খুনি মাজেদের মরদেহ যেন ভোলায় পাঠানো না হয়: এমপি শাওন

আব্দুর রহমান নোমান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের ফাঁসির পর তার মরদেহ ভোলার মাটিতে না পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

এসময় খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের পাশাপাশি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অন্যান্য খুনিদেরও গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে ফাঁসি কার্যকরের অনুরোধ জানান এই সংসদ সদস্য।

শুক্রবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় খুনি মাজেদের মরদেহের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশদের ২শ’ বছরের গোলামির জিঞ্জির ভাঙতে না ভাঙতেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের বৈষম্যমূলক আচরণ, মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে শুরু করে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে যে মহান নেতা তার যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছিলেন, কারাগারকে যিনি সংসার বানিয়েছিলেন, স্ত্রী-সন্তানদের যিনি সময় না দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনে যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, আমাদের সেই মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদকে গ্রেপ্তারের জন্য আমি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্য, যারা তাকে গ্রেপ্তারে ভূমিকা রেখেছে; দ্বীপজেলা ভোলার ২৫ লাখ মানুষের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।

আমি শুধু একটি কথাই বলবো যে, জাতির পিতা যার জন্ম না হলে আমরা এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না, যার জন্ম না হলে আজ বাংলা ভাষায় মহান সংসদে কথা বলার সুযোগ আমাদের হতো না, যার জন্ম না হলে আমরা বাংলাদেশের সংবিধান পেতাম না, জাতীয় পতাকা পেতাম না, জাতীয় সঙ্গীত পেতাম না, সেই মহান নেতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে হত্যা করেছিল, খন্দকার মোশতাকসহ বিদেশে পলাতক, আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের এই ভোলা জেলারই কুলাঙ্গার ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ গ্রেপ্তার হন, এবং আমরা ভোলাবাসী চাই এই কুলাঙ্গারের ফাঁসির রায় অনতিবিলম্বে কার্যকর করে তার মরদেহ যেন দ্বীপজেলা ভোলায় না পাঠায়। কারণ, ভোলাবাসী এই কুলাঙ্গারের লাশ গ্রহণ করবে না। ভোলার মাটিতে এই কুলাঙ্গারের দাফন হবে না।

আমরা ভোলার ২৫ লক্ষ মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের অনুরোধ, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এখনও জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদেরকে দেশে ফেরত এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পরিপূর্ণতা আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেবেন।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক
সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোক।’’

এমপি শাওনের এমন দাবির পর এ বিষয়ে শনিবার কথা বলেছেন ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল। তিনি খুনি মাজেদের মরদেহ বোরহানউদ্দিনে দাফন করতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন। এমনকি খুনি মাজেদের দাফনের প্রক্রিয়া প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন এমপি মুকুল।

ভোলা- ২ আসনের সাংসদ শনিবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই- খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার মৃতদেহ যেন ভোলায় পাঠানো না হয়। যেহেতু এই খুনির গ্রামের বাাড়ি আমার নির্বাচনী এলাকায়, সেহেতু তার মরদেহ ভোলায় পাঠানো হলে করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে হলেও আমি নিজে তা প্রতিহত করবো।

আমি বেঁচে থাকতে এই ভোলার মাটিতে ঘৃণ্য নরপশু মাজেদকে দাফন করতে দিব না।’’

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদের পৈতৃক বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার। তিনি একইসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে কর্মহীন জেলেদের জন্য আসা ত্রাণের চাল চুরি করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন এই চেয়ারম্যান। তাদের চাল চুরির সংবাদ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে মারধরও করেছেন তারা।

এছাড়া আরও বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর এই খুনির নাতিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। তার দাদার কুকীর্তি জানার পর সেই কমিটি স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে প্রভাবশালীদের তৎপরতায় আবারও সেই কমিটি বহাল করা হয়েছিল।

ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের নাতি বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সেই সাধারণ সম্পাদকের নাম মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাস। তাদের পরিবারের এক নারীও সরকারি চাকরিজীবী। পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরও পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।