বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭৯ শতাংশের কিছু বেশি। আর নারীদের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি।
নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছে যে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৯২৮ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে।গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১.৯১%।বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭ হাজার ৪৫৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।সামগ্রিকভাবে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৯.৯২%।বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ৪১ হাজার ৬৬১ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আরো ৫০ জন মারা গেছেন। এনিয়ে মোট মারা গেছেন ২৬৬৮ জন।১৯১৪ জন নতুন করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।বাংলাদেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৬ জন।বাংলাদেশে সুস্থতার হার ৫৪.৭৪%।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০৬৯ জন পুরুষের এবং ৫৪৯ জন নারীর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭৯ শতাংশের কিছু বেশি। আর নারীদের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি।
তিনি বলেছেন, "এই মারা যাওয়া মানুষদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ৬০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের সংখ্যা সর্বাধিক, অর্থাৎ তাদের সংখ্যা ৪৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।"
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ১৯শে জুলাই পর্যন্ত বিশ্বে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭১৮ জন মানুষ মারা গেছেন।
আক্রান্তের হিসাবে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান।
বাংলাদেশে মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সংক্রমণ শনাক্তের ১০ম দিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম ব্যক্তি মারা যান।
এরপর করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এক হাজার মানুষের মৃত্যু ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৯৫ দিন। কিন্তু পরের হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছে মাত্র ২৫ দিন।
রোববার বাংলাদেশে সংক্রমণ শনাক্তের ১৩৪ তম দিনে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হজার ৬১৮ জনে।
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুর হিসাবেও শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যেই রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান।
ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ হাজার ৮১৬ জন, এবং পাকিস্তানে পাঁচ হাজার ৫৬৮ জন মারা গেছেন।
যে কারণে বেশি পুরুষ মারা যাচ্ছে
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের ভাইরলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেছেন, পুরুষের মধ্যে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যু দুইটি-ই বেশি, তার কারণ বাংলাদেশে এখনো পুরুষেরাই বেশি বাড়ির বাইরে যায়।
"বাইরে বেশি যাওয়ার কারণে পুরুষ আক্রান্ত বেশি হয়, যে কারণে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও তাদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলার প্রবণতাও কম থাকে তাদের মধ্যে---এমন একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে আমাদের। যদিও এই পর্যবেক্ষণের সাথে বড় কোন গবেষণা নেই এখনো।"
তবে, বাংলাদেশ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগে পুরুষেরা বেশি ভোগেন।ফলে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকিতেও পুরুষেরা এখনো পর্যন্ত বেশি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নারীর দেহকোষে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে এমন কথা বলা হয়েছে।যুক্তি হিসেবে বলা হয়, মানুষের দেহকোষে এক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে এমন জিন থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
যেহেতু নারীর শরীরে পুরুষের তুলনায় ঐ এক্স ক্রোমোজোমের সংখ্যা দ্বিগুন, ফলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নারীর দেহ পুরুষের তুলনায় শক্তিধর।
কিন্তু ঢাকার বক্ষব্যধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নুর মনে করেন, কেবল হরমোনের কারণে নারী সুরক্ষা বেশি পায়, এটি এখনো পুরোপুরি পরীক্ষিত নয়। বরং খুব শক্ত প্রমাণ না হলেও কিছু কিছু কারণের কথা উল্লেখ করছিলেন তিনি।
"এক নম্বর হচ্ছে বাংলাদেশে নারীরা ধূমপান কম করেন, তারা বাইরের পরিবেশে এখনো অনেক কম যান, যে কারণে দূষণের প্রভাব তাদের ওপর কম পড়ে, ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে ভালো থাকে।"
নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত হৃদরোগ বা স্ট্রোক তুলনামূলকভাবে পুরুষের তুলনায় কম হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে নারীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর সেটি একটি কারণ হতে পারে।
"আর হৃদরোগ বা ফুসফুসের প্রদাহ বা অ্যাজমার মত সমস্যা নিয়ে পুরুষরাই অপেক্ষাকৃত বেশি আসেন। এছাড়া হরমোনের কারণেও নারী কিছুটা সুবিধা পান।"
যে কারনে ষাটোর্ধরা বেশি মারা যাচ্ছেন?
সারা পৃথিবীতেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি মারা গেছেন বলে দেখা যাচ্ছে।বাংলাদেশেও পরিস্থিতি খুব ব্যতিক্রম নয়।
বক্ষব্যধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বেন্নুর মনে করেন, করোনাভাইরাস যেহেতু মানুষের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে, আর বয়স্ক মানুষের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল থাকে, যে কারণে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।
"বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে এই ভাইরাসের কারণে মানুষের ফুসফুসের অক্সিজেন বিনিময় ক্ষমতা প্রায় নষ্ট হয়ে যায় এবং ফুসফুসের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স যত বেশি হবে, তত তার জটিলতার হার বাড়বে। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।"
তিনি বলেছেন, "আরেকটি কারণ হচ্ছে বয়স্ক মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার আশংকা অনেক বেশি থাকে, সেটাও 'ক্রিটিক্যাল' পরিস্থিতিতে তাদের সার্ভাইভ্যালকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।"
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত