর চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াতে ও ইসলামীর আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন।

আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  রোববার (২৩ মার্চ ২০২৫) সকালে উপজেলার ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।  আহতরা হলেন, মো.নোমান, মো.মহিউদ্দিন, মো. মহিন, মো. রাশেদ, মো. আব্বাস, মো. কাউসার,মো. মামুল, মো. এরশাদ, মো. আব্বাস, মো. সহিজল, ও মো. মিল্লাদসহ আরো অনেকে। তারা সবাই ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং জামায়াত ও বিএনপির কর্মী সমর্থক।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শনিবার থেকে ওই ইউনিয়নে জেলের খাদ্য সহায়তার ভিজিএফ চাল বিতরন শুরু হয়। এরপর ওই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক বিএনপিকে বেশি পরিমান চালের কার্ড বিতরন করেন। এই বিষয়ে জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ওই প্রশাসকের কাছে কার্ড নিয়ে বৈষম্যের বিষয়টি স্পষ্ট করে তাদের দলের নেতাকর্মীদের জন্য কিছু কার্ড বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য দাবী জানান। পরে দাবী নিয়ে জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আজ সকালে ওই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকের সাথে কথা বলার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পরিষদে যান। একটি মিছিল নিয়ে পরিষদের যাওয়ার পথে বিএনপির লোকজন জামায়াতে ও ইসলাম আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়, যা এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রুপ নেয়।

জামায়াতে ইসলামীর উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আবু সুফিয়ান বলেন, ভিজিএফ চাল বিতরনের কার্ড অধিক পরিমানে বিএনপিকে দিয়ে দিয়েছে, যা বৈষম্য। আমরা এই বিষয়ে ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা প্রশাসকের সাথে কথা বলতে আসলে বিএনপির লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ১০ থেকে ১২ জন লোক আহত হয়। ইসলামী আন্দোলন মনপুরা উপজেলার সভাপতি মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, আমাদের ইউনিয়নের প্রশাসক সরকারি বিভিন্ন যে ত্রান আসে, সেই ত্রান নিয়ে সে অধিক বৈষম্য করে। বিএনপিকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে ৯০ ভাগ তাদের দিয়ে দেয়। এতে অসহায় মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই প্রতিবাদে আমরা একটি মিছিল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকের কাছে কথা বলার জন্য যাচ্ছিলাম। পথেই বিএনপির লোকজন আমাদের উপর হামলা করে আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করে। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মনপুরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মোশারফ দালাল বলেন, জামায়াতের লোকজন উশৃংখল একটি মিছিল করে, মিছিলে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও স্লোগান দিয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকা প্রশাসককে আক্রমণ করে। সেখানে পাবলিকের সাথে জামায়াতে লোকজনের সাথে বাড়াবাড়ি হয়। পরে খবর পেয়ে আমরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল হিসেবে তাদেরকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ টি করে মোট ৮০০ টি কার্ড বিতরন করা হয়। এটাকে নিয়ে জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাদের কিছু কার্ড বাড়িয়ে দেওয়ার দাবী জানান। পরে আজ সকালে তারা এই দাবী তুলে একটি মিছিল নিয়ে আমার কাছে আসেন। এবং তাদের কিছু কার্ড বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরপরেও এমন একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমি সকলেকেই থামানোর চেষ্টা করেছি কেউ আমার কথা শোনেনি। তবে এবিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানের আলোচনা চলছে।

এই বিষয়ে মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির কে জানান, সকালে চাল বিতরনের সময় দলীয় সমর্থিকরা কার্ড না পাওয়া নিয়ে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকরা এক হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এতে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হয়। তবে, এ ঘটনায় কোন পক্ষ কোন অভিযোগ করেননি। বিষয়টি নিয়ে বিকেলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি। ছবি- চাল বিতরন কালে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্য সংঘর্ষ।