ভালাবাসা দিবস নিয়ে যত কথা

জিয়াউদ্দীন চৌধুরী (জেড সেলিম)

গোটা বাঙালি জাতি একটা ভয়ঙ্কর মহামারি ব্যাধিতে ভুগছে। রোগটা একটা মানসিক ব্যাধি, নাম যার ‘হীনম্মন্যতা’। এই রোগে বেশি আক্রান্ত এদেশের আঁতেল সমাজ অর্থাৎ তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ তথা মসিজীবীরা। বাংলাদেশে বিজাতীয় অপসংস্কৃতি কথিত ভালবাসা দিবসের আমদানিকারক হচ্ছে শফিক রেহমান ম্যাগাজিন যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে এর প্রচার চালান। বাঙালি সমাজে প্রচলিত এরূপ বহু অপসংস্কৃতির সাথে একটি সাম্প্রতিক সংযোজন হচেছ “ভ্যালেন্টাইন’স ডে”, যা “ভালবাসা দিবস” নামে বাঙালী সমাজের যুবক-যুবতীদের মাঝে ঢুকে পড়েছে এবং ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করছে,বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায় ! লুফে নেয় বাংলার তরুণ-তরুণীরা। আমরা কেন পশ্চীমাদের অপসংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হবো?আমাদের সমাজের কৃষ্টি ও রীতিনীতি আজো পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় অনেক উন্নত। আমাদের সমাজে রয়েছে পারিবারিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক। আমরা তো তা হারাতে পারি না। ১৮ বছর বয়সে পশ্চীমাদের ছেলেমেয়েরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ওদের মা দিবস বা বাবা দিবস প্রয়োজন, ওরা অপরিষ্কার থাকে তাদের ওযু গোসল নেই; টিস্যুই পরিচ্ছন্নতার একমাত্র ভরসা আর দুর্গন্ধ এড়াতে কৃত্রিম পারফিউম ব্যবহার করা। ওদের বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের প্রয়োজন থাকতে পারে, আমাদের প্রয়োজন নেই। ওদের কাছ থেকে আমাদের শেখার কিছু নেই। আমাদের প্রয়োজন আমাদের ইতিহাস অধ্যয়ন করা। আমাদের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। ইতিহাসের জ্ঞানই পারে হীনম্মন্যতা নামক মানসিক ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন মসলিন, রেশমী ও সুতি কাপড় পরতো, তখনও ওরা গাছের ছাল বাকল দিয়ে তৈরি পোশাক পরতো। সুতরাং বাঙালীদের হীনম্মন্যতার কোনো কারণ নেই ।

প্রথমেই জেনে নিব ভালোবাসা কি? :ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন।একে কিভাবে মোহ ও যৌনকামনা থেকে পৃথক করা যায় ? দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানীগণ ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন অথবা ন্যূনতম মোহ ও যৌন কামনা থেকে ভালোবাসাকে পৃথক করেছেন । যদি তুমি ভালোবাসার সংজ্ঞা খুঁজতে চাও, তবে নিচের অনুচ্ছেদটি তোমাকে সাহায্য করবে ।

১ভালোবাসার আভিধানিক অর্থ । বিভিন্ন ভাবে অভিধানে ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ।ভালোবাসা হলো :ক)একটি জোরালো আবেগ, অনুরাগ বা সুখানুভব। যেমন, কাজের প্রতি ভালোবাসা। খ)কোন বস্তুর প্রতি উষ্ণ আবেগ বা মনোনিবেশ করা বা পছন্দ করা। যেমন, আমি বাংলাদেশী খাবার ভালোবাসি।গ)প্রিয় ব্যক্তি বা প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ আদর কোমলতা প্রকাশে।ঘ)যৌন আকাঙ্খা বা আবেগের গভীর অনুভূতি। যেমন, সে তার স্বামীকে ভালোবাসে।ঙ)যৌন ভালোবাসা। দুজন ব্যক্তির মধ্যে যৌন মিলন, সহবাস।

