দেশের বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের সহায়তা ও সামাজিক মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা উদ্যোগের নাম বয়স্ক ভাতা। এই কার্যক্রমের সূত্রপাত ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে। শুরুতে পাঁচ জন পুরুষ ও পাঁচ জন মহিলাসহ মোট ১০ জন গরিব বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ১০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা দেয়া হত। ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের জন্য বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ লাখ এক হাজার। চলুন জেনে নেয়া যাক বয়স্ক ভাতা পাওয়ার আবেদন পদ্ধতির ব্যাপারে।
কাদের জন্য বয়স্ক ভাতা
সর্বপ্রথম বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। যেহেতু বয়স্কদের জন্যই এই ভাতা তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বয়স্কদের মধ্যে যারা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে উপার্জনে শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার অধিকারী যেমন ভূমিহীন, উদ্বাস্তু এবং নিঃস্ব ব্যক্তিরা এই ভাতার আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে কারো জমি ০.৫ একর বা তার কম পরিমাণের হলে তাকে ভূমিহীন ধরা হয়।
এছাড়া বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত, বিপত্নীক, নিঃসন্তান এবং সবশেষে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বয়স্ক ব্যক্তিগণ ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার শর্তাবলি
১) কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে।
২) জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকা আবশ্যক; নূন্যতম জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা যেতে পারে।
৩) বয়স যাচাইয়ের সময় পুরুষের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬৫ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে নূন্যতম ৬২ বছর গ্রহণ করা হয়।
৪) বায়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার মধ্যে হলে তাদের বয়স্ক ভাতা আওতায় আনা হয়।
৫) সর্বসাকূল্যে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত বাছাই কমিটির মাধ্যমে এই ভাতা প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে হয়।
৬) সরকারি কর্মচারী অর্থাৎ পেনশন প্রাপ্তরা এই আওতার বাইরে।
৭) ভিজিডি (ভালনারেবশ গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট)-এর কার্ডধারীরা বয়স্ক ভাতা কার্যক্রমের বাইরে।
৮) অন্য কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়মিত সরকারি বা বেসরকারি অনুদান/ভাতা/আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তরা বয়স্ক ভাতা পাবেন না।
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন পদ্ধতি
এখন সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট ফরম পূরনের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করা যায়।
ফর্মের লাল তারকা চিহ্নিত শূন্যস্থানগুলো পূরণের দিকে অধিকতর সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। প্রথমেই আসবে সমাজসেবা কার্যালয় নির্বাচনের বিষয়টি। এখানে প্রার্থী যে এলাকায় বাস করছেন সেই উপজেলা বা শহরের সংশ্লিষ্ট সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নাম দিতে হবে।
ছবি আপলোডের জন্য আগে থেকেই প্রার্থীর এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি স্ক্যান করে রাখতে হবে। অতঃপর জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী প্রার্থীর প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে।
ফরমের শেষের দিকে প্রার্থীর নমিনীর পাসপোর্ট সাইজ ছবির স্ক্যান কপিসহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। বয়স্ক প্রার্থী অসুস্থ বা চলাফেরায় অক্ষম হলে তার পরিবর্তে যিনি ভাতা তুলতে যাবেন তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে এ অংশে।
সব তথ্য প্রদানের কাজ সম্পন্ন হলে এটি সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের ডাটাবেজে সংরক্ষিত হবে। একইসঙ্গে ফরমে প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে প্রাপ্তি স্বীকারমূলক বার্তার সঙ্গে একটি আইডি নম্বর দেয়া হবে। এই নম্বরটির মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আবেদনের হালনাগাদ সম্পর্কে জানা যাবে।
সবশেষে অনলাইনে পাঠানো আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট কপিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের মাধ্যমে সত্যায়িত করে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের জমা দিতে হবে।
বয়স্ক ভাতা সংগ্রহের স্থান
প্রতিটি উপজেলাতেই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এর বিকল্প হিসেবে তফসিলি যে কোন ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা তোলা যায়। এর জন্য উপজেলা হিসাব সংরক্ষণ কিংবা এলাকার সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রার্থীর ছবি, পরিচয় ও স্বাক্ষর রেজিস্টার করাতে হবে। এরপর সেখান থেকে পাস বই ইস্যু করা হবে, যা দিয়ে মাসিক ভাতা তোলা যাবে।