বিএনপি নেতারা কী আশা করছে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশের সব থেকে ব্যয়বহুল হাসপাতালে হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেতারা আমাদের কাছে কী আশা করছে? আমরা তাকে (খালেদা জিয়া) বাড়িতে থাকতে এবং দেশের সেরা হাসপাতালে অবাধে চিকিৎসা নিতে দিয়েছি। এটা কি যথেষ্ট নয়?

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যুবলীগের উদ্যোগে সারাদেশে চলমান আশ্রয়ণ কর্মসূচির ৪র্থ ধাপের ৬৯টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ৩ ধাপে আরও ৫৪টি পরিবারের মাঝে ঘর প্রদান করেছে যুবলীগ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। পরিচালনায় ছিলেন- যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

সভাপতির বক্তব্যে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় চলমান মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। একই সঙ্গে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রগতিশীল আগামীর বাংলাদেশ গড়তে যুবলীগের নেতাকর্মীদের কাজ করার আহবান জানান তিনি। নিজ বক্তৃতায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যের ভূয়সি প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক, জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে যুবলীগকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওযার লক্ষ্যে প্রস্তুত করতে চাই।

এসময় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি নেতাদের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশে সব থেকে দামি যে হাসপাতাল, যে হাসপাতাল সব থেকে ব্যয়বহুল, সেখানেই কিন্তু তার চিকিৎসা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (খালেদা জিয়া) ছেলে তারেকের বউ ডাক্তার। শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। কই ছেলে, ছেলের বউ তো কোনো দিন দেখতে আসলো না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে। তারা তো আসে নাই। যাই হোক তবু বিএনপি এত দিন পর একটা সুযোগ পেয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এই দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। খুব ভালো তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল সেটা কিন্তু আমি করেছি।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি অতীত ঘটনা তুলে ধরে বলেন, জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায়- আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল। ঘা শুকায়নি। সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান জেলে ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর, তাকেও তখন জেলে দিয়েছিল। তারও তখন টিবি হয়েছিল, অসুস্থ ছিল। তাকেও জেলে দিয়েছিল। এ রকম বহু অন্যায়-অবিচারের কথা আছে।

অন্যদিকে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দোষী সাব্যস্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার পাশাপাশি কেবল প্রতিহিংসার বশবর্তী ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার দিনে জন্মদিন না হওয়া সত্বেও কেবল কষ্ট দেওয়ার জন্য জন্মদিন পালনের মত অমানবিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে।

তিনি বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করেন, ‘তারা আমাদের কাছে কী আশা করছে? আমরা তাকে বাড়িতে থাকতে এবং দেশের সেরা হাসপাতালে অবাধে চিকিৎসা নিতে দিয়েছি। এটা কি যথেষ্ট নয়? এটা কি বিরাট উদারতা নয়? আমরা এটা (উদারতা) দেখিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ডিবিসি নিউজ এর প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি এবং বিশিষ্ট বাউল শিল্পী শফি মন্ডল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুবসমাজ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। সেজন্য ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারটা যুবসমাজকে উৎসর্গ করেই তৈরী হয়েছে- ‘তারুণ্যের উন্নতি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার জন্য তারুণ্যের শক্তিটাকেই আমরা গুরুত্ব দিয়েছি এবং তরুণ সমাজকে আমরা তৈরী করতে চেয়েছি ভবিষ্যত বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। শিক্ষায়-দীক্ষায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। যাতে করে এই তরুণ সমাজই আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারে।

তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যানের বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রগতিশীল ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের মত বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে যদি যুবলীগ গড়ে উঠতে পারে তাহলে এদেশের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। আর আমরা যে আর্থ-সামাজিক উন্নতি করেছি, সে মতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের পথে যাবার পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ তার সরকার করে দিয়েছে। সেটা ধরে এগিয়ে গেলে পরে বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাবে এবং প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে- সেটাই আমরা চাই।