২) গ্রীকরা ভালোবাসাকে চার ধাপে  সংজ্ঞায়িত করেছে:ক)Agape হলো শর্তহীন ভালোবাসা। যেমন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের ত্রুটিসহ আমাদের ভালোবাসেন।খ)Phi Leo হলো সেই ভালোবাসা যা আমাদের পছন্দ বা স্বাস্থকর বা অস্বাস্থকর প্রয়োজন বা আশক্তি দ্বারা আকৃষ্ট।গ)Storge হলো পারিবারিক ভালোবাসা। অনেক সময় বন্ধুত্বটাও এই ভালোবাসার মধ্যে পড়ে ।ঘ)Eros হলো শারিরীক যৌন আকাঙ্খা।৩. মনোবিজ্ঞানীরা ভালোবাসাকে তিনটি পর্যায়ে ফেলেছেন:ক)তীব্র অনুভূতি: যা থেকে শারিরীক আকাঙ্খা তৈরী হয়।খ)অন্তরঙ্গতা: যা থেকে একে অপরের কাছে আসা।গ)অঙ্গীকার: যেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আমরা ভালোবাসি।৪. বলা হয় যে, ঈশ্বরের সবচেয়ে মহান এবং জটিল সৃষ্টি হচ্ছে ভালোবাসা; এমনকি ঈশ্বরই ভালোবাসা।৫. ভালোবাসা শুধুই একটি অনুভূতি নয়, এটা এক সক্ষমতা ।৬. নিজের মত করেও ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এজন্য ভালোবসা সম্পর্কে তোমার আবেগ এবং ভাবনা প্রথমে চিহ্নিত কর এবং লিখে রাখ । কারো প্রতি ভালোবাসার মুহুর্তটিতে সর্তক  থাকো।

হরমোনের প্রভাব :ভালোবাসা আর কিছু নয়, অক্সিটোসিন নামে একটি হরমোনের কারসাজি মাত্র। এই অক্সিটোসিন মানুষকে একে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। তাতেই মানুষ মানুষকে ভালোবাসে, সম্মান করে, করুণা দেখায়, সহানুভূতিতে অভিষিক্ত করে। এমনিতে পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে জটিল সম্পর্ক মানুষেরই। মানুষের সঙ্গে এত বিচিত্র সম্পর্কে সম্পৃক্ত নয় অন্য কোনো প্রাণী। রাগ-ঘৃণা-ঈর্ষা-হিংসা-ভয় নামক অনেক নেতিবাচক অনুভূতির পরও শেষ পর্যন্ত মানুষ একে অন্যের সঙ্গে প্রীতির সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। আর মানুষকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তার শরীরের ভেতর বিরাজমান যে বস্তুটি সেটি হলো অক্সিটোসিন হরমোন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন এক তথ্য আবিষ্কারের ঘোষণা দিলেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমেই ফুটে ওঠে মা-শিশুর অনন্য মায়া-মমতা আর বড় হলে নারী-পুরুষের চিরায়ত আকর্ষণ। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। গবেষণাটি মোট ৪৪ জন অংশগ্রহণকারীকে পর্যবেক্ষণ করে অনুষ্ঠিত হয়। তাদের প্রথমে অক্সিটোসিন হরমোন দেওয়া হয়। নিজেদের মুখের ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। অবশ্য এর আগে তাদের নিজের মুখকে এভাবে পরিবর্তিত করা হয় যাতে নিজেদের মুখের সঙ্গে মানুষের যে পরিচিতি, তা যেন অস্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, নিজের মুখ ও অন্যের মুখ দুটোই অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও মানুষ অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যেন নিজের ছবিটির দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায়।গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে সাইকোনিউরোন্ডক্রিনোলজি নামে একটি জার্নালে।গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সিটোসিন হরমোনের প্রভাবে মানুষের মধ্যে আপন-পর বোধ জাগে। এটা এমন এক হরমোন, যা মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে প্রণোদিত করে এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা, যোগাযোগ তথা ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে ত্যাগ-তিতিক্ষায়ও উদ্বুদ্ধ করে। তাদের মতে, অক্সিটোসিন বা লাভ হরমোন মানুষের মনে অন্য মানুষের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটায়। নিউরোসাইকোঅ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের গবেষকদের একজন ড. ভ্যালেন্টিনা কলোন্নেল্লো বলেন, ‘সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচন, মাতৃত্ব বা পিতৃত্ববোধ প্রকাশের মূলে কাজ করে এই হরমোন। এটা এমন এক জিনিস, যা মানুষের মনে আপন-পর বোধ এবং সে অনুযায়ী সম্পর্কের বিন্যাস সাধন করে থাকে।ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে (সংহ্মেপে ভ্যালেন্টাইন’স ডে নাম পরিচিত) একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রেম এবং অনুরাগের মধ্যে উৎযাপিত করা হয়।

ভালবাসার সম্পর্ক ভাল রাখতে যা প্রয়োজন : এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন অনেক প্রেমিক প্রেমিকা ভালবাসা অনেক সাধনার ব্যাপার, তাড়া হুড়ো কওে কখনো ভালবাসা হয় না। ভালবাসার সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন শুধু ভালবাসা ভালোবাসার বিনিময়ে শুধু ভালবাসাই মিলে অন্য কিছু নয়। আপনার সঙ্গীকে সঙ্গীকে সুখী করতে, আপনার প্রেমকে দির্ঘদিন বাচিয়ে রাখতে আর মজবুত করতে কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। চলুন দেখে নেই সেই নিয়মগুলো কি…

   ভ্যালেন্টাইনের আগেই তাকে বলে রাখুন আপনি ভ্যালেন্টাইন ডে সেলিব্রেট করা পছন্দ করেনা। হঠাৎ করে এই দিনটিতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে হাজির হন তার কাছে।

   ১৩ই ফেব্র“য়ারী রাত ১২টার আগে সুন্দর একটি এস এম এস তৈরী করে রাখুন ১২টা বাজলেই পাঠিয়ে দিন আপনার কাঙ্খিত নম্বরটিতে।

  সম্ভব হলে ১৩ তারিখ রাতেই পাঠিয়ে দিন সুন্দর কোন গিফট।

   আমরা প্রায় সবাই একই ধরনের একটা ভুল করে থাকি। তাহলো, আমরা ধওে নেই বেউ যখন আমাকে ভালবাসবে তখন আমার স্বর জেনেই ভালবাসবে এই ধরানা মনের ভিতর পুসে রাখা একেবারেই অনুচিত।

   স্বাধীনতা ভোগ কারার অধিকার সবারই রয়েছে আমরা সবাই চাই স্বাধীনভাবে চলতে, তাই প্রিয় মানুষটিকেও স্বাধীনতা দেয়া উচিত। সেই সাথে এর ভালমন্দ পছন্দ অপছন্দ, চাওয়া পাওয়া বন কিছুর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

   কথা দিয়ে কথা রাখার চেষ্টা করুন। আপনার সঙ্গিটি আপনার জীবনেরই আশা তার মাঝে সমস্ত কিছু শেয়ার করার চেষ্টা করুন। তার কাছে কোন কিছু গোপন করবেন না বা তাকে কখনো মিথ্যে বলবেন না।

   সবসময় চেষ্টা করুন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। প্রিয় মানুষটিকে বেশী সময়ের জন্য অপেক্ষায় রাখবেন না। কোথাও দেখা করার কথা থাকলে সময় মতো উপস্থিত হন। দেরী হলে মোবাইলে বলে দিন যে একটু দেরী হতে পারে।

   দুটি মানুষ দুটি মতাদর্শনের , দুটি ধারার হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার মতের সঙ্গে মিলছেনা বলে আপনি পাত্তাই দিবেন না, এই ভুলটি করবেন না, তার মতামতকে গুরুত্ব দিন, গ্রহন করুন । তাকে বোঝান তার মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে আপনার কাছে। দেখবেন যে ও আপনার মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে।

   একজন মনের ভেতরে ভালো মন্দ দুদিকই থাকে। যখন কাউকে জীবনসঙ্গী করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন তার ভালো দিকের সাথে মন্দ দিকটিও মেনে নেওয়া উচিত। একজন সত্যিকারের মানুষের উচিত হবে প্রিয় মানুষটির মন্দ দিকগুলো তাকে বুঝিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা।

   দুজন মিলে যখন কোন বিষয়ে কথা বলবেন তখন শুধু আপনিই বলে যাবেন এটা করবেন না, তার কথা শুনুন মনযোগ দিয়ে, তার কথাকে প্রাধান্য দিন। দুজনের কথা থেকে ভালো একটি সমাধান বের হয়ে আসতে পারে।

   সন্দেহ থেকে দুরে থাকুন। যে সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ প্রবেশ করবে সে সম্পর্ক না রাখাই ভালো বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্ক টিকে থাকতে পারেনা যে বিষয় নিয়ে সন্দেহ করছেন সে বিষয় নিয়ে সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। তৃতীয় কোন পক্ষকে এই বিষয়ে টানবেন না।

   ভুল সঙ্গী পছন্দ করছেন? অথবা আসক্তির মতো খারাপ দিক? একই ভুল বার বার করছেন? যদি আপনার সম্পর্ক ভালো না হয়, তাহলে কিভাবে ভালবাসি বলতে হবে তা জেনেও লাভ হবেনা। তাই সঙ্গীর ভুল গুলোকে ধরিয়ে দিন।

   ভালোবাসার আগে ভালোভাবে জেনে নিন। সম্ভব হলে তার পরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলে নিন। মনে রাখেবেন। মনে রাখবেন ভালোসাবা কখনো একতরফা ভাবে হয় না। দুজন দুজনকে ভালোভাবে জানার পরই দীর্ঘসূত্রতায় রাজি হন। ভালোসাবা কে কখনো খেলা হিসেবে নিবেন না।

   তার মতো যেন যাকে আপনি পছন্দ করেন । শ্রদ্ধা করুন অর্থপূর্ন কাজ করুন, সামাজিক কাজে যুক্ত করুন। আপনার আগ্রহকে যুক্ত করুন। আবিষ্কার করুন। এবং আপনার সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন। ভালোবাসা বাড়বে। দুজন যদি দুজনের কাছে পরিষ্কার থাকেন তাহলে কোন সমস্যাই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না।

   খেয়াল করুন কি আপনাকে যখন মুভি, কৌতুক অথবা কনিকলাম যাই আপনার পছন্দ আলাদা করুন। ভালবাসি বলার আগে মনে রাখুন আপনার সঙ্গীর সেন্দা অথাবা হিউমার আপনার থেকে আলাদা হতেই পারে। তাই হলে তাকে আপনি অবহেলা করবেন সেটা ঠিক হবেনা। বরং এটিকে শ্রদ্ধা করুন। হতে পারে তা সেন্দ অন হিউমার আপনাকে অবাক করবে ।

   দিনে একবার হলেও চেষ্টা করুন ও ষড়াবফ ুড়ঁ’ বলতে । এই কথাটি বলার মধ্যে সত্যি না আনন্দ পাওয়া যায়। তার চেয়ে বেশী আনন্দ পাওয়া যায় শুনতে। আপনি প্রেমিক অথবা প্রেমিকা যাই হোন না কেন ইংরেজিতে ও ষড়াবফ ুড়ঁ’ না বলে বাংলা বলুন ‘‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’’।

   প্রত্যেকটি মানুষই চায় তার প্রিয় মানুষটি তাকে ভাবুক, তার সঙ্গেই শুধু কথা বলুক ভীড়ের মধ্যে বা কোন অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে কথা বলুক। থাকুক। চেষ্টা করুন আপনার সঙ্গীর চাহিদা গুলো পূরন করুন তবে মনে রাখিবেন খুব বেশী বেধে রাখার চেষ্টা করবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।

   বিয়ের আগে এক ধরনের জীবন থাকে। বিয়ের পর সেটা পরিবর্তিত রুপ দেখা যায়। এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জীবনে পরিবর্তন আসবে এটা মেনে নিতে হবে। এবং মেনে নেওয়াটাই হবে স্বাভাবিক ব্যাপার। বিয়ের পর হয়তো আপনি কিছুটা হলেও আলাদা হয়ে যাবেন। নানা ধরনের পরিবর্তন আসবে তখন। দৈনন্দিন  রুটিন অথবা অর্থনৈতিক সংগ্রাম আসতে পারে এবং আপনি তখনই সফল হবেন যখন আপনি এগুলো ঠিক মতো কওে পরিচালনা করতে পরবেন। তাই বলে ভালবাসি বলতে ভুলবেন না। জীবন যত কঠিনই হোক না কেন তাকে বহন করে নিতে হবে। তাহলে দেখবে সেও আপনার প্রতি আপানারই মতো সম্মান ভালবাসবে।

   ভালবাসাকে ধরে রাখার জন্য ব্যাগ সবচেয়ে জরুরী বন্ধন কে দুর রাখতে সহৃদয় এবং সহমর্মী হওয়া উচিত। সাথে মনের মিল রাখাও খুব জরুরী।

   বর্তমানে ভ্যালেন্টইনডে পালনঃ এখন অনেকে হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনসডে না বলে ভ্যালেন্টইনসডে না হলে হ্যাপি হলমার্কডে বলে থাকে। আমেরিকানরা ভ্যালেন্টাইনসডে উপলক্ষে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে কার্ড আদান প্রদান করে থাকে। বৃটেনে ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড রিয়ান ফুল কেনা বেচা হয়। ক্রিসমাসের পর ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে নিম্নে সব চেয়ে বেশী কার্ড কেনা বেচা হয়। ভ্যালেন্টাইনস গিফট হিসেবে বিক্রয় হচ্ছে। ভ্যালেন্টাইনস ডেকে লক্ষ রেখে আমেরিকায় ১৯৮৭ সালে হীরার গয়না তৈরী শিল্প গড়ে ওঠে। ভ্যালেন্টাইনস উপহার সাধারনত প্রেমিকা বা স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেও দিয়ে থাকে। এসব পন্য ছাড়া ও বিভিন্ন ধরনের সেবার ছাড় দেয়া হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে তো নামী দামি থেকে ছোট খাটো মেঠেল গুলো ১৪ই ফেব্র“য়ারীতে তাদেও সেবায় বিভিন্ন আকর্ষনীয় উপহার দিয়ে থাকে। নৌবিহারের ও আয়োজন করা হয় এ উপলক্ষে। স্ত্রী বা প্রেমিকাকে হতবাক কওে দেয়ার জন্য ধনী স্বামীরা নানা রকম আয়োজন কওে থাকে ভ্যালেন্টাইনস ডেতে। বহু ঘটনার কাহিনী রয়েছে ভ্যালেন্টাইনস ডেকে ঘিরে।

ভালবাসা দিবস কী? :বছরে মাত্র একটি দিন ও রাত প্রেম সরোবরে ডুব দেয়া, সাঁতার কাটা, চরিত্রের নৈতিক ভূষণ খুলে প্রেম সরোবরের সলিলে হারিয়ে যাওয়ার দিবস হচ্ছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘ভালবাসা দিবস’। সারাবিশ্বে ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয় প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারী।

ইতিহাসে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ :‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস প্রাচীন। এর উৎস হচ্ছে ১৭শ’ বছর আগের পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে প্রচলিত ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র উৎসব। এ পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল, যা পরবর্তীতে রোমীয় খৃষ্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। এ সমস্ত কল্প-কাহিনীর অন্যতম হচ্ছে, এ দিনে পৌত্তলিক (অগ্নি উপাসক) রোমের পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রোমিউলাস নামক জনৈক ব্যক্তি একদা নেকড়ের দুধ পান করায় অসীম শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে প্রাচীন রোমের প্রতিষ্ঠা করেন। রোমানরা এ পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ ফেব্রুয়ারী উৎসব পালন করত। এ দিনে পালিত বিচিত্র অনুষ্ঠানাদির মধ্যে একটি হচ্ছে, দু’জন শক্তিশালী পেশীবহুল যুবক গায়ে কুকুর ও ভেড়ার রক্ত মাখত। অতঃপর দুধ দিয়ে তা ধুয়ে ফেলার পর এ দু’জনকে সামনে নিয়ে বের করা হ’ত দীর্ঘ পদযাত্রা। এ দু’যুবকের হাতে চাবুক থাকত, যা দিয়ে তারা পদযাত্রার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে আঘাত করত। রোমক রমণীদের মাঝে কুসংস্কার ছিল যে, তারা যদি এ চাবুকের আঘাত গ্রহণ করে, তবে তারা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে। এ উদ্দেশ্যে তারা এ মিছিলের সামনে দিয়ে যাতায়াত করত।

রোমকরা খৃষ্টধর্ম গ্রহণের পরও এ উৎসব উদ্যাপনকে অব্যাহত রাখে। কিন্তু এর পৌত্তলিক খোলস পাল্টে ফেলে খৃষ্টীয় খোলস পরানোর জন্য তারা এ উৎসবকে ভিন্ন এক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে। সেটা হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক খৃষ্টান সন্ন্যাসীর জীবনোৎসর্গ করার ঘটনা। ইতিহাসে এরূপ দু’জন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী পাওয়া যায়। এদের একজন সম্পর্কে দাবী করা হয় যে, তিনি শান্তি ও প্রেমের বাণী প্রচারের ব্রত নিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তার স্মরণেই রোমক খৃষ্টানরা এ উৎসব পালন অব্যাহত রাখে। কালক্রমে ‘আধ্যাত্মিক ভালবাসা’র উৎসব রূপান্তরিত হয় জৈবিক কামনা ও যৌনতার উৎসবে। পরবর্তীতে রোমানরা খৃষ্টানদের অধীনে আসলে তাদের অনেকেই খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে। খৃষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মবিরোধী, সমাজ বিধ্বংসী ও ব্যভিচার বিস্তারকারী এ প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। এমনকি খৃষ্টধর্মের প্রাণকেন্দ্র ইতালীতে এ প্রথা অবশেষে বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু আঠারো ও ঊনিশ শতকে তা পুনরায় চালু হয়।ক্যাথলিক বিশ্বকোষে ভ্যালেনটাইন ডে সম্পর্কে তিনটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকটি ঘটনা নিম্নরূপ :

১ম বর্ণনা : রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস-এর আমলের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খৃষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের তরফ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হ’লে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করেন। ফলে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। রোম সম্রাটের বারবার খৃষ্টধর্ম ত্যাগের আহবান প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খৃস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।

২য় বর্ণনা : খৃষ্টীয় ইতিহাস অনুযায়ী এ দিবসের সূত্রপাত হয় ২৬৯ খৃষ্টাব্দে। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তলোলুপ রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার ছিল এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। এক সময় তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাযী নয়। সম্রাট লক্ষ্য করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি ভালবেসে সেন্ট মারিয়াসকে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি এক সময়ে সম্রাট ক্লডিয়াস জেনে যান। তিনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাযির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। ঐ দিনের শোক গাঁথায় আজকের ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’।

অন্য বর্ণনা মতে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। জনৈক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলত। এক সময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে যায়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুদন্ড দেন। তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী।

৩য় বর্ণনা : গোটা ইউরোপে যখন খৃষ্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হ’ত রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারীতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি জারে বা বাক্সে জমা করত। অতঃপর ঐ বাক্স হ’তে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলত, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, সে পূর্ণবৎসর ঐ মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বৎসর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হ’ত। এ রীতিটি কতক পাদ্রীর গোচরীভূত হ’লে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মায়ন করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খৃষ্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খৃষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

