চাকরি করতে বাঁধা দেওয়ায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

এম.এ. কিবরিয়া, করিমগঞ্জ (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জে বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুরগ্রামের ইন্দুর দাইর এলাকার আশরাফ উদ্দিনের মেয়ে মোছা. জুয়েনা আক্তার পেশায় একজন ডাক্তারে সহকারী। চাকুরির সুবাধে দীর্ঘদিন যাবৎ শহরের নিউটাউন এলাকায় ছোটবোন সানজিদা আক্তার শাম্মীকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন তিনি।

২০২০ গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পড়াশোনাচলাকালীন সময় পরিচয় হয় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল গাফফারের সাথে। সেই কলেজ থেকেই হয় পরিচয়। ধীরে ধীরে সেই পরিচয় সম্পর্কে রূপ নেয়।

গত ২৪ মার্চ ২০২২ সালে জুয়েনা তার জন্মদিনে গাফফারকে নিউটাউনের ভাড়া বাসায় আমন্ত্রণ করে। জুয়েনার আমন্ত্রণে সাড়াদিয়ে গাফফার নিউটাউনের বাসায় আসলে জুয়েনা তাকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু গাফফার তার থেকে সময় চাইলে জুয়েনা সময় না দিয়ে পুলিশ ডেকে গাফফারকে ধরিয়ে দেয়। পুলিশ গাফফারকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়ে গেলে জুয়েনা ও গাফফার তাদের পরিবারকে অবগত না করেই কাজী অফিসে দুজনে বিয়ে করে।

বিয়ের কিছুদিনপর হঠাৎ জুয়েনা তার স্বামীর বাড়ি নান্দাইলের গাংগাইল গেলে গাফফারের পরিবার তাকে বধূ হিসেবে বরণ করে নেয়।

জানা যায়, তাদের বৈবাহিক জীবনের তিনমাস অতিক্রম হওয়ার পর জুয়েনা তার বিয়ের পূর্বের চাকুরি টিকিয়ে রাখতে নান্দাইল থেকে প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ শহরে আসতেন। কিন্তু তার স্বামী চাকুরি করতে নিষেধ করলে দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয় ঝগড়াঝাটির। এক পর্যায়ে রাগের বসে জুয়েনা স্বামীর বাড়ি থেকে নিউটাউনের বাসায় চলে আসলে জুয়েনাকে নিতে গাফফারের পরিবারের লোকজন নিউটাউন আসলে জুয়েনা গাফফারের সাথে সংসার করবেনা বলে জানান এবং সবাইকে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি দেয়।

গাফফার বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য নান্দাইল ও হালিমপুরের গণ্যমান্য লোকজনের সাহায্য নিলে তারাও জুয়েনাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে জুয়েনাকে তার স্বামী গাফফার তালাকের নোটিশ পাঠালে জুয়েনা সেই নোটিশ পেয়ে গাফফারকে আসামি করে পরিবারের  অন্যান্য সদস্যদের নামে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। জুয়েনার এমন আচরণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল হালিমা আইয়ু বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রায়হান  জানান, গাফফার ও জুয়েনার বিয়েটা মূলত একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের থেকে হয়। তাদের বিয়ের বিষয়টি সম্পর্কে দুজনের পরিবারের কেউই জানতো না। হঠাৎ একদিন জুয়েনা গাফফারের বাড়িতে আসলে আমরা গ্রামবাসী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই। ওই বউ কিশোরগঞ্জ শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকুরি করে। তার স্বামী সেই চাকুরি করতে না দেয়ার কারণে দুজনের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়াঝাটি করতো। হঠাৎ একদিন সে বাড়ি থেকে বের হয়ে নান্দাইল থানায় তার স্বামীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করলে বাড়িতে পুলিশ আসে এবং দুজনের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে একটি সমাধান ও হয়। কিন্ত জুয়েনা সেই সমাধান না মেনে গাফফারকে ছেড়ে চলে যায়। আমরা তাকে কয়েকবার আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু জুয়েনা গাফফারের সংসার করবে না বলে আমাদের জানায়। পরবর্তীতে গাফফার জুয়েনাকে ছেড়ে দিলে জুয়েনা ক্ষোভে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করে।

বাজিতপুরের তালুকদার বাবু মিয়া কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইয়াহিয়া বলেন, জুয়েনার বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম। জুয়েনাকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি সংসার করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তিনি তার স্বামীসহ তার পরিবারে লোকজনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জুয়েনার সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি৷