ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামনুুর রশিদ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন।
ওই মামলায় মৃত্যৃদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলো: সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নুসরাতের পরিবার দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছে। রায়ের পর নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি করেছে পরিবার।
আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেছেন: আসামিরা যে অপরাধ করেছে তার জন্য মৃত্যুদণ্ডই তাদের সবার প্রাপ্য। এছাড়া এই হত্যার ঘটনার পেছনের বিভিন্ন তথ্য বের করে আনার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান বিচারক।
নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন তার মা। সেই ঘটনায় ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় অধ্যক্ষকে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৬ এপ্রিল অধ্যক্ষের লোকজন পরীক্ষার হল থেকে ডেকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
এই ঘটনায় সোনাগাজী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নুসরাতের বড় ভাই। এরপর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়। অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্ত কর্মকর্তা।
হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয় ১২ আসামি। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। আলোচিত এই রায়কে কেন্দ্র করে নুসরাতের বাড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী সোনাগাজী মডেল থানার এএসআই দিদার হোসেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত এ মামলার রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। রায়ের মধ্য দিয়ে ৭ মাসের মধ্যেই আলোচিত এই মামলাটির বিচারকাজ শেষ হলো।
অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিষয়ে নুসরাতের অভিযোগ গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনেরও বিচার চলছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।