নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে গত সোমবার থেকে বিভিন্ন সীমান্তে আটকে পড়া পেঁয়াজের চালান অবশেষে বাংলাদেশে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত সরকার। এর ফলে শনিবার থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে।
শুক্রবার রাতে ভারতের দিল্লিতে এক বৈঠক শেষে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই কথা বলেন। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পেঁয়াজবোঝাই সহস্রাধিক ভারতীয় ট্রাক দেশটির বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকা পড়ে। ভারত থেকে এই পাঁচদিন পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দেশে বাজারগুলোতে দামে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এতে করে ৪০ টাকার পেঁয়াজ একলাফে ১০০ টাকা ও এর বেশি দরে বেচাকেনা হয়।
এদিকে এর আগে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ভারতীয় সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পচে যাওয়া পেঁয়াজ রাস্তায় ফেলে দিতে হয় রপ্তানিকারকদের। অনেকে কম দামে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করে দেয়।
টানা গরমের মধ্যে গত সোমবার বা তারও আগে থেকে পেঁয়াজ নিয়ে সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোতে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাকগুলো। এরও এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজগুলো ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে বস্তায় ভরা হয়। ১১ দিনের বেশি সময় ধরে পেঁয়াজ বস্তায় থাকায় পচন শুরু হয়েছে।
তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা ট্রাকে নষ্ট হতে বসা পেঁয়াজ সীমান্তের কাছাকাছি পাইকারি বাজারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরে ট্রাক আটকে আছে। তাই নষ্ট হতে বসা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পাইকারি বাজারে কমদামে বিক্রি করে কিছুটা ক্ষতি সামাল দেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, পেট্রাপোল সীমান্তে পেঁয়াজ ভর্তি বহু ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। যারমধ্যে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হতে শুরু করেছে। গত সোমবার ভারত সরকারের তরফে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই বিভিন্ন স্থলবন্দরে পৌঁছে যায় পেঁয়াজ ভর্তি বহু ট্রাক। ওই দিন সকালে কিছু ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকলেও দুপুরের পর থেকে আর পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতের বিভিন্ন স্থলবন্দরে আনুমানিক ২০ হাজার টন পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এর আগে ভারতের অল ইন্ডিয়া কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ নাভালে বলেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি নন কৃষকরাও। বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে শুধু ব্যবসায়ীদের নয়, কৃষকদেরও দুরবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মহারাষ্ট্র সরকারের শরিক দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি- এনসিপির প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার অবিলম্বে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের কাছে দাবি জানান।