মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। খাদ্য-বস্ত্রসহ অন্যান্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে। এরমধ্যে অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে দেশে বহু মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে অব্যাহত ব্যয়বৃদ্ধির কারণে মানুষ কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বহুল আলোচিত।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে চিকিৎসা ব্যয় তিনগুণ বেড়েছে। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। জানা যায়, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পারার কারণে অনেকে রোগ পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছে; অনেকের চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বস্তুত চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পারায় দেশের বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষ রোগ-শোক নিয়েই বসবাস করছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে কেবল তখনই তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফিসহ সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, দেশে চিকিৎসাসেবার মূল্য নির্ধারণে জাতীয় মানদণ্ড বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন নেই। এ সুযোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে বহু মানুষের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে; অনেকে ঝুঁকছে ঝাড়ফুঁকের দিকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের স্বাস্থ্য খাত মুখ থুবড়ে পড়বে। জানা যায়, চিকিৎসা ব্যয় কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা মনে করি, চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে যা যা করণীয়, সরকারকে তার সবই করতে হবে। কোনো ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে বাড়তি মুনাফা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
চিকিৎসাপ্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া সরকারের দায়িত্ব। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। তা সম্ভব না হলে দেশে কাক্সিক্ষত মানের জনশক্তি তৈরি হবে না। তবে চিকিৎসা খাত নিয়ে যত পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা হোক না কেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে মানুষ কাক্সিক্ষত সুফল পাবে কি না সন্দেহ। কাজেই এদিকটিতেও দৃষ্টি দিতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত