আগামী ৩১শে অগাস্ট এ ছুটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার ব্যাপারে অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের দিক থেকে মতামত আসছিলো।এর আগে বাংলাদেশে মার্চ মাসের আট তারিখে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবার পর ১৬ই মার্চ সরকার ঘোষণা দেয়, ১৭ই মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও তখন স্থগিত করা হয়।পরে সরকার যখন প্রথম দফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, তখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ওই সময় পর্যন্ত সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়।
এরপর দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং সবশেষ এ ছুটি ৩১শে অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো।
তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য 'আমার ঘরে আমার স্কুল' শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস চলছে।অপরদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য 'ঘরে বসে শিখি' শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৪০৮২ জন। আর এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন মোট ৩ লাখ ২ হাজার ১৪৭ জন।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেছেন যে , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।এছাড়া, পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি পরীক্ষা সম্পর্কিত প্রস্তাবনা তৈরি করে তা বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বুধবার তিনি ঢাকার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এবছর কেন্দ্রীয়ভাবে পিইসি ও এবতেদায়ী পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বা পিইসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে নেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
"আগে যেমন একটা জায়গায় পরীক্ষাটা হতো - কেন্দ্রভিত্তিক, এটা না করে সেটা স্ব স্ব বিদ্যালয়ে নেয়ার চিন্তা করছি। যাতে জমায়েতটা বেশি না হয়, আমাদের ছেলেমেয়েরা আক্রান্ত না হয়, সেটির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।"
প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০০৯ সাল থেকে অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
মিস্টার হোসেন বলেন, "আমাদের পরিকল্পনাগুলো পাঠিয়েছি (প্রধানমন্ত্রীর কাছে)। এ বিষয়ে চূড়ান্ত যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটি মেনে চলা হবে।" দুই-এক দিনের মধ্যে এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠান খুললে সেগুলো মেনে চলতে হবে বলে জানান জাকির হোসেন।
যেসব নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে
স্কুলের আঙিনা সামাজিকতা শেখার অন্যতম জায়গা।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো শুরু করেন অভিভাবকেরা।এরপর গত ১৬ই মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে সরকার।
তবে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বড় রকমের ক্ষতি হচ্ছে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়, সে সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সরকার।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলছেন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পাঠদান শুরু করার বিষয়ে ১৫-১৬টির মতো খসড়া নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে এবং বিদ্যালয় খুললে তাদের এগুলো পালন করতে হবে।
এসব নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে:
১. ক্লাস শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। যখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নোংরা হয়ে গেছে। সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য আগেই খুলে দেয়া হবে।"
২. স্কুলের কক্ষে প্রবেশের আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট স্কুল কমিটির। যেসব স্কুলে টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই, সেখানে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৩. সব সময় সব শিক্ষার্থীদেরকে মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজেদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীসহ সবার শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করানো হবে। কোন ধরণের জটলা করার সুযোগ দেয়া হবে না।
৫. পাঠ্যক্রম আগের মতোই থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শ্রেণীকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুলের অবকাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় রেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করবে।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে কোন দিন কোন ক্লাস হবে, সেটি নির্ধারণ করে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে।
৬. স্কুলে থাকা শিক্ষার্থীদের কারো মধ্যে হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ দেখা গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তা নেবে। পাশাপাশি স্কুলে জরুরি সেবার মোবাইল নম্বর ঝুলিয়ে রাখা হবে। উপজেলা পর্যায়ে তথ্যকেন্দ্র থাকবে।
৭. সংক্রমণের উপর স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নির্ভর করবে। সরকার যদি কোন এলাকাকে রেডজোন ঘোষণা করে, তাহলে রেডজোনে স্কুল খুলবে না। স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় রেডজোন ঘোষণা করা হলে স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, "স্কুল খোলার পর করণীয় বিষয়ক নির্দেশনাটি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।"
তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন - এগুলো নজরদারি করবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে যা যা পদক্ষেপ দরকার, তার সবগুলোই নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার কথা জানানো হয় মার্চ মাসের আট তারিখে। এরপর প্রথম দফায় ১৭ই মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়।তবে এর আগেই ঢাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত