কোভিড ১৯ আপডেট: বাংলাদেশে ও বিশ্ব পরিস্থিতি

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯৪৬ জন।মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন। মারা গেছেন আরো ৩৯ জন।দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৬২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.২৮%। সুস্থ হয়েছেন মোট ৫১৪৯৫ জন । শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থ হয়ে গেছেন ৪০.৬৭%।

এদিকে বিশ্বে এখন ৯৪ লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী আছে। বিশ্বে মারা গেছেন ৪ লাখ ৮২ হাজারের বেশি মানুষ।

বিপর্যস্ত অসংখ্য তরুণ-তরুণী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জ্যোতি বুলবুল বনানীর একটি বাসায় টিউশনি করতেন। এখান থেকেই তার হাতখরচ, পড়াশোনার খরচ উঠে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই তার সেই টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়।

”তিনমাস পড়ানো বন্ধ ছিল। সাধারণ ছুটিতে তো সবকিছুই বন্ধ ছিল, যাতায়াত করাও সম্ভব ছিল না। এখনো বাইরে বের হওয়া, কারো বাসায় যাতায়াত তো ঠিক না।” তিনি বলছেন।

এই মাস থেকে তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছাত্রের অনলাইনে টিউশনি করাতে শুরু করেছেন।

তবে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এমবিএ-র শিক্ষার্থী নিরোধ পাল ততোটা সুবিধা পাননি।

”আমি তিনটা টিউশনি করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।”

”সব সাবজেক্ট তো অনলাইনে ঠিকমতো পড়ানো যায় না। এখন আমি যে কারো বাসায় যাবো, সেটা আমার জন্যেও রিস্ক, তাদের জন্যও রিস্ক। আগে টিউশনি করেই আমার ঢাকায় থাকার খরচ চলে আসতো। এখন সেজন্য বাড়ি থেকে টাকা আনতে হয়। সব মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে আছি।” বলছেন নিরোধ পাল।

তার আশঙ্কা করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হয়তো তিনি আর টিউশনি করাতে পারবেন না।

ব্রিটেন:

বিখ্যাত রয়্যাল মেইল ২ হাজার চাকরি ছাটাই করবে। করোনাভাইরাসের আরো একটি ধাক্কা চাকরির বাজারে। ব্রিটেনের পোস্টাল সার্ভিস প্রতি পাঁচ জন ম্যানেজারের একজনকে ছাটাই করবে। বাজারে যে পরিবর্তন এসেছে তার সাথে মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করছে এই কোম্পানি।প্রায় ৯৭০০ ম্যানেজার আছে এখন। বড় পদেই বেশি লোক ছাটাই হবে।

বিজ্ঞানীরা-বলছেন-এই-টিকা-নিরাপদ-এবং-মানবদেহে-কার্যকর-রোগ-প্রতিরোধী-সাড়া-সৃষ্টি-করছে।

যুক্তরাজ্যে একটি নতুন করোনাভাইরাসের টিকা স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৩০০ জনকে এই টিকা দেয়া হবে।ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রবিন শ্যাটক এবং তার সহকর্মীরা এই পরীক্ষার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।টিকাটি এর আগে প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে ।দেখা গেছে, এটি নিরাপদ এবং মানবদেহে কার্যকর রোগ প্রতিরোধী সাড়া সৃষ্টি করতে পারছে।এ পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হলে অক্টোবর মাসে ৬ হাজার লোকের ওপর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে, এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ টিম আশা করছে ২০২১ সালের প্রথম দিকে যুক্তরাজ্যে সহ বিভিন্ন দেশে এই টিকা বিতরণ করা যাবে।অন্যদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরাও তাদের একটি টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছেন।পৃথিবীর নানা দেশে এখন প্রায় ১২০টি টিকা তৈরির কর্মসূচি চলছে, এবং অনেকগুলো টিকা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

ইউরোপ:

                     স্পেনের একটি স্ট্রবেরি ফার্মে ফল তোলা হচ্ছে
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে দেখা যাচ্ছে যে লকডাউন শিথিল হবার পর নতুনকরে কোথাও কোথাও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটছে।

উত্তর পূর্ব স্পেনে ফলের খামারগুলোতে যারা পাকা ফল তোলেন – তাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের পর চারটি জেলায় লকডাউন বিধিনিষেধ আবার বলবৎ করা হয়েছে।

বলকান অঞ্চলের দেশগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় – ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুনতম সদস্য ক্রোয়েশিয়া ঘোষণা করেছে যে বসনিয়া, কসোভো, নর্থ ম্যাসিডোনিয়া এবং সার্বিয়া থেকে কেউ সেদেশে এলে তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

               মহামারির কারণে ইউরোপের সেক্স ইন্ডাস্ট্রিতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।

ইউরোপে করোনাভাইরাস লকডাউন শিথিল হবার পর সেখানকার বিভিন্ন দেশে যৌনপল্লীগুলোও খুলতে শুরু করেছে ।গত সোমবার খুলেছে গ্রিসের যৌনপল্লী – তবে সেখানে ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার’ কড়া নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে।অস্ট্রিয়া ঘোষণা করেছে আগামি ১লা জুলাই সেদেশের যৌনপল্লীগুলো খুলবে।করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইউরোপের সেক্স ইন্ডাস্ট্রিতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। যৌনকর্মীরা তাদের স্বাস্থ্য এবং জীবিকা – দুটি নিয়েই আতংকের মধ্যে আছেন।

অস্ট্রেলিয়া:

                    মহামারির কারণে ইউরোপের সেক্স ইন্ডাস্ট্রিতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।
মেলবোর্নে ঘরে ঘরে গিয়ে টেস্ট করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রতি একটি সংক্রমণে উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। যদিও বৈশ্বিক মানদন্ডে সংখ্যাটা খুব বড় না। তবু কর্তৃপক্ষ সুযোগ নিতে রাজি না। প্রায় ১৩০০ কর্মকর্তা মাঠে নেমেছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের নানা জায়গায়, যেখানে সংক্রমণ পাওয়া গেছে সেখানে ঘরে ঘরে টেস্ট করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের এই মহামারির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বেশ পরিচিত একটি এয়ারলাইন্স কান্টাস থেকে ৬ হাজারের মতো লোক ছাটাই করা হবে। প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ লোকের চাকরি যাচ্ছে। বৈশ্বিক বিমান চলাচল কমে যাওয়াতে কোম্পানির আয় কমেছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলছে আগামী বছর পর্যন্ত দেশটির সীমান্ত বন্ধ থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

ফ্রান্স:

 

   আইফেল টাওয়ার আজ থেকে খোলা

আইফেল টাওয়ার খুলে গেছে কিন্তু উপরে উঠতে পারবেন আগামী সপ্তাহে।আজ ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় আইফেল টাওয়ার খুলে দেয়া হয়েছে।তবে লিফট খোলা হবে পহেলা জুলাই।

ব্রাজিল:

ব্রাজিলে একদিনে ৪২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত। ব্রাজিলে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। এর আগে একবার ৫৪ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল তবে সেটা ছিল আগের হিসেব মিলিয়ে, তাই এবারের হিসেবটাই বেশি ভয়াবহ। আরো ১১৮৫ জন মানুষ মারা গেছেন ব্রাজিলে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৩৮৩০ জন।
যুক্তরাষ্ট্র:

                                             যুক্তরাষ্ট্রে আবারো রাজ্যভিত্তিক লকডাউন
আবারো রাজ্যভিত্তিক লকডাউন। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাট এই তিনটি রাজ্যে নতুন কোয়ারেন্টিন চালু করা হয়েছে। যেসব রাজ্যে বাড়ছে সংক্রমণ, সেখান থেকে এই তিনটি রাজ্যে ঢোকার পর ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ ও পশ্চিমের কিছু জায়গায় সংক্রমণ বাড়ছে ক্রমশ। নিউজার্সির নিল মার্ফি বলেন, এই তিনটি রাজ্যে লোকে প্রায় নরক থেকে ফিরেছে তারা আর সে অবস্থায় যেতে চায় না। এরই মাঝে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের একটি অনুমান বলছে অক্টোবর নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৮০ হাজার লোক মারা যেতে পারে। আমেরিকানরা যদি ৯৫ শতাংশ মাস্ক পরে তবে মৃতের সংখ্যা হতে পারে ১ লাখ ৪৬ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে ২৩ লাখের মতো রোগী পাওয়া গেছে এবং ১ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। যেসব রাজ্য কোয়ারেন্টিনের অধীনে পড়বে- আলাবামা, আরকানসাস, আরিজোনা, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস, ওয়াশিংটন এবং উটাহ।
ভারত:

                                    ভারতে আবারো সংক্রমণে উর্ধ্বগতি
আবারো সংক্রমণে উর্ধ্বগতি। ভারতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১০৫। নতুন শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। যার মধ্যে ভাইরাস বহন করছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৪ জন। সুস্থ হয়ে গেছেন ২ লাখ ৭১ হাজারের মতো মানুষ।মারা গেছেন ১৪ হাজার ৮৯৪ জন।
দিল্লিতে রোগীর বাড়তি চাপ থাকায়, বাড়তি আইসোলেশন সেন্টার বানানো হচ্ছে।