বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গৃহবধূ উম্মে সালমা হত্যাকাণ্ড নতুন মোড় নিয়েছে। ঘটনার দু’দিন পর তাঁর ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব দাবি করেছিল, তিনিই মাকে হত্যা করেছেন। এবার পুলিশ বলছে, সাদ নয়, সালমাকে হত্যা করেছেন তাদের বাসার ভাড়াটিয়া এক নারীসহ তিনজন।
বৃহস্পতিবার রাতে দুপচাঁচিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন– সালমাদের বাসার দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তার। তিনি দুপচাঁচিয়ার উত্তর সাজাপুর এলাকার আইয়ুব আলীর স্ত্রী। অন্য দু’জন হলেন দুপচাঁচিয়ার তালুশ পশ্চিমপাড়ার সুমন চন্দ্র সরকার এবং গুনাহার এলাকার মোসলেম উদ্দিন। সালমাকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় ছেলে নাজমুস সাকিবের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতে তোলে পুলিশ। হত্যার দায় স্বীকার করে মোসলেম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ তিনজনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। তবে এদিন শুনানি হয়নি। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার জানান, গ্রেপ্তারের পর মাবিয়া, সুমন ও মোসলেম হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তাদের দেখানো জায়গা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত এবং সালমাদের বাসা থেকে খোয়া যাওয়া মালপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, দুপচাঁচিয়ার ডিএস কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী উম্মে সালমা।
বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে তাদের চার তলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে। এই দম্পতির ছোট ছেলে সাদকে নিয়ে নিজেদের বাসার তৃতীয় তলায় থাকতেন। সালমাকে হত্যার সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রথমে মাবিয়াকে আটক করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, চার মাস আগে সালমাদের বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাবিয়া। বিষয়টি টের পেয়ে তাঁকে এক মাস আগে থেকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন আজিজুর ও সালমা। তাঁর কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। এতে মাবিয়া ক্ষুব্ধ হন। সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী সুমন ও মোসলেমকে নিয়ে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার প্রথমে মাবিয়া ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন সুমন ও মোসলেমকে। দু’জন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে সালমাকে অচেতন করেন। হাত দিয়ে নাকমুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার করেন তারা। এর পর নাক, মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে লাশ রেখে সটকে পড়েন।
এদিকে মাকে হত্যার অভিযোগে সোমবার সাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় র্যাব জানিয়েছিল, হাত খরচের টাকা এবং প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে সালমাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখেন এই মাদ্রাসাছাত্র। এর পর তিনি ডাকাতির নাটক সাজান। বড় ভাইয়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার তাঁর রিমান্ড শেষ হবে।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, সালমা হত্যাকাণ্ড ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়ায় সাদকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। আর মামলায় প্রকৃত হত্যাকারীদের সম্পৃক্ত করা হবে।