তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সুন্দর দেশ, সমাজ ও পৃথিবী গড়তে চলচ্চিত্র অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশের কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে, স্বাধীনতা সংগ্রামে ও স্বাধীনতাউত্তরকালে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে। একইসাথে অনেক বিষয় যা সমাজ ও সমাজপতিরা ভাবে না, সেগুলোও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে, সমাজকে পথ দেখায়।
রোববার বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। মূল আয়োজক রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির বোর্ড সদস্য মফিদুল হকের সভাপতিত্বে ও উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামালের পরিচালনায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রতিকূলতার মধ্যেও ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন থমকে যায়নি, এজন্য আয়োজকদের অভিনন্দন জানান মন্ত্রী।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চলচ্চিত্র শুধু মানুষকে কাঁদায়, হাসায় বা আনন্দই দেয় না, একটি ভালো চলচ্চিত্র দেশ ও সমাজকে পথ দেখায় এবং সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়। আজকে পৃথিবী প্রচন্ড ব্যক্তি কেন্দ্রিক, মানুষ আজ যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে নিজেও যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে, অনুভূতি, সহানুভূতি যেন লোপ পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মানুষ যেন মানুষ থাকে, মানুষ যেন যন্ত্র হয়ে না যায়, সেই ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে চলচ্চিত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরির জন্য এসময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে আমাদের চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিলো, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলচ্চিত্র শিল্প যাতে ঘুড়ে দাঁড়ায় এবং বাংলা চলচ্চিত্র যেন বিশ্বময় জায়গা দখল করতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।
মন্ত্রী জানান, সিনেমা হল নির্মাণ, পুরনো হল চালু কিংবা আধুনিকায়নে এমনকি মার্কেটের সাথে সিনেপ্লেক্স নির্মাণেও মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ৪.৫ শতাংশ ও মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫ শতাংশ হারে ব্যাংককে লভ্যাংশ দিয়ে একজন উদ্যোক্তা দশ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠিত হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে চলচ্চিত্র নির্মণে বার্ষিক অনুদানের সংখ্যা ও পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতের দিনগুলো আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সুদিন বয়ে আনবে।
গত ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় ৭০টি দেশের ২২৫টি সিনেমা ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার, অলিয়ঁস ফ্রসেজসহ কয়েকটি স্থানে দেখানো হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার বিতরণ করেন মন্ত্রী ড. হাছান। ভারতের কুজহানগাল সেরা চলচ্চিত্র, ফিনল্যান্ডের দ্য আদার সাইড অব দি রিভার সেরা প্রামাণ্যচিত্র, ফ্রান্সের আ সামার প্লেস সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য ও নারীনির্মাতা বিভাগে ইরানের সাহারবানু সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার অর্জন করে। দর্শক পছন্দে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে এদেশের চন্দ্রাবতী কথা ও লাল মোরগের ঝুঁটি। আর বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে আজব কারখানা।