জাতি হিসেবে ইহুদীরা কেন এত বুদ্ধিমান

(মূল লেখক:- ডঃ স্টিফেন কার লিওন)

অনুবাদকঃ আসিফ ইকবাল তারেক।

সম্পাদনা:জিয়াউদ্দীন চৌ: (জেড সেলিম)

আমি মূল লেখাটির ভাবার্থ যথাসম্ভব সঠিক রেখে অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি যদিও অনুবাদের কারনে কিছু কিছু যায়গায় কিছু শব্দের এদিক সেদিক হয়েছে।মেধা একটি সম্পদ, আর সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলা সংস্কৃতির একটি অংশ হতে পারে। বিশেষ করে যখন কোনো সমাজে বা রাষ্ট্রে মেধাবী মানুষদের সংখ্যা বেশি থাকে, তখন তাদের মেধাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সেই সমাজ বা রাষ্ট্র উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। এই মেধাশক্তির প্রয়োগ এককভাবে বা সমন্বিতভাবে হতে পারে। অনেকে ভৌগলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে মেধার ভিন্নতার বিষয়টি বলে থাকলেও সেটি যৌক্তিক নয়। বরং মেধা বিকাশের জন্য একটি পরিকল্পিত পরিবেশ ও ভাবনার প্রয়োজন হয়। মেধার প্রকাশ ঘটে বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। আবার এই বুদ্ধিমত্তা কেবল জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতিকেই বুঝায় না, এর সাথে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৌশলগত পরিকল্পনাকেও বুঝায়।

“কেনো ইহুদীরা এত বুদ্ধিমান হয়?” ইসরাইলের কয়েকটি হাসপাতালে তিন বছর মধ্যবর্তীকালীন কাজ করার কারনেই বিষয়টি নিয়ে গবেষনা করার চিন্তা আমার মাথায় আসে।

এতে অমত করার কোনই সুযোগ নেই যে, ইহুদীরা ইন্জিনিয়ারিং, সংগীত, জ্ঞ্যান বিজ্ঞান সহ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে এবং বিশেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে। প্রসাধনী, খাদ্য, অস্ত্র, ফ্যাশন, ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি ইত্যাদি সহ (হলিউড) পৃথিবীর প্রায় সত্তর ভাগের কাছাকাছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এদের দখলে।

দ্বিতীয় বছর আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া ফেরত যাচ্ছিলাম তখন এই চিন্তা আমার মাথায় আসে যে, স্রষ্টা কেনো তাদেরকে এই বিশেষ ক্ষমতা(বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এটা কি নিতান্তই কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নাকি ব্যাপারটা মনুষ্যসৃষ্ট? ফ্যাক্টরি থেকে যেমন বিভিন্ন জিনিস বানানো যায় তেমন করে কি বুদ্ধিমান ইহুদী বানানো সম্ভব? সকল তথ্য উপাত্ত সঠিক ভাবে সংগ্রহ করে আমার গবেষনা শেষ করতে প্রায় আট বছর সময় লেগে যায়, যেমন তাদের খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি ইত্যাদি এবং পরবর্তীতে এসব আমি অন্যান্য জাতির সাথে তুলনা করব।

প্রথমেই শুরু করা যাক মহিলাদের গর্ভাবস্থার প্রাকপ্রস্তুতি দিয়ে। ইস্রাইলে প্রথমেই যে জিনিসটা আমার নজড়ে আসে সেটা হচ্ছে গর্ভবতী মায়েরা সবসময় গান বাজনা এবং পিয়ানো বাজাবে এবং তাদের স্বামীদেরকে নিয়ে গানিতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে। গর্ভবতী মহিলারা সবসময় তাদের সাথে গনিতের বই সাথে নিয়ে ঘুরে যেটা দেখে আমি সত্যিকার অর্থেই খুব আশ্চার্যিত হয়েছিলাম। এমনকি আমি নিজেও কয়েকবার তাদের গনিতের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছিলাম। আমি একবার একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এটা কি তুমি তোমার গর্ভের সন্তানের জন্য করছো? তখন সে উত্তর দিয়েছিলো হ্যা এটা আমরা করি যাতে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থা থেকেই প্রশিক্ষন নিতে পারে এবং পরবর্তীতে জন্মের পর আরো বেশি মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। বাচ্চা প্রসবের আগ পর্যন্ত তারা তাদের এই গানিতিক সমস্যার সমাধান চালিয়ে যায়।

এর পরেই যে জিনিসটি আমি পর্যবেক্ষন করি সেটি হচ্ছে তাদের খাদ্যাভাস। গর্ভবতী মায়েরা আলমন্ড খেজুড় আর দুধ খেতে খুব ভালোবাসে। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে রুটি এবং মাছ(মাথা ছাড়া), আলমন্ড এবং অন্যান্য বাদাম যুক্ত সালাদ। তারা বিশ্বাস করে যে মাছ হচ্ছে মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ করে অপর দিকে মাছের মাথা মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের কড লিভার খাওয়া ইহুদী সংস্কৃতির একটি অংশ।

আমি যখন রাতের খাবারের দাওয়াতে অংশ নিতাম তখন দেখতাম তারা সবসময় মাছ খেতে খুব পছন্দ করত এবং মাংশ পরিত্যাগ করত। তাদের বিশ্বাসমতে মাছ এবং মাংশ দুটি একসাথে খেলে তা শরিরের কোনো কাজে লাগে না। অপর দিকে সালাদ এবং বাদাম তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকবে, বিশেষ করে আলমন্ড।

তারা যে কোনো প্রধান আহারের আগে ফল খাবে। তারা বিশ্বাস করে যে যদি প্রধান আহারের পরে ফল খাওয়া হয় তবে তা নিদ্রার উদ্রেগ ঘটাবে যা পাঠ গ্রহনের ক্ষেত্রে বাধার কারন হয়ে দাড়াবে।

ইস্রাইলে ধুমপান করা নিষিদ্ধ। যদি আপনি তাদের বাসার অতিথি হয়ে থাকেন তবে বাসার ভিতরে ধুমপান করা থেকে বিরত থাকবেন নাহলে তারা খুব বিনিতভাবে তাদের বাসার বাইরে গিয়ে ধুমপান করবার অনুরোধ জানাবে। ইসরাইলী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, ধুমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংশ করে দেয় এবং শরীলের জ্বীন এবং ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে বংশপরম্পরায় ত্রুটিযুক্ত মস্তিষ্কের কোষযুক্ত বাচ্চা জন্মগ্রহন করবে।(এখানে একটা জিনিস খেয়াল করবেন যে, পৃথিবীর বড় বড় সব সিগেরেটের কম্পানিগুলো কাদের সেটা আপনারা আশা করি ভালো করেই জানেন…..)

বাচ্চারা কি খাবার খাবে সেটা সবসময় তাদের পিতামাতা ঠিক করে দেয়। প্রথমে ফল খাবে এরপর প্রধান খাবার খাবে যেমন রুটি মাছ এর পর কড লিভারের তেল খাবে। আমার দেখা মতে প্রত্যেকটি ইহুদী বাচ্চারই সাধারনত তিনটি ভাষার উপর দখল থাকে – হিব্রু, আরবী এবং ইংরেজী। শিশুকাল থেকেই প্রত্যেকটি বাচ্চাকে ভায়োলিন এবং পিয়ানো বাজানোর প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।

তারা বিশ্বাস করে এতে করে তাদের আইকিউ লেভেল এর বৃদ্ধি ঘটে এবং বাচ্চারা মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠে। জিউস বিজ্ঞানীদের মতে, সঙ্গীতের কম্পন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে। একারনেই ইহুদীদের মাঝে এত মেধাবী মানুষ দেখা যায়।

ক্লাশ এক থেকে ছয় পর্যন্ত তাদেরকে গনিত এবং ব্যাবসাশিক্ষা শিখানো হয়। বিজ্ঞান তাদের এক নম্বর পছন্দের বিষয়। ইহুদি বাচ্চারা কিছু বিশেষ ক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে যেমন, দৌড়, ধনুবিদ্যা এবং শুটিং। তারা মনে করে শুটিং এবং ধনুবিদ্যা তাদের মস্তিষ্ক্যকে সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শিক্ষার উপর বিশেষ জোড় প্রদান করা হয়। এসময় তারা বিভিন্ন জিনিস বানানোর চেষ্টা করে থাকে এর মধ্যে সবধরনের প্রযেক্ট থাকে। যদিও তাদের বানানো কিছু কিছু জিনিস অনেক হাস্যকর এবং ব্যবহার অযোগ্য লাগতে পারে। কিন্তু সব কিছুতে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া হয় বিশেষ করে যদি সেটা হয় যুদ্ধোপকরন, ঔষধ কিংব যন্ত্রবিজ্ঞান। যে সকল প্রকল্প বা ধারনাগুলো সফলতা পায় সেগুলোকে উচ্চবিদ্যাপিঠগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরো ভালো ভাবে গবেষনা করবার জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে ব্যাবসা শিক্ষা অনুষদকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যাবসা শিক্ষার সকল ছাত্র ছাত্রীদের একটি করে প্রজেক্ট দেওয়া হয় এবং তারা শুধু মাত্র পাস করতে পারবে যদি তাদের গ্রুপ (প্রতি গ্রুপে আনুমানিক ১০জন) সেই প্রজেক্ট থেকে ইউএসডি এক মিলিয়ন ডলার লাভ করতে পারে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, এটাই বাস্তবতা। এবং এই কারনে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইহুদীদের দখলে।

আপনারা কি কখনো ইহুদীদের প্রার্থনা করতে দেখেছেন? তারা প্রার্থনা করবার সময় সবসময় তাদের মাথা ঝাকায়। তারা বিশ্বাস করে তাদের এই কার্যকলাপ তাদের মস্তিষ্কে আরো অধিক পরিমান অক্সিজেন সরবরাহ করে। ( একই জিনিস ইসলাম ধর্মেও দেখা যায়- তারা নামাজের রাকাতের শেষে সালাম ফিরাবার সময় মাথা ডানে এবং বামে ঘুরায়।)

জাপানিজদের দেখলেও দেখতে পাবেন যে তারা তাদের একজন আরেকজনের সাথে দেখা হলে মাথা নামিয়ে সম্মান করে এবং এটা তাদের সংস্কৃতির অংশ। আর জাপানীজদের মাঝেও অনেক মেধাবী দেখা যায়। জাপানিজরা শুশী(তাজা মাছ) খেতে অনেক পছন্দ করে। আপনার কি মনে হয় মাথা নাড়ানো এবং মাছ খাওয়ার ব্যাপারটা কাকতালীয় কোনো ব্যাপার?

আমেরিকায় ইহুদীদের বানিজ্যিক কেন্দ্র নিউইয়র্কে অবস্থিত যেখান থেকে তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। যদি কোনো ইহুদী ব্যাক্তির লাভজনক কোনো আইডিয়া থাকে তাহলে সেই বানিজ্যিক কেন্দ্র হতে সুদবিহীন মূলধনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং সেটাকে সফল করতে সব ধরনের সহযোগীতা প্রদান করে থাকে। একই ভাবে জিউস কম্পানিতে যেমন – স্টারবাক্স, লিভাইস,হলিউড, ওরাকল, কোকাকোলা ডানকিন ডোনাট সহ যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের ফ্রী স্পন্সরশীপ দেওয়া হয়।

নিউইয়র্কে ডাক্তারী পাস করে যে সকল ছাত্রছাত্রী বের হয় তাদেরকে এই বানিজ্যিক কেন্দ্রের আওতায় নিবন্ধন করে বেসরকারী ভাবে প্রেকটিস করতে সুদবিহীন লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখন আমি বুজতে পারছি কেনো নিউইয়র্ক এবং কেলিফোর্নিয়ায় স্প্যাশালিস্ট ডাক্তারের এত অভাব।

আমি আগেও বলেছি ধূমপানের কারনে বংশপরম্পরায় বোকা/গর্ধব এক প্রজন্ম বেড়ে উঠে। ২০০৫ সালে আমি যখন সিন্গাপুর ভ্রমন করেছিলাম সেখানেও আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম ধুমপায়ীরা সমাজ থেকে বিতারিত এবং এক প্যাকেট সিগেরেটের দাম ইউএসডি সাত ডলার। ইসরাইলের মতই ধূমপান সেখানে প্রায় নিষিদ্ধ। সিন্গাপুরের সরকার ব্যবস্থা অনেকটা ইস্রাইলের মতন। আর এ কারনেই সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনেক উচ্চমানের। যদিও দেশটির আয়তন কেবল মাত্র আমেরিকার ম্যানহাটন শহরের সমান।

এবার একটু ইন্দোনেশিয়া দেশটার দিকে তাকান। সেখানে মোটামুটি সবাই ধুমপান করে। এক প্যাকেট সিগেরেটের দাম খুবই সস্তা, মাত্র ইউএসডি ০.৭ সেন্টস। ফলাফল লক্ষাধীক মানুষ কিন্তু জনসংখ্যার খুব কম সংখ্যক মানুষ মেধাবী! দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আপনি হাতে গুনে বলে দিতে পারবেন, এমন কোনো কিছু তারা উৎপন্ন করে না যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে, নিচু মানের প্রযুক্তি, এমনকি তারা তাদের নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথাও বলতে পারে নাহ। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, তাদের দেশের মানুষদের জন্য ইংরেজীতে ভালো দখল নেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এর কারন হচ্ছে ধূমপান করা, বাজে খাদ্যাভাস এবং তাদের সংস্কৃতি।

আমার এই গবেষনায়, ধর্ম এবং জাতি কোনটাই মূল বিষয় বস্তু ছিলো না। কেনো ইহুদীরা এত অহংকারি আর কেনই বা ফেরাউনের সময় থেকে শুরু করে হিটলারের সময় পর্যন্ত এত নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। আমার মতে বিষয়টা রাজনৈতিক এবং টিকে থাকার অদম্য বাসনা।
আমার এই গবেষনার মূল বক্তব্য ছিলো – আমরা কি ইহুদীদের মতন এমন একটা বুদ্ধিমান প্রজন্ম তৈরী করতে পারবো?

উত্তর হ্যা হতে পারে। কিন্তু এর জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে আমাদের বাচ্চা লালন পালনের পদ্ধতিকে। তাহলেই হয়ত তিন প্রজন্ম পর এটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব।

আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন এবং মানবজাতির কল্যানের জন্য একটি বুদ্ধিমান প্রজন্ম গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন, সে আপনি যেই হয়ে থাকেন না কেনো।

ইহুদিরা কেন এত শক্তিশালী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতিতে ইহুদি লবি  অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হয়। ইহুদি লবির প্রধান কাজ হচ্ছে ইসরাইলের তথা ইহুদিদের সর্বাধিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করা। ইসরাইল বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তির প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রে নির্বাসনে থাকা ইসরাইলের পক্ষে এ পর্যায়ে আসা সম্ভব হতো না বলেও অনেকে মনে করে।

ইসরাইলকে বেষ্টন করে আছে ২১টি আরব দেশ, যার অনেকে এর অস্তিত্ব স্বীকার করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদিদের বলা হয় সবচেয়ে শক্তিশালী জনগোষ্ঠী। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভোট ব্যাংকের বড় অংশ ইহুদিরা। যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ অর্থাৎ ছয় থেকে সাত মিলিয়ন ইহুদি, যারা মোট সম্পদের ৫০ শতাংশের মালিক। এই জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ বাস করে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে, যাদের বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ স্টেটস। উল্লেখ্য, ইহুদিদের ভোট সব সময় এক দিকে যায়। যারা তাদের জন্য কাজ করবে তাদের ভোট দেয়। তাই সহজেই ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারে তাদের পছন্দমতো প্রেসিডেন্টকে। আবার এমনও দেখা যায়, যারা ইহুদি নয় কিন্তু ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাদের সংখ্যা ধরলে ইহুদিরাই সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক। এটা হলো অনানুষ্ঠানিক ইহুদি লবি, যা আনুষ্ঠানিক ইহুদি লবির অতিরিক্ত।

১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত দি আমেরিকা-ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের আনুষ্ঠানিক লবি হিসেবে কাজ করে থাকে। ইহুদিদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সংগঠনটি মার্কিন কংগ্রেস ব্যবহার করে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। ফলে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিরোধিতা করলেও অনেক সময় তেমন কোনো কাজ হয় না। বর্তমানে আমেরিকার বিদেশনীতি উপরি উক্ত সংগঠনের দ্বারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রসঙ্গ এলেই সংগঠনটির তৎপরতা বেড়ে যায়। এর বার্ষিক বাজেট ১৩ মিলিয়ন ডলারের মতো। ইহুদি লবির প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অব্যাহতভাবে ইসরাইলকে অন্ধ সমর্থন  জুগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।

এত সব রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও আরো কিছু দিক দিয়ে তারা প্রভাবশালী। পৃথিবীতে এক কোটি ৪০ লাখ ইহুদি। এর মধ্যে ৭০ লাখ আমেরিকায়, ৫০ লাখ এশিয়ায়, ২০ লাখ ইউরোপে এবং এক লাখ আফ্রিকায়। পৃথিবীতে ইহুদি এবং মুসলিমদের অনুপাত ১ঃ১০০। অর্থাৎ একজন ইহুদির বিপরীতে এক শ’ জন মুসলিম। এর পরও মুসলিমদের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ ক্ষমতাবান ইহুদিরা। এর কারণ হিসেবে বলা যায় সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সব দিক দিয়েই ইহুদিরা এগিয়ে।

টাইমস ম্যাগাজিনের জরিপে গত শতাব্দীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব এবং বিজ্ঞানী হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। যিনি একজন ইহুদি। সিগমন ফ্রেইড মনোবিজ্ঞানের জনক। তিনিও একজন ইহুদি। এ ছাড়া আছে অনেক স্বনামধন্য ইহুদি বিজ্ঞানী। যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশাল অবদান রেখেছে। বেনজামিন রুবিন (টিকার সুই), জোনাস স্যাক (প্রথম পোলিও টিকা), অ্যালার্ট সেবিন (রক্তস্বল্পতার প্রতিষেধক), বারুচ ব্লামবার্গ (হেপাটাইটিস-বি)। এ ছাড়া আছেন কার্ল মার্কস, পল স্যামুয়েলসন, মিল্টন ফ্রেইডম্যান, পল এহব্লিচ এবং আরো অনেকে।

নোবেল প্রাইজের দিক দিয়েও এগিয়ে আছে ইহুদিরা।

এলি মেচনিকোফ নোবেল প্রাইজ পান সংক্রামক জীবাণু আবিষ্কার করে। স্ট্যানলি কোহেন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ভ্রণবিদ্যায়। এ ছাড়া যারা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তারা হলেন বার্নার্ড কাটজ, অ্যান্ড্রু স্ক্যালি, অ্যারোন বিক, জর্জ পিনকাস, জর্জ ওয়াল্ড ও উইলিয়াম কোল্ফ প্রমুখ। ১০৫ বছরে এক কোটি ৪০ লাখ ইহুদির মধ্যে ১৫ ডজন নোবেল প্রাইজ পেয়েছে আর মুসলমানরা পেয়েছে মাত্রইতনটি (শান্তি পুরস্কার ছাড়া)।

চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়াও পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিনিয়োগকারীরাও ইহুদি। যারা বিখ্যাত ব্র্যান্ডের মালিক। এর মধ্যে আছে রালফ লরেন (পোলো), লিভাইস স্ট্রস (লিভাইস জিনস), হাওয়ার্ড স্কোল্টজ (স্টার বাকস), সারজি ব্রিন (গুগল), মাইকেল ডেল (ডেল কম্পিউটার), লেরি ইলিসন (ওরাকল), ইড রবিনসন (বার্সকিন অ্যান্ড রবিনসন), বিল রোজেনবার্গ (ডোনকিন ডোনাটস) এবং আরো অনেকে।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদগুলোও দখল করে আছে ইহুদিরা। রিচার্ড লেবিন (ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট), হেনরি কিসিঞ্জার (আমেরিকার মন্ত্রিসভার সদস্য), ক্যাসপার ওয়েনবার্গ (আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী), ম্যাক্সিন লিটভিনোভ (সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী), ডেভিন মার্শাল (সিঙ্গাপুরের প্রথম চিফ মিনিস্টার), ইয়েভগিনি প্রিমাকভ (রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী), জর্জ স্যামপেইও (পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট), জন ডিউচ (সিআইএ’র পরিচালক), ও পিয়েরি মেন্ডেস (ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী) প্রমুখ।

মিডিয়াতেও ছড়িয়ে আছে ইহুদিরা।

বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রিকা, স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলগুলোর উচ্চপদে আসীন আছেন তারা। উলফ ব্লিটজার (সিএনএন), বারবারা ওয়াল্টার (এবিসি নিউজ), ইউগেনা মেয়ার (ওয়াশিংটন পোস্ট), হেনরি গ্রুনওয়াল্ড (টাইম ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর), ক্যাথেরিন গ্রাহাম (ওয়াশিংটন পোস্টের এডিটর), জোসেফ লিলিয়েল্ড (নিউইয়র্ক টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর), ম্যাক্স ফ্রাংকেন (নিউইয়র্ক টাইমস)।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিক দিয়েও এগিয়ে ইহুদিরা।

এদের মধ্যে আছেন স্ট্যানলি মেজোর। যিনি প্রথম ‘মাইক্রো প্রসেসর চিপ’ আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া আছেন লিও জিলার্ড (নিউকিয়ার চেইন রিঅ্যাক্টর), পিটার স্কোল্টজ (অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল), চার্লস এলডার (ট্রাফিক লাইট), বেননো স্ট্রাস (স্টেইনলেস স্টিল), ইমিল বার্লিনার (টেলিফোন মাইক্রোফোন) ও চার্লস জিনসবার্গ (ভিডিও টেপ রেকর্ডার)।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাতাদের তালিকায় প্রথমে আছেন একজন ইহুদি জর্জ সোরোস। তিনি চার বিলিয়ন ডলার দান করেন যা ব্যয় হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ওয়াল্টার এনেনবার্গ। তিনিও একজন ইহুদি। তিনি দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন, যা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক শ’ পাঠাগার। এ দাতাদের তালিকায় আরো আছেন স্পিট, ক্রজেলবার্গ ও বোরিস বেকার।

বিনোদন জগৎ থেকেও তারা দূরে সরে নেই। বলিউডের বিখ্যাত অনেক প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতাও ইহুদি। বলিউডের প্রতিষ্ঠাতাও একজন ইহুদি। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকদের মধ্যে আছেন স্টিফেন স্পিলবার্গ, মেল ব্রুকস, ওলিভার স্টোন, এরোন স্পেলিং, নিল সিমোন, অ্যান্ড্রু ভেইনা, মাইকেল ম্যান, মিলোস, ফরম্যান, ডগলাস ফেয়ার ব্যাংকস ও আইভ্যান রিটম্যান।

কোনো জাতির উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। এ দিক থেকেই বেশি এগিয়ে আছে তারা। আর পেছনে পড়ে আছে মুসলমানরা। সমগ্র পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা ১,৪৭৬,২৩৩,৪৭০ যার মধ্যে এশিয়ায় এক বিলিয়ন, ৪০০ মিলিয়ন আফ্রিকায়, ৪৪ মিলিয়ন ইউরোপে, ৬ মিলিয়ন আমেরিকায়। প্রতি পাঁচজনে একজন মুসলমান। একজন হিন্দুর বিপরীতে দুইজন মুসলমান। একজন বৌদ্ধের বিপরীতে দুইজন মুসলমান। সংখ্যায় মুসলমানরা বেশি হওয়ার পরও কেন এত দুর্বল? এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট ওআইসি এবং অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০০; অর্থাৎ ৩০ লাখ মুসলমানের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য দিকে আমেরিকায় এর সংখ্যা ৫,৭৫৮টি।

২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা তৈরী করে। সে তালিকায় মুসলমান দেশগুলোর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। এ ছাড়া ইউএনডিপি’র সমীক্ষায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলোতে শিক্ষার হার ৯০ শতাংশ এবং ১৫টি উন্নত খ্রিষ্টান রাষ্ট্রের শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ। এ দিক দিয়ে কোনো মুসলমান রাষ্ট্রে শিক্ষার হার ১০০ শতংশ নয়। এই রাষ্ট্রগুলোতে ৯৮ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ মুসলিম রাষ্ট্রে এর হার ৫০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ খ্রিষ্টান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আর মুসলিম বিশ্বে এর হার ২ শতাংশ।

উন্নত মুসলিম রাষ্ট্রে ১০ লাখ মুসলমানের মধ্যে ২৩০ জন বিজ্ঞানী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এর সংখ্যা চার হাজার এবং জাপানে পাঁচ হাজার। পুরো আরব বিশ্বে ৩৫ হাজার গবেষক। এর মধ্যে শুধু আরবে প্রতি ১০ লাখে ৫০ জন আর খ্রিষ্টান রাষ্ট্রগুলোতে এর সংখ্যা এক হাজার। মুসলিম বিশ্ব গবেষণায় এবং উন্নয়নে ব্যয় করে মোট জিডিপি’র ০.২ শতাংশ আর খ্রিষ্টানরা ৫ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়, মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার অভাব অর্থাৎ জ্ঞানচর্চায় অসমর্থ।

জ্ঞান বিকাশের বড় দু’টি মাধ্যম পত্রিকা ও গ্রন্থ। মুসলিম বিশ্বে প্রতি এক হাজার জনে একজন সংবাদপত্র পড়ে আর ১০ লাখ লোকের মধ্যে একজন গ্রন্থ পড়ে। এ থেকে আরো বোঝা যায়, মুসলিমরা জ্ঞানবিকাশে ব্যর্থ।