পাসপোর্ট রিনিউ করতে হয় নির্দিষ্ট মেয়াদ পর। পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর থাকে। এখন ই-পাসপোর্ট নিয়ে নানা ধরণের কথাবার্তা হচ্ছে। শিগগিরই e-passport চালুর কথা রয়েছে, যদিও একাধিকবার তা চালু করার কথা থাকলেও এখনো চালু হয়নি। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে দশ বছর মেয়াদও দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে Passport নবায়ন বা রিনিউ’র ঝামেলা অনেকটা কমে আসবে। তবে সেক্ষেত্রেও পাঁচ বছর মেয়াদী e passport দেয়া হবে বলে জানানো হচ্ছে। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো বর্তমানে প্রচলিত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট MRP নবায়ন বা রিনিউ’র নিয়ম নিয়ে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে রিনিউ করার নিয়ম
মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে রিনিউ করার জন্য প্রথমে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্টস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে ডাউনলোড অপশনের DIP Form 2 তে ক্লিক করলে ফরম ডাউনলোড হবে। ফরমটি পেতে এখানে ক্লিক করুন।
এরপর ফরমটি পূরণ করার পালা। এক্ষেত্রে দু’টি ফরম নিয়ে একটি ফরমে খসড়া লিখে পরে ফাইনালভাবে আরেকটি ফরমে লেখা ভালো। এতে প্রথম ফরমে কাটাকাটি হলেও ফাইনাল ফরমে কাটাকাটি হবে না।
এবার ওই ফরমে প্রথমে ‘বিভাগীয়/ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/মিশনের নাম’ এর ঘরে যে পাসপোর্ট অফিস থেকে রিনিউ করতে চান, সেই অফিসের নাম লিখুন। এখন দেশের প্রায় প্রত্যেক জেলায় পাসপোর্ট অফিস আছে। নিজ জেলা থেকেও রিনিউ করতে পারেন। নাহলে বর্তমান ঠিকানা যে পাসপোর্ট অফিসের আওতায় পড়েছে সেখানকার অফিসের নাম লিখুন।
আবেদনকারীর নাম (বাংলায়), এই ঘরে বাংলায় আপনার নাম লিখুন। আবেদনকারীর নাম (ইংরেজিতে) এই ঘরে ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটারে নিজের নাম লিখতে হবে।
‘গৃহীত পাসপোর্টের তথ্য’ এই ঘরে আগের পাসপোর্টের তথ্য লিখতে হবে। এজন্য প্রথমে ‘পাসপোর্ট নম্বর’ এর ঘরে পূর্ববর্তী পাসপোর্টের নম্বর লিখুন। ‘ইস্যুর স্থান Place of Issue’র ঘরে যেখান থেকে আগের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে সেই স্থানের নাম লিখতে হবে। যেমন: DIP/DHAKA. এই লেখাটা পূর্ববর্তী পাসপোর্টে দেয়া আছে। সেখান থেকে দেখে লিখতে হবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখের ঘরে Date of Expiry বা আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ লিখতে হবে। আর ‘ইস্যুর তারিখ’ ঘরে পূর্ববর্তী পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ লিখতে হবে।
এসব তথ্য আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্টে দেয়া আছে। সেখান থেকে দেখে প্রয়োজন অনুযায়ী লিখতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত টাকা লাগে?
রিনিউ ফরম লেখা হয়ে গেলে টাকা জমা দেওয়ার জন্য চলে যাবেন ব্যাংকে। ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংকে Passport Fee জমা নেওয়া হয়। এছাড়া সোনালী ব্যাংকে অনলাইন ছাড়াও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়া যাবে। এসব ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার কথা বললেই তারা টাকা জমার স্লিপ দিবে। সেই স্লিপ পূরণ করে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য কত টাকা জমা দিতে হবে? মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর জন্য এখনও পর্যন্ত নির্ধারিত ফি দুই ধরণের। এক. সাধারণ – ৩৪৫০ (তিন হাজার চারশত পঞ্চাশ টাকা), দুই. জরুরি – ৬৯০০ (ছয় হাজার নয়শত টাকা)। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে প্রতি বছরের জন্য ৩৪৫ টাকা করে জরিমানা বা বাড়তি ফি যোগ হবে।
রিনিউ ফি জমা দেয়ার পর কাজ কী?
ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিস থেকে একটা রশিদ দেওয়া হবে। ওই রিসিট হাতে পাওয়ার পর পাসপোর্ট রিনিউ ফরমে ‘ফি পদ্রান সংক্রান্ত তথ্য’ লিখতে হবে। পাসপোর্ট রিনিউ ফরমের এই ঘরে প্রথমেই রয়েছে ‘ফির পরিমাণ’। ব্যাংকে আপনি যত টাকা জমা দিয়েছেন সেই টাকার পরিমাণ এখানে লিখতে হবে। ‘ব্যাংক/মিশনের নাম’ এর ঘরে যে ব্যাংক বা বিদেশি মিশনে আপনি টাকা জমা দিয়েছেন সেই ব্যাংক/মিশনের নাম লিখতে হবে। ‘শাখা’র ঘরে ব্যাংকের যে শাখায় টাকা জমা দিয়েছেন সেই শাখার নাম লিখতে হবে। এরপর রশিদ নং এবং যে তারিখে টাকা জমা দিয়েছেন সেই তারিখ নির্ধারিত ঘরে লিখুন।
‘চাহিত সংশোধন Expected Correction’ ঘর আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে যদি আগের পাসপোর্টের কোন তথ্য আপনি পরিবর্তন করতে চান। যেমন ধরুন: আপনার আগের পাসপোর্টে আপনার নামের বানান ভুল আছে, এখন নতুন পাসপোর্টে আপনি নামের বানান ঠিক করতে চান। তাহলে ‘পাসপোর্টে বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্য’ ঘরে ভুল যে তথ্য আছে অর্থাৎ আগের পাসপোর্টের তথ্য লিখতে হবে। আর ‘প্রত্যাশিত পরিবর্তন/সংশোধন’ ঘরে এখন যেভাবে চান সেই নতুন তথ্য লিখতে হবে। একইভাবে বাবা-মায়ের নামে ভুল থাকলেও এনআইডি অনুযায়ী ঠিক করা যাবে। তবে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন খুব ঝামেলার বিষয়। এক্ষেত্রে নতুনভাবে স্থায়ী ঠিকানা ভেরিফিকেশন হবে। তাই এ ঝামেলায় না যাওয়াই ভালো।
Passport Renew এর জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে
পূর্ববর্তী পাসপোর্টের সাথে যদি নতুন পাসপোর্টের সব তথ্য ঠিক থাকে অর্থাৎ কোনো ধরণের পরিবর্তন না হয়, সেক্ষেত্রে লাগবে: পূরণকৃত রিনিউ ফরম, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি, ব্যাংকে ফি জমা স্লিপের মূল কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি ১ কপি, মূল পাসপোর্ট দেখাতে হবে এজন্য মূল পাসপোর্ট সাথে রাখতে হবে।
আপনার বর্তমান ঠিকানা যদি চেঞ্জ হয় (অনেক ক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা ভাড়া বাসা, এজন্য পরিবর্তন হয়), তাহলে বর্তমান বাসার ভাড়া পরিশোধের মূল রিসিট, বিদ্যুত বা গ্যাস বিলের সত্যায়িত ফটোকপি, চাকরি করলে অফিস আইডি কার্ডের কপি, স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের সত্যায়িত কপি, আর ব্যবসা করলে টিন সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি।
এবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে আপনার পূরণকৃত ফরমটি এনেরোলমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসের এনরোলমেন্ট কাউন্টারে জমা দিতে পারেন। রিনিউ ফরম জমা নেয়ার পর আপনাকে নতুন পাসপোর্ট কবে দেয়া হতে পারে, এমন একটা সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে একটা স্লিপ দেওয়া হবে। ওই স্লিপের তারিখ অনুযায়ী বা স্লিপে দেওয়া তারিখের কয়েকদিন পর পাসপোর্ট অফিসের ডেলিভারি কাউন্টারে গিয়ে স্লিপ দেখিয়ে নতুন পাসপোর্ট নিয়ে আসতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত হেল্প কোথায় পাবেন?
এরপরও যদি কোনো কারণে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কিছু জানা দরকার হয়, তাহলে ফেসবুকে ওভেন্ডা ট্রাভেল গ্রুপে যোগাযোগ করতে পারেন। এই ফেসবুক গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের যেকোন প্রকৃত নাগরিককে ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব ধরণের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য বা যেকোন ধরণের সহায়তা লাগলেও এখানে যোগাযোগ করতে পারেন।