বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কখনোই কাম্য না হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রায়ই এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। তবে এবার ভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে। বিজিবি’র গুলিতে রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বিএসএফ’র একজন মেজর নিহত হয়েছেন।
বিজিবি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বিএসএফ সদস্য নিহতের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে এ বিষয়ে উভয়পক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
সীমান্তের ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিজিবি জানায়: বৃহস্পতিবার আনুমানিক বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে রাজশাহী ব্যাটালিয়নের অর্ন্তগত চারঘাট বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য লাইন হতে পদ্মা নদীর পাড়ে আনুমানিক ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী তিন জেলেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।
‘‘এসময় বিজিবির চারঘাট বিওপি’র টহল দল মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান তদারকির জন্য উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট আবু রায়হান ও আরো দু’জন সহকারীসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে এক জেলেকে অবৈধ কারেন্ট জালসহ আটক করে। এসময় বাকী দুই জেলে ভারতের দিকে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে প্রতিপক্ষ বিএসএফ এর ১৭১ ব্যাটালিয়নের কাগমারী বিওপি হতে স্পিডবোটে করে ৪ জন বিএসএফ সদস্য চারঘাট উপজেলার বালুঘাট এলাকার শাহারিয়াঘাটের বড়াল নদীর মুখে আনুমানিক ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভিতরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে। এসময় চারঘাট বিওপির টহল দল তাদেরকে বাধা দেয়।
ওই চার জনের মধ্যে ১ জন বিএসএফ সদস্য ইউনিফর্ম পরিহিত থাকলেও বাকিরা হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে ছিল। এছাড়া বিএসএফ টহল দলের কাছে অস্ত্রও ছিল।
পরবর্তীতে বিএসএফ উক্ত জেলেকে জোর করে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তাদেরকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিয়ম মাফিক ফেরত দেয়া হবে বলে বিজিবি টহল দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিজিবি টহল দলের পক্ষ থেকে বিএসএফ সদস্যদের আরও বলা হয়, আপনারাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন, তাই আপনাদেরকেও নিয়ম অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএসএফ সদস্যরা আতংকিত হয়ে জোরপূর্বক আটক জেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থল হতে চলে যেতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এসময় বিএসএফ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে গুলি করে এবং গুলি করতে করতে স্পিডবোট চালিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যেতে থাকে। তখন বিজিবি টহল দল আত্মরক্ষার্থে গুলি করে। এ ঘটনায় বিএসএফ’র এক সদস্য নিহত হন এবং একজন সদস্য আহত হন।’’
বিজিবি’র ভাষ্যে আমরা মনে করি, বিএসএফ সদস্যদের অতি উৎসাহের কারণে সীমান্তে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। কারণ ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশ অংশে অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরার অধিকার নেই। এটা বিএসএফ সদস্যদের ভালোভাবেই জানার কথা। এরপরও তাদের আটক করার পর আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা না দেখিয়ে বিএসএফ সদস্যরা কীভাবে স্পীডবোট নিয়ে বাংলাদেশে এসে ওই জেলেদের ছাড়িয়ে নিতে চায়?
বিএসএফ সদস্যদের এমন আচরণ শুধু অযৌক্তিক নয়, বরং চরম আপত্তিকরও বটে। এরপরও বিজিবি সদস্যরা তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার কথা বললে কেন বিএসএফ গুলি করবে? তাহলে তারা কি সীমান্তে কোনো ধরনের নিয়মকানুন মানতে চান না? এমনটা যেন ভবিষ্যতে আর কখনও না হয়।
এরপরও আমরা মনে করি, এ বিষয়ে দুই পক্ষের আরও সংযত আচরণ উচিৎ ছিল। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পরও উভয় বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরে আমরা আশাবাদী। বৈঠকে উভয়পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে, এটাও ভালো খবর। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আমরা কোনো ধরনের সহিংসতা চাই না। বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করাই হোক উভয় দেশের রক্ষীদের একমাত্র কাজ।
এ বিষয়ে কোনো ধরনের উত্তেজনা না দেখিয়ে উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযমের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।