নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতন এবং এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আরেক আসামি দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ‘বাদলকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে আর দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডের একটি বাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।’
গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল রাতে ৯ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। এর আগে বিকেলে আসামি আবদুর রহিমকে আটক করা হয়েছিল। এরপর মামলা করা হলে গতকাল রাতে আসামি রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরই মধ্যে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে এসেছে পুলিশ।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন জানান, এলাকার কয়েকজন বখাটে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এরই মধ্যে এসপি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খানের নেতৃত্বে আরেকটি তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাসায় ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল রোববার গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিওচিত্রে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তার মুখমণ্ডলে উপর্যুপরি লাথি ও বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায়। এ সময় গৃহবধূ হামলাকারীদের বহুবার পায়ে ধরে এবং বাবা বাবা বলে ডাকলেও নির্যাতন বন্ধ রাখা হয়নি। বরং তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ সব স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। তারা এ সময় তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকার বাদল, কালাম, দেলোয়ারসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে এলাকার একদল বখাটে ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে। এভাবে তারা আরো কয়েকবার তাকে কুপ্রস্তাব দেয় বলে গৃহবধূ জানান। পরে বখাটেরা শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কোনো একসময়ে তাকে বেদম মারধর করে ভিডিও ধারণ করে। এভাবে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তারা গৃহবধূকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আবারও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গতকাল রোববার তারা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, ওই গৃহবধূর সঙ্গে তার স্বামীর দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না। তবে সম্প্রতি স্বামী তার কাছে ফিরে আসেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এসপি আলমগীর হোসেনের নজরে এলে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ নির্যাতিতাকে তার বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে। তিনি পুলিশকে জানান, ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এ ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়।’ তবে সঠিক তারিখ তিনি বলতে পারেননি।’