
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ‘ভেটো’ (আপত্তি) ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
‘ক্যান্টনমেন্টের ইন্টারভেনশনের ট্রেইলর-১’ শীর্ষক ২৮ সেকেন্ডের এক ভিডিও বার্তায় এমনটা বলতে দেখা যায় আসিফ মাহমুদকে। ভিডিওটি আজ শুক্রবার নিজের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। ভিডিওটি ১৫ মার্চ ধারণ করা হয়েছে বলে ওই পোস্টার মন্তব্য ঘরে জানান তিনি।
ভিডিওতে আসিফ বলেন, ‘সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা (আপত্তি) ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? হোয়াই নট এনি আদার পারসন (অন্য কেউ কেন নয়)? ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিক্টেড পারসন (দণ্ডিত ব্যক্তি)। কনভিক্টেড পারসন কীভাবে আসলে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে।’
আওয়ামী লীগকে একটা লোক একেবারেই দেখতে পারছে না, এবং বাংলাদেশে তো আল্টিমেটলি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এই ৩০-৪০ শতাংশের মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে কি একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত?—সেনাপ্রধান এমন মন্তব্য করেন বলে ভিডিওতে যোগ করেন উপদেষ্টা আসিফ।
ভিডিওতে আসিফ আরও বলেন, সেনাপ্রধান শেষে আমাদেরকে বলেছিলেন তিনি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ অবিলম্বে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার দিবাগত রাতে (২১ মার্চ) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নাই, বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।
তিনি লেখেন: ‘১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২:৩০। কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
‘আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০-এ। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়—ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লেখেন: ‘আমাদেরকে আরো বলা হয়—”রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। ‘ হাসনাত বলেন, তারা তৎক্ষণাৎ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করতে বলেন।
এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং “আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক”।’
হাসনাত আরও লেখেন: ‘আলোচনার এক পর্যায় বলি—যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।”
‘উত্তরে বলি, “আওয়ামীলীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’ মিটিং অসমাপ্ত রেখেই তাদের চলে আসতে হয় বলে উল্লেখ করেন হাসনাত। হাসনাত আবদুল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও তাদের ওপর নানা ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে।
‘আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।’ হাসনাত আরও বলেন, এখনও তিনি নির্দিষ্ট মহলের চাপকে অস্বীকার করে যাচ্ছেন।
এনসিপি নেতা লেখেন, ‘এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে, হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারব।’