কোভিড ১৯ আপডেট: বাংলাদেশ ও বিশ্বের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি

নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩০৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ৪৮ হাজার ছাড়ালো।

বাংলাদেশ

নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩০৭ জন। মোট শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো পৌনে দুই লাখ । ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজারের কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১  জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে এই রোগে মোট ২২৩৮ জনের মৃত্যু হলো।

আর এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৭০৬ জন। ফলে মোট সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৪ হাজার ৫৪৪ জনে।

এদিকে বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ৪৮ হাজার ছাড়ালো।

ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেলফ আইসোলেশনে

একজন করোনাভাইরাস রোগীর সাথে সংস্পর্শে আসার কারণে নিজেকে আলাদা করে রাখছেন ইসরালের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গান্টজ।দেশটিতে সংক্রমণ আগের তুলনায় বাড়ছে।

জাপান

টোকিওতে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ

জাপানের প্রধান শহর টোকিওতে আরো ২২৪ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এর আগে ১৭ই এপ্রিল ২০৬ জন রোগী পাওয়া গিয়েছিল।গত সাত দিন ধরে দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে এটা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মতো নয়।

জাপানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা হয়েছিল। পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় জাপানে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম হয়েছে।

আইভোরি কোস্ট

আইভোরি কোস্টের প্রধানমন্ত্রী আমাদো গন কৌলিবালি কেবিনেট বৈঠক থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মারা গেছেন।৬১ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যু দেশটির নির্বাচন নিয়ে একটা প্রশ্ন তৈরি করেছে।

সম্প্রতি ফ্রান্স থেকে দুই মাস হৃদপিন্ডের চিকিৎসা সেরে ফিরেছেন কৌলিবালি।২০১২ সালে তার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয়।

অষ্ট্রেলিয়া

মেলবোর্নে দ্বিতীয় ধাপে লকডাউন শুরু

আবারো ছোট আকারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার কারণে নতুন করে লকডাউন জারি করা হয়ছে।

মেলবোর্নে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ লকডাউনে আছে।ছয় সপ্তাহ তারা ঘরে থাকবেন যদি না কোনো জরুরী কাজ থাকে।ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সাথে অন্য রাজ্যের সীমানা সিলগালা করা হয়েছে।

অক্সফ্যাম

ভাইরাসের চেয়ে ক্ষুধায় বেশি মানুষ মারা যেতে পারে

বিশ্বে প্রতিদিন ১২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যেতে পারে খাবার না পেয়ে। যা করোনাভাইরাসের চেয়ে বেশি মৃত্যু বয়ে আনবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে অক্সফ্যাম। এই দাতব্য সংস্থাটি বলছে, এখানে চাকরি হারানো, খাবার উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পরিবহনে বাধা নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে আসবে।

খাবার না পেয়ে মারা যেতে পারে মানুষ এমন দশটি দেশ ঘোষণা করেছে অক্সফ্যাম: ইয়েমেন, কঙ্গো, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, পশ্চিম আফ্রিকান সাহেল, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, সুদান এবং হাইতি।

যুক্তরাষ্ট্র

স্কুল খুলতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল খুলতে অস্বীকৃতি জানালে সেসব স্কুলকে অর্থ দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বুধবার এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, স্কুলগুলো চালু করা “পরিবার ও শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি অভিযোগ করেন যে ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে চায়।

আলাদা একটি টুইটে তিনি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ সিডিসির করোনাভাইরাস গাইডলাইনের সমালোচনা করে বলেন, “এগুলো অবাস্তব।”এই টুইটের কয়েক ঘণ্টা পরেই হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সিডিসি নতুন একটি গাইডলাইন প্রকাশ করবে।শিক্ষা খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

জাতীয় শিক্ষা সমিতির প্রেসিডেন্ট লিলি এসকেলসেন গার্সিয়া সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৪৮ ঘণ্টায় যা কিছু বলেছেন সেগুলোর কোনটাই নিরাপদ ও দায়িত্বশীল বক্তব্য নয়।” যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে প্রেসিডেন্ট এককভাবে স্কুলকে দেওয়া কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য বাতিল করতে পারেন না।বেশিরভাগ অর্থ আসেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া হয় বাড়তি কিছু সাহায্য।

যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় ভুল ছিল আর কোথায় ঠিক

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছয় মাস পার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু ছিল এপ্রিলের শেষ দশদিনে। তখন থেকেও আজকের তারিখ পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে প্রায় আড়াই মাস।

কিন্তু সংক্রমণ কমছে না দেশটিতে। চলতি সপ্তাহেই একদিনে ৬০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয় দেশটিতে।পুরো ইউরোপের চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একেকটি অঙ্গরাজ্যে।যুক্তরাষ্ট্রের যেসব জায়গায় ভুল ছিল তার মধ্যে একটি হচ্ছে দ্রুত রাজ্য ভিত্তিক লকডাউন তুলে নেয়া।

টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া ও আরিজোনায় লকডাউন তুলে নেয়ার পর সংক্রমণ বেড়েছে।রবিবারের হিসেব অনুযায়ী টেক্সাসে আট হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।১০০ টি টেস্টের মধ্যে ১৪ জন করে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে।গত দুই সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ায় রোগী বেড়েছে ৯০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত মাস্ক নিয়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন।যার ফলে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম মেনে চলেনি কেউ।তবে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য আছে। এই রাজ্যে ভালো উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।

এপ্রিলের ৮ তারিখ ৭৯৯ জন মারা যান এই রাজ্যে, এখন তা এক অঙ্কে নেমে এসেছে।নিউইয়র্কে এখন প্রতি ১০০ জন টেস্ট করার পর ১.৩৮% পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।এখন পর্যন্ত আমেরিকায় অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। অনেক পূর্ভাবাসে যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা বলা হচ্ছিল সেটা হয়নি এবং আরো উন্নতি হচ্ছে কিছু ক্ষেত্র।

চাকরি হারানোর যে শতকরা হার সেটা ২০ শতাংশ অনুমান করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত এখনসেটা ১১.৪%।বিজ্ঞানের দিক থেকেও অগ্রসর অবস্থানে আছে আমেরিকা। এই দেশটিকে মেডিকেল ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে ভ্যাকসিন তৈরিতে একটা অগ্রসরতা দেখা গেছে।আমেরিকার অন্যতম প্রধান চিকিৎসা বিজ্ঞানী অ্যান্থনি ফাউচি বলছে, যদি দেরিও হয় তবুও ২০২১ সালের মধ্যে আমেরিকায় তৈরি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

এদিকে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে টেক্সাসে।পাঁচ মাস পর কারো মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো আমেরিকার এই রাজ্যে।বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এই ব্যক্তির।১৯৯৩ সালে ৮২ বছর বয়সী এক ব্যক্তির হত্যার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।২৯শে এপ্রিল তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

ভারত

দেশে নতুন সংক্রমণ প্রায় ২৫ হাজার, সুস্থ প্রায় ২০ হাজার

লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। রোজই ২২-২৪ হাজার লোক নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৮৭৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত লক্ষ ৬৭ হাজার ২৯৬ জন।

আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে করোনার জেরে মৃত্যুও ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৮৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ২১ হাজার ১২৯ জনের।

আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। এখনও পর্যন্ত সাড়ে চার লক্ষের বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ আক্রান্তের ৬১ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন।  গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৫৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন। যা ২৪ ঘণ্টার নিরিখে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট চার লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৭৭ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।

৪০% ছাত্র নিয়ে খুলছে হার্ভার্ড ও প্রিন্সটন

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে ফের ক্যাম্পাসের দরজা খোলার কথা ভাবছে হার্ভার্ড এবং প্রিন্সটনের মতো মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তবে প্রতিষ্ঠানের দ্বার খুললেও একসঙ্গে ক্লাসরুমে ফেরা হবে না ছাত্রছাত্রীদের। সোমবার হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্নাতক স্তরে একমাত্র প্রথমবর্ষের পড়ুয়াদের অগ্রাধিকার দিয়ে মোট ৪০% ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। প্রায় একই ঘোষণা করেছে প্রিন্সটনও। একই সঙ্গে ১০% টিউশন-ফি মকুব করার ঘোষণাও করেছেন কর্তৃপক্ষ।

আগামী বেশ কিছু দিনের জন্য অন্তত ক্যাম্পাসে যথাসম্ভব কম সমাগমের দিকেই নজর দিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। হার্ভার্ড যেমন জানিয়ে দিয়েছে, এ বার থেকে সব কোর্সই অনলাইনে পড়ানো হবে। প্রিন্সটনও বেশির ভাগ পঠনপাঠন অনলাইনে করাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার এল. ইসগ্রুবার সোমবার বলেন, ‘‘যেমন তথ্য পাচ্ছি, তাতে আগামী বেশ কয়েকদিন এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে চলতে হবে আমাদের।’’

ক্যাম্পাসে ফেরার পর প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে বলে জানিয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। এ ছাড়াও সিমেস্টার জুড়ে বিশেষ নজর দেওয়া হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপর। সকলে যাতে বিধি মেনে চলেন তার জন্য ক্যাম্পাসে ফেরা-মাত্র সব ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে ‘সোশ্যাল কনট্র্যাক্ট’-এ সই করিয়ে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে প্রিন্সটন। ক্যাম্পাসের ভিতরে সর্বক্ষণ মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ জোর দেওয়া হবে দূরত্ব বিধি মেনে চলার উপরেও। এ দিকে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন,  ছাত্রাবাসের মধ্যেই কোয়ারান্টিনের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা রাখছেন তাঁরা।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ও জানিয়েছে, এই সিমেস্টারে প্রথম বর্ষ ছাড়া অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে ফেরানো হচ্ছে না। পরবর্তী সিমেস্টারে আবার প্রথমবর্ষদের বাদ রেখে ফেরানো হবে বাকিদের।