কোভিড ১৯ আপডেট: বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিস্থিতি

নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৬৮২ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। বিশ্বে এখন ৯৯ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে।বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়ালো।ব্রাজিলে ৫৭ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।যুক্তরাষ্ট্রে রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ

নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৬৮২ জন। মোট শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪৫,৪৮৩ জনে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬৪  জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১,৮৪৭ জন। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬ই জুন। সেদিন ৫৩ জন মারা গিয়েছিলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৮৪২৬টি। এপর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ৭৬৬৪৬০ টি। মোট ৬৬ টি পরীক্ষাগারের ফল পাওয়া গেছে। তবে দুটি বেসরকারি পরীক্ষাগারের ফল পাওয়া যায়নি।তাই ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৯. ৯৮ শতাংশ। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা আরও জানিয়েছেন যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১,৮৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন, ফলে সুস্থ হওয়াদের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৯,৬২৪ জনে।

এদিকে বিশ্বে এখন ৯৯ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে।বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়ালো।ব্রাজিলে ৫৭ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।যুক্তরাষ্ট্রে রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে, নতুন করে কিছু রাজ্যে কড়াকড়ি চলছে।

যুক্তরাজ্য

                           আজ থেকে সব অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বন্ধ থাকবে

যুক্তরাজ্যে মৃত্যুহার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।১৯শে জুন যে সপ্তাহ চলছে সেই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুহার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।পুরো দেশজুড়ে ১ হাজার ৬৮১ জন মারা গেছেন, যা গত পাঁচ বছরের গড় মৃত্যুর চেয় আট জন কম।এই একই সময়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ৮৪৯ জন। যা লকডাউনের প্রথম সপ্তাহের পর সবচেয়ে কম।

যুক্তরাজ্য সরকার লেস্টারে নতুন করে একটা স্থানীয় লকডাউন জারি করেছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ইস্ট মিডল্যান্ড শহর ও এর আশেপাশের এলাকায় আরো কড়াভাবে দৈনন্দ্যিন জীবন তদারকি করা হবে।

আজ থেকে সব অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বন্ধ থাকবে।বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী টার্ম পর্যন্ত আর খুলবে না স্কুল।লেস্টার থেকে বা লেস্টারে আগতদের অপ্রয়োজনীয় কাজে যাওয়া আসা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।আগামী শনিবার থেকে ইংল্যান্ডজুড়ে যে লকডাউন খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটা লেস্টারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র:

আরিজোনার এক্সপ্রেসওয়েতে কোভিড থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এমনভাবে বাড়ছে যে এ পর্যন্ত ১৬টি অঙ্গরাজ্য লকডাউন তুলে নেবার পদক্ষেপ নিয়েও আবার পিছিয়ে এসেছে।সবশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরিজোনা।

আরিজোনার প্রশাসন এর আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড খুলে দেবার কথা জানালেও, সেখানে মাত্র এক দিনে ৩,৮৫৮ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবার পর তারা ‘ইউ-টার্ন’ নিয়েছেন।

রাজ্যের গভর্নর নতুন আদেশ দিয়েছেন যে জুলাইয়ের ২৭ তারিখ পর্যন্ত সব বার, নাইটক্লাব, জিম, সিনেমা এবং ওয়াটার পার্ক বন্ধ রাখা হবে।

এর আগে টেক্সাস, ফ্লোরিডা, কানসাস, ওরেগন, ও নিউ জার্সি সহ বেশ কটি রাজ্য কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাবার পর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করে।

দক্ষিণ কোরিয়া:

দক্ষিণ কোরিয়া করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্থাৎ কোন একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে ওঠার চিন্তাটা আসলে একটা কাল্পনিক ধারণা।

কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (কেসিডিসি) উপপরিচালক কুওন জুন-উক বলছেন,দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা এ সিদ্ধান্তে এসেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ সেদেশে কোভিড সংক্রমণের প্রকৃত হার বের করার জনগণের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে এন্টিবডি টেস্ট করা শুরু করেছে। এতে ৬ হাজার লোকের রক্ত পরীক্ষা করা হবে।

এ পর্যন্ত ১,৫০০ লোকের রক্ত পরীক্ষা করে কর্মকর্তারা দেখেছেন যে তাদের মধ্যে ০.১ শতাংশ লোকের দেহে কোভিড -১৯এর এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। এ থেকে মনে হতে পারে যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ হাজার লোকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেশটিতে মাত্র ১২,৮০০ লোক পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়েছে।তবে কেসিডিসি এটাও বলেছে যে এগুলো তাদের গবেষণার প্রাথমিক ফল মাত্র, এ পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না।

আফগানিস্তান

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করোনাভাইরাস বিপর্যয়।দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটা বিপর্যয় দেখা গিয়েছে।