৪র্থ বর্ণনা : প্রাচীন রোমে দেবতাদের রাণী জুনো (Juno)’র সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারী ছুটি পালন করা হ’ত। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারী লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাযারো তরুণের মেলায় র‌্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত। এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাংকিত কাগজের সি¬প জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে (জারে) ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা সি¬পের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হ’ত এবং ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে পরিণতি ঘটত।

৫ম বর্ণনা : রোমানদের বিশ্বাসে ব্যবসা, সাহিত্য, পরিকল্পনা ও দস্যুদের প্রভু ‘আতারিত’ এবং রোমানদের সবচেয়ে বড় প্রভু ‘জুয়াইবেতার’ সম্পর্কে ভ্যালেনটাইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে উত্তরে বলে, এগুলো সব মানব রচিত প্রভু, প্রকৃত প্রভু হচ্ছে, ‘ঈসা মসীহ’। এ কারণে তাকে ১৪ ফেব্রুয়ারীতে হত্যা করা হয়।

৬ষ্ঠ বর্ণনা : কথিত আছে যে, খৃষ্টধর্মের প্রথম দিকে রোমের কোন এক গীর্জার ভ্যালেন্টাইন নামক দু’জন সেন্ট (পাদ্রী)-এর মস্তক কর্তন করা হয় নৈতিক চরিত্র বিনষ্টের অপরাধে। তাদের মস্তক কর্তনের তারিখ ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী। ভক্তেরা তাদের ‘শহীদ’ (!) আখ্যা দেয়। রোমান ইতিহাসে শহীদের তালিকায় এ দু’জন সেন্টের নাম রয়েছে। একজনকে রোমে এবং অন্যজনকে রোম থেকে ৬০ মাইল (প্রায় ৯৭ কি.মি.) দূরবর্তী ইন্টারামনায় (বর্তমান নাম Terni) ‘শহীদ’ করা হয়। ইতিহাসবিদ কর্তৃক এ ঘটনা স্বীকৃত না হ’লেও দাবী করা হয় যে, ২৬৯ খৃষ্টাব্দে ‘ক্লাউডিয়াস দ্যা গথ’-এর আমলে নির্যাতনে তাদের মৃত্যু ঘটে। ৩৫০ খৃষ্টাব্দে রোমে তাদের সম্মানে এক রাজপ্রাসাদ (Basilica) নির্মাণ করা হয়। ভূগর্ভস্থ সমাধিতে একজনের মৃতদেহ আছে বলে অনেকের ধারণা।

অন্য এক তথ্যে জানা যায়, রোমে শহীদ ইন্টারামনা গীর্জার বিশপকে ইন্টারামনা ও রোমে একই দিনে স্মরণ করা হয়ে থাকে। রোমান সম্রাট ২য় ক্লাউডিয়াস ২০০ খৃষ্টাব্দে ফরমান জারী করেন যে, তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না। কারণ অবিবাহিত তরুণরাই দক্ষ সৈনিক হ’তে পারে এবং দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। ভ্যালেন্টাইন নামের এক তরুণ সম্রাটের আইন অমান্য করে গোপনে বিয়ে করে। কেউ কেউ বলেন, রাজকুমার এ আইন লংঘন করেন।

৭ম বর্ণনা : ৮২৭ খৃষ্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ব্যক্তি রোমের পোপ নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য এবং সুন্দর ব্যবহার দিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই রোমবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৪০ দিন দায়িত্ব পালনের পরই তাঁর জীবনাবসান ঘটে। প্রিয় পোপের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী রোমবাসী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনেকের মতে এভাবেই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সূচনা হয়।২

প্রাচীনকালে রোমানরা নেকড়ে বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে লুপারকালিয়া নামে ভোজানুষ্ঠান করত প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারী। এ ভোজানুষ্ঠানের দিন তরুণরা গরুর চামড়া দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করত। মেয়েরাও উৎসবে মেতে উঠত। ভ্যালেন্টাইন নামের কোন বিশিষ্ট বিশপ প্রথমে এর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এর নাম হয়েছে ভ্যালেন্টাইন, তা থেকে দিবস। রোমানরা ৪৩ খৃষ্টাব্দে ব্রিটেন জয় করে। এ কারণে ব্রিটিশরা অনেক রোমান অনুষ্ঠান গ্রহণ করে নেয়। অনেক গবেষক এবং ঐতিহাসিক Lupercalia অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন অনুষ্ঠানের একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন। কেননা এতে তারিখের অভিন্নতা ও দু’টি অনুষ্ঠানের মধ্যে চরিত্রগত সাযুজ্য রয়েছে।

ভালবাসা দিবস উদ্যাপনের সূচনা :‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, ১৪ ফেব্রুয়ারীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন প্রেমের পূজারী সিদ্ধপুরুষরূপে ভালবাসার বাণী বিনিময়ের মূর্তপ্রতীক হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রচলনের এটাই হ’ল আদি ইতিহাস। এ দিবসের ইতিহাসে বর্ণিতে লটারীর বিষয়টি পরবর্তীতে পোপ গেলাসিয়াস কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং এ দিবসকে খৃষ্টীয় ফ্লেভার দিতে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামের মোড়ক দিয়ে আবৃত করেন। মজার কথা হ’ল ১৪ শতকের আগেও ভ্যালেন্টাইন দিবসের সাথে ভালবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জেওফ্রে চসার (Geoffery Chaucer) তার ‘The Parliament of Fowls’ কবিতায় পাখিকে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসাবে কল্পনা করেছেন। মধ্যযুগে ফ্রান্সে এবং ইংল্যান্ডে বিশ্বাস করা হ’ত যে, ফেব্রুয়ারী মাস হ’ল পাখির প্রজনন কাল। চসার তার কবিতায় লিখেছেন, ‘For this was on St. valentine’s day, when every fowl cometh there to choose his mate.’ বস্ত্ততঃ চসারের এ কবিতার মাধ্যমেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মধ্যে ভালবাসা জিনিসটি ঢুকে যায় এবং আস্তে আস্তে ব্যাপকতা লাভ করে। লেখক Henry Ansgar Kelly তার ‘Chaucer and cult of Saint Valentine’ বইতে এ ব্যাপারটি ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মূলতঃ আজকের ভালবাসা দিবসের উৎপত্তি ভালবাসা দিবস হিসাবে হয়নি।৫ম শতাব্দী (৪৯৬ খৃ.) থেকেই দিনটিতে কবিতা, ফুল, উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে প্রিয়জনকে বিশেষ স্মরণের রেওয়াজ শুরু হয়। ইংল্যান্ডের মানুষ ১৪শ’ শতাব্দীর শুরু থেকে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদ্যাপন শুরু করেছে। ঐতিহাসিকদের অভিমত, ভ্যালেন্টাইন দিবসে ইংল্যান্ডে প্রিয়জনের কাছে কবিতার চরণ প্রেরণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। ফরাসি বংশোদ্ভূত অর্লিন্স (Orleans)-এর ডিউক চার্লসকে ১৪১৫ সালে অজিনকোর্টের যুদ্ধে ইংরেজরা গ্রেফতার করে এবং ইংল্যান্ডে এনে কারাবন্দি করে। ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন দিবসে এ ডিউক তার স্ত্রীর কাছে ছন্দময় ভাষায় লন্ডন টাওয়ারের কারাগার থেকে পত্র লেখেন। ইংল্যান্ডে সেই থেকে ভ্যালেন্টাইনস দিবস উদযাপন শুরু। এ দিবসে যা যা করা হয় :পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে এ দিনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও উপহার বিনিময় হয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে আছে পত্র বিনিময়, খাদ্যদ্রব্য, ফুল, বই, ছবি, ‘Be my valentine’ (আমার ভ্যালেন্টাইন হও), প্রেমের কবিতা, গান, শে¬াক লেখা কার্ড প্রভৃতি। গ্রীটিং কার্ডে, উৎসব স্থলে অথবা অন্য স্থানে প্রেমদেব (Cupid)-এর ছবি বা মূর্তি স্থাপিত হয়। সেটা হ’ল একটি ডানাওয়ালা শিশু, তার হাতে ধনুক এবং সে প্রেমিকার হৃদয়ের প্রতি তীর নিশান লাগিয়ে আছে। এ দিন স্কুলের ছাত্ররা তাদের ক্লাসরুম সাজায় অনুষ্ঠান করে। ১৮শ’ শতাব্দী থেকেই শুরু হয়েছে ছাপানো কার্ড প্রেরণ। এ সব কার্ডে ভাল-মন্দ কথা, ভয়-ভীতি আর হতাশার কথাও থাকত। ১৮শ’ শতাব্দীর মধ্য ভাগ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যে সব কার্ড ভ্যালেন্টাইন ডে’তে বিনিময় হ’ত তাতে অপমানজনক কবিতাও থাকত। সবচেয়ে যে জঘন্য কাজ এ দিনে করা হয়, তা হ’ল ১৪ ফেব্রুয়ারী মিলনাকাঙ্ক্ষী অসংখ্য যুগল সবচেয়ে বেশী সময় চুম্বনাবদ্ধ হয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। আবার কোথাও কোথাও চুম্বনাবদ্ধ হয়ে ৫ মিনিট অতিবাহিত করে ঐ দিনের অন্যান্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে : ভালবাসায় মাতোয়ারা থাকে ভালবাসা দিবসে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো। পার্ক, রেস্তোরাঁ, ভার্সিটির করিডোর, টিএসসি, ওয়াটার ফ্রন্ট, ঢাবির চারুকলার বকুলতলা, আশুলিয়া- সর্বত্র থাকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের তুমুল ভিড়। ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে’ উপলক্ষে অনেক তরুণ দম্পতিও হাযির হয় মকুঞ্জগুলোতে। ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলের আয়োজনে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উদ্যাপন উপলক্ষে হোটেলের বলরুমে বসে তারুণ্যের মিলন মেলা। ‘ভালবাসা দিবস’-কে স্বাগত জানাতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলরুমকে সাজান বর্ণাঢ্য সাজে। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় বলরুমের অভ্যন্তর। জম্পেশ অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট, ডেলিশাস ডিনার এবং উদ্দাম নাচ। আগতদের সিংহভাগই অংশ নেয় সে নাচে। ঘড়ির কাটা যখন গিয়ে ঠেকে রাত দু’টার ঘরে তখন শেষ হয় প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলের ‘ভালবাসা দিবস’ বরণের অনুষ্ঠান।রাজধানীর পাঁচতারা হোটেলগুলোতে এ দিবস উদ্যাপনের অনুকরণে দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলোর বড় বড় হোটেলগুলোও এ দিবস উদ্যাপন শুরু করেছে প্রায় একই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ঢাবির টিএসসি এলাকায় প্রতি বছর এ দিবসে বিকেল বেলা অনুষ্ঠিত হয় ভালবাসা র‌্যালি। এতে বেশ কিছু খ্যাতিমান দম্পতির সাথে প্রচুর সংখ্যক তরুণ-তরুণী, প্রেমিক-প্রেমিকা যোগ দেয়। প্রেমের কবিতা আবৃত্তি, প্রথম প্রেম, দাম্পত্য এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির স্মৃতি চারণে অংশ নেয় তারা। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এমনকি বুড়া-বুড়িরা পর্যন্ত নাচতে শুরু করে! তারা পাঁচতারা হোটেলে, পার্কে, উদ্যানে, লেকপাড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে ভালবাসা বিলাতে, অথচ তাদের নিজেদের ঘর-সংসারে ভালবাসা নেই! আমাদের বাংলাদেশী ভ্যালেন্টাইনরা যাদের অনুকরণে এ দিবস পালন করে, তাদের ভালবাসা জীবনজ্বালা আর জীবন জটিলতার নাম; মা-বাবা, ভাই-বোন হারাবার নাম; নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত হওয়ার নাম। তাদের ভালবাসার পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। কী আমরা করছি?  :আমেরিকা ও ইউরোপ এর লোকজন একই উৎসবে মেতে উঠতে পারে। কারণ তারা এক জাত, এক সভ্যতা, এক সংস্কৃতি, এক ধর্ম এবং একই ধারার লোক। এক দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তাই আনন্দ-বেদনার অনুভূতি সর্বত্র অভিন্ন। কিন্তু আমাদের দেহ পৃথক, ওদের চেয়ে আমরা পৃথক প্রায় সব ক্ষেত্রে। তথাপি কেন আমরা নাচি যখন তারা ডুগডুগি বাজায় নিজেদের জন্য। বিলাতের ভ্যালেন্টাইন ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে মুসলিমরাও যদি একইভাবে এ দিবসটি পালন করে, তাহ’লে তাদের ও আমাদের মধ্যে ফারাক থাকল কোথায়? আমরা মুসলিম। ভ্যালেন্টাইন আমাদের নয়, ওদের- এ জ্ঞানটুকুও নেই, এটাই আজ আমাদের জন্য বড় ট্রাজেডি। পরিশেষে বলব, যখন এ পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষ না খেয়ে থাকে, যখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কান্ডারী শিশুরা ক্ষুধায়, অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়? তখন আমরা অবৈধ বিনোদনের নামে নোংরামী করে অযস্র অর্থ নষ্ট করি কোন মানবিকতায়? অতএব যেকোন মূল্যে এসমস্ত অপসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকা আমাদের দায়িত্ব। ঈশ্বর আমাদের সুমতি দান করুন।-আমীন! চারটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত ‘ভালবাসা’ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ ‘মুহাববাত’ ও ইংরেজি Love। এর অর্থ- অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা ঈশ্বর মানবহৃদয়ে সৃষ্টিগতভাবে দিয়েছেন। ভালবাসা দু’ধরনের (১) বৈধ ও পবিত্র, (২) অবৈধ ও অপবিত্র। যুবক-যবতীর বিবাহপূর্ব সম্পর্ক হচ্ছে অবৈধ ও অপবিত্র ভালবাসা। আর সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা হচ্ছে পবিত্র ভালবাসা।