ঠাকুরগাঁওয়ে অক্সিজেন থেরাপি সরঞ্জামাদি সরবরাহে “টাঙ্গন নদীর পাড়ে শ্বাস নিতে চাই একসাথে”

10

বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি বলেই আমাদের জীবনস্পন্দন এখনও স্বাভাবিক আছে।এই পৃথিবীর হাসি-খেলা, আনন্দ-গান সবকিছুই এখনও আছে আশ্চর্য রমণীয়। কিন্তু ভাবুন তো,এই শ্বাস না নিতে পারলে কি হবে আমাদের দশা? আনন্দময় এই ধরায় আমরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বো। প্রাণবায়ু নিঃশেষিত হয়ে ঢলে পড়বো মৃত্যুর কোলে। আজ এই সময়ে কোভিড-১৯ এর কবলে পড়ে বিশ্বময় সকলেই শ্বাস নিতে না পারার এক ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।

ঠিক এই সময়েই আমাদের প্রিয় শহর ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু উদ্যোগী তরুণ এগিয়ে এসেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মধারায় উজ্জীবিত হয়ে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের যে সর্বশেষ পরিণতি শ্বাসকষ্ট তার চিকিৎসায় সহায়তা দানের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর এক চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা আমাদের চিকিৎসকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার যে বিরাট চ্যালেঞ্জ পৃথিবীব্যাপী সবাইকে শঙ্কিত করে তুলেছে তাকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার এক প্রত্যয় তারা ছড়িয়ে দিয়েছে প্রিয় স্বদেশের এই প্রত্যন্ত জনপদে।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট্ট জনপদ ঠাকুরগাঁও। চিকিৎসাসেবায় এখনও এখানে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। চিকিৎসকের অপ্রতুলতাসহ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা বা চিকিৎসা সেবা দানের ব্যবস্থা নেই। নেই আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। তার পরেও সরকার তার সীমিত সামর্থ্যে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো এই ঠাকুরগাঁওয়েও সরকারের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা। আর এ ব্যাপারে সরকারকে সহায়তা দানের উদ্দেশে ঠাকুরগাঁও শহরের কিছু তরুণ “টাঙ্গন নদীর পাড়ে শ্বাস নিতে চাই একসাথে” নামের একটি প্রকল্পের আওতায় সরকারি হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন থেরাপি প্রদান সহায়তাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান করছে।

ইতোমধ্যে তারা ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০০ নন রি-ব্রিদার মাস্ক প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার বা কনসেন্ট্রেটর থেকে কোভিড ও নন কোভিড রোগীকে অক্সিজেন থেরাপি দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও তারা ইমপ্রেস গ্রুপের সহায়তায় ১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ১০ লিটার/মিনিট ক্যাপাসিটির অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরও প্রদান করেছে। যা দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ জন রোগীকে একসাথে ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজন থেরাপি দেওয়া সম্ভব হবে। এই অক্সিজেন কনসেন্ট্রটর হল এমন এমন একটি যন্ত্র যা বিদ্যুৎ এর সহায়তায় পরিবেশ থেকে বাতাস নিয়ে তা থেকে শুধু অক্সিজেন বের করে নিয়ে বিশুদ্ধ মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন রোগীকে সরবরাহ করতে পারে। সিলিন্ডারের মতো এর শেষ হওয়ার ভয় নেই কিংবা রিফিলও করার প্রয়োজন নেই। জানা গেছে এই অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে এর আগে একটিও ছিলনা। বাংলাদেশের খুব কম হাসপাতালেই এই অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর রয়েছে। বলা যেতে পারে এই তরুণদের ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল অক্সিজেন থেরাপির আধুনিক সরঞ্জামে সমৃদ্ধ হলো।

এদিকে আরো একটি অক্সিজেন সরঞ্জাম HFNC (High Flow Nasal Cannula )Machine ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে দান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে এই তরুণরা প্রিয়দেশ কে জানান। তারা বলেন যার মূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা ।এই মেশিন দিয়ে অনেক উচ্চ ফ্লোতে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। এই যন্ত্র ব্যবহার করলে রোগীকে আর আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এটি সরবরাহের জন্য তারা ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে একটা আশাব্যঞ্জক সংবাদ পাওয়া যাবে। আর তখন ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালকে আরও একটি উন্নত আধুনিক অক্সিজেন সরঞ্জামে সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে ।

গুনিজনেরা প্রিয়দেশ কে জানান যে, এই মহামারীর দুসময়ে আমাদের সন্তানেরা যারা এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে তারা সকলেই অতি মানবিক দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে।

“টাঙ্গন নদীর পাড়ে শ্বাস নিতে চাই একসাথে” নামের একটি প্রকল্পের সকলেই ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে অধ্যায়নরত রয়েছে।