অক্সিজেন ও অন্যান্য যা কিছু প্রয়োজন হতে পারে তা নিয়ে একটা সংশয় দেখা দিচ্ছে। কাবুলের এক চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন সিলিন্ডার যখন আসে রোগীর আত্মীয়রা রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়।আরেক চিকিৎসক বলেন প্রাইভেট হাসপাতালে নিজের পরিবারের লোকদেরই চিকিৎসা দিতে পারেননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, মহামারির এখনো বাকি আছে, এমনকি সবচেয়ে ভয়াবহ সময়টাই এখনো আসেনি। সংস্থাটির মহাপরিচালক টেদরোস আধানোম ঘেব্রেয়াসুস বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেয় তবে সংক্রমণ বাড়বেই।

১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণ, ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে মৃতের সংখ্যা- এটা আরো দুদিন আগের খবর।এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল বার্তা একই, “পরীক্ষা, ট্রেস, আইসোলেট এবং কোয়ারেন্টিন।”দক্ষিণ আমেরিকায় এখন বাড়ছে সংক্রমণ, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাতেও আঘাত হানছে এই ভাইরাস।

ইউরোপ

পহেলা জুলাই থেকে ইউরোপে যেতে পারবে ১৪ দেশের নাগরিকরা

পহেলা জুলাই থেকে ইউরোপে যেতে পারবে ১৪ দেশের নাগরিকরা।অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া- এরা এই তালিকায় আছে।ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চীনের কথাও বলেছে যদি চীন একই ভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যাত্রীদের যেতে দেয় চীনে।

ইউরোপের ভ্রমণেচ্ছুদের জন্য এখন বাধা নেই, ইউরোপীয়ানরা ইউরোপের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবে।৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরাও ইউরোপীয়দের মতোই ঘুরে বেড়াতে পারবে।

যে ১৪টি দেশ তালিকায় আছে- আলজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, জাপান, মন্টেনেগ্রো, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, রুয়ান্ডা, সার্বিয়া, সাউথ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, উরুগুয়ে।

চীন

শুয়োর থেকে নতুন ভাইরাসের উদ্ভব

চীনের বিজ্ঞানীরা নতুন একটি ভাইরাসের খোঁজ পেয়েছেন। যার দ্বারা ফ্লু জাতীয় রোগ হয় এবং যা মহামারি আকার ধারণ করার সক্ষমতা রাখে।এটা শুয়োর থেকে এসেছে এবং এটার মানবদেহে সংক্রমণ করার সক্ষমতা আছে।

গবেষকরা বলছে এটাও করোনাভাইরাসের মতো নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে এবং মানবদেহে সংক্রমণ হতে পারে। এটা বৈশ্বিক মহামারিও ঘটাতে পারে।যদিও এটা তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা নয়। তবু একটা কড়া নজরদারিতে রাখা হচ্ছে যাতে মানুষের মধ্যে না ছড়ায়।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন ,যেসব ভাইরাসকে আশঙ্কাজনক মনে করছেন তার মধ্যে একটি ফ্লু জাতীয় রোগ ঘটাতে পারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই এটার খোঁজ পেয়েছেন চীনের বিজ্ঞানীরা।

২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বে। মেক্সিকো থেকে শুরু হয় এটি, তবে এর ভয়াবহতা অনুমানের চেয়ে কম ছিল।এর একটা বড় কারণ এটি এমন একটি ভাইরাস যা আগেও মানুষের দেহে এসেছিল এবং মানুষের দেহে একটা ইম্যুনিটি তৈরি হয়ে গেছে।তবে সেই ভাইরাস দমনে একটি ফ্লু ভ্যাকসিনও ব্যবহার করা হচ্ছে।

২০০৯ সালের এই ফ্লু ভাইরাসের সাথে চীনের নতুন ভাইরাসের সাদৃশ্য আছে, তবে কিছু পরিবর্তনও আছে।যদিও এটি এখনো বড় কোনো ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভাব হয়নি, তবু এটা নিয়ে কাজ করা প্রফেসর কিন-চৌ চ্যাং এবং তার সতীর্থরা বলছেন একটা নজর রাখা জরুরি।

ভারত

   ভারতে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।

লাফ দিয়ে দিয়ে বাড়ছে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৯ হাজার ৪৫৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন কোভিডে। যার জেরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল পাঁচ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩১৮ জন। এ ভাবে রোজদিন আক্রান্ত বৃদ্ধি চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞ থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদের।

আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ১৬ হাজার ৪৭৫ জন প্রাণ হারালেন করোনার কারণে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ১০ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ৩ লক্ষ ২১ হাজার ৭২৩ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলেন।