জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে আটক করেছে র্যাব।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ঈশা খাঁ হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানতে পারে মেয়র আব্বাস আলী রাজধানীর কাকরাইলের হোটেল ঈশা খাঁতে অবস্থান করছেন। এরপর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে হোটেলটি ঘিরে রাখে র্যাবের একটি দল। পরে সকালে তাকে আটক করা হয়।
এ ব্যাপারে সকাল দশটার মধ্যে ঘটনাস্থলে ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আব্বাস আলী ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার কাটাখালীর মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।
ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ২৪ নভেম্বর দলীয় পদ থেকে মেয়র আব্বাসকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। ২৬ নভেম্বর তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।
গত ২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথা বলতে শোনা গেছে মেয়র আব্বাস আলীকে।
অডিও ক্লিপে আব্বাস আলী বলেন, ‘হাইওয়েটাকে আমরা ডিজাইন করতে দিয়েছি। আমাদের যে অংশটা হাইওয়ে। সিটি গেট থেকে আমার অংশ। টোটালই একটা ফার্মকে দিয়েছি যে, তারা একদম বিদেশি স্টাইলে সাজায়ে দিবে ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা।’
কথার এই পর্যায়ে পাশে থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন, ‘দুই পারে দুইটা গেট করার কথা আছে।’
এর প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক সঠিক না। এ জন্য আমি ওকে থুব না। সব করব, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাছি, আমাকে যেভাবে বুঝ্যালো আমি দেখতে পাছি যে ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না আমাক বুঝাই দিছে।’
আব্বাস আলী বলেন, ‘যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া জায়গা নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি সিওর। তবে করলে কিছু করার নাই। মানুষেক সন্তুষ্ট করতে যাইয়া আল্লাক অসন্তুষ্ট করা যাবে না তো।’
বিষয়টি নিয়ে ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে বিবৃতি দেন আব্বাস আলী। তাতে ভাইরাল হওয়া অডিও প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘অডিওটি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনারা বুঝতে পারবেন অডিওটি এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। আমি কখনও কারও সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে না কিংবা কেউ ম্যুরাল নির্মাণ করলে বাধা দেওয়া হবে এ রকম কথা বলিনি।’
সেই সময় তিনি দাবি করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকে একটি অশুভ শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ যেন গেট নির্মাণ করতে না পারি এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
এ ঘটনায় গত ২৩ নভেম্বর মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যুবলীগের এক নেতা। সেদিন একই আইনে আরও দুটি মামলা করেন আরও দুই আওয়ামী লীগ নেতা।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত