বুয়েটের আন্দোলনকে কিভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ?

23

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, বুয়েটের হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর যে নৃশংস চেহারা ফুটে উঠেছে, সেজন্য আওয়ামী লীগকেই একটা রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে।

কতটা মূল্য দিতে হতে পারে- সেই প্রশ্ন দলটির ভেতরেও রয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন: ছাত্রলীগ বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং এই বিষয়গুলো মানুষ বিবেচনা করবে।

বুয়েটের শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার যে ভয়াবহ বর্ণনা বা তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ হয়েছে, তা দেশজুড়ে নাড়া দিয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে মনে করেন: ঘটনাটি সারাদেশে শিক্ষার্থী অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি অভিভাবকদের প্রভাবিত করছে। ফলে সমাজের একটা বড় অংশের মাঝে সংগঠন হিসেবেই ছাত্রলীগের প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, পরিস্থিতির জন্য দিনশেষে আওয়ামী লীগকেই চড়া দাম দিতে হতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন: পরিস্থিতি যাতে সরকারবিরোধী ক্ষোভে পরিণত না হয় বা অন্য কোনো দিকে মোড় না নেয়, সেই চিন্তা থেকে সরকার বুয়েটের ঘটনা দ্রুত সামাল দিতে চায়। আর সেজন্য সরকার তাদের পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান করছে।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন: রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে, এটি বিবেচনায় নিয়েই তারা সন্দেহভাজনদের সাথে সাথে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করাসহ রাজনৈতিক এবং আইনগত সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জনগণ তাদের পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন: অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে। তবে এই ঘটনাটি আমাদের সরকার বিশেষ করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যেভাবে কঠোর হস্তে এটাকে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করছেন, সেটিও কিন্তু মানুষ দেখছে যে উনি চোখ বুজে থাকেন নাই, ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন নাই।

‘আমাদেরও হয়তো কিছুটা দূর্বল দিক থাকতে পারে। কিন্তু আমরা কিভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি, সেটিও কিন্তু মানুষ বিবেচনা করবে। তারা যদি বুঝে যে, আমরা সততার সাথে এটা মোকাবেলা করছি। তাহলে আমাদের অত বেশি মূল্য দিতে হবে না। এবং মানুষ সেটা বুঝবে’, এমনটাই বলছিলেন ড. আব্দুর রাজ্জাক।

২০১২ সালে পুরনো ঢাকায় দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের অনেক কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সর্বশেষ বুয়েটে শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনারও সবকিছুই প্রকাশ পাচ্ছে, এখানেও ধামাচাপা দেয়া সুযোগ নেই। ফলে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মানুষের মাঝে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বিবেচনা করছেন।

আর সেই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নমনীয় থেকে সন্দেহভাজনদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টাকে সরকারের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হচ্ছে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী শামিমা হারুন লুবনা মনে করেন: তৃণমূলে তারা মনে করেন যে আওয়ামী লীগ বা সরকার যে অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়নি, সে বিষয়টি তাদের দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করবে।

‘আওয়ামী লীগ কি অভিযুক্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে? আমরা কি তাদের পাশে থাকার কথা বলছি? সেটা যদি বলতাম, তাহলে আওয়ামী লীগকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমাদের নেত্রী সেই সুযোগ রাখেননি।’

কিছুদিন আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ছাত্রলীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগের অনেকে ধরা পড়েছেন।

এর রেশ কাটতে না কাটতেই বুয়েটে শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় সেখানকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরছেন। একইসাথে এমন সব ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রশ্নও উঠছে দলটিতে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী সাগুফতা ইয়াসমিন বলেছেন: নতুন লোক নেয়ার ক্ষেত্রে আরও সজাগ থাকার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

‘যে দলটা স্বাধীনতা এনেছে, তারা আদর্শ বিচ্যূত হয়নি। কিন্তু আমার এলাকায় ধরে নেন যে, ছাত্রলীগের ১০০জন সদস্য আছে, তার মধ্যে পাঁচজন হয়তো খারাপ। তারা ছাত্রলীগের জন্য নয়। তারা হয়তো পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা পায়নি। এখন পরিবার পর্যন্ত যাচাই করে দলে লোক নেয়া এটা খুবই কঠিন। এখন এতবড় একটা দলে কোথাও ভুল মানুষ ঢুকে যেতে পারে, সে ব্যাপারেও এখন দল সচেতন হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন: এখন বুয়েটের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দলটির এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে অন্য কোনো ইস্যু সৃষ্টির সুযোগ না থাকে।