বাসায় ফিরলো সেই চার শিশু

উচ্চ আদালতের আদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে চার শিশুকে বরিশালের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উচ্চ আদালতের রায় যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে এসে পৌঁছালে শিশুদের মুক্তিদান প্রক্রিয়া শুরু হয়।

যশোরের পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে একে একে এসে পৌঁছান উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা। এখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে একটি মাইক্রোবাসে করে রাত আড়াইটার দিকে তারা বরিশালের উদ্দেশে রওনা হন।

সঙ্গে যান শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রবেশন অফিসার তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। বৃৃৃৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় তাদের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা চার শিশুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে রাতের মধ্যেই তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এসব আদেশ দেন।

যশোরের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) শিশুদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। একইসঙ্গে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন হাইকোর্ট।

আগামী রোববার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় সশরীরে তাকে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকসহ একই তারিখে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ভিকটিম শিশুর ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চে এ প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে বলেছেন।

গত মঙ্গলবার রাতে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন আদালত তাদের যশোর শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১১ বছর।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ও অভিযুক্ত চার শিশুর বাড়ি একই এলাকায়। গত রোববার বিকেলে খেলার কথা বলে বাড়ির পাশের বাগানে নিয়ে ওই শিশুকে ধর্ষণ করে এক শিশু। ধর্ষণে সহায়তা করে অন্য তিনজন।

সোমবার রাতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিভাবকরা মঙ্গলবার সকালে তাকে নিয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই চার শিশুকে আসামি করে বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চার শিশুকে গ্রেফতার করে। বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

ওইদিন বাকেরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার জানান, শিশুটির বাবা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। এরপর থানা পুলিশ ওই চার শিশুকে আটক করে এবং আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের যশোরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঘটনার শিকার এবং অভিযুক্ত সবাই শিশু। তাই শিশু অপরাধ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।