পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হলে আমরা হ্যান্ডশেক করি। হ্যান্ডশেক করি অপরিচিত কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও। দুই দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা হ্যান্ডশেক করেন। হ্যান্ডশেক করেন ধনকুবের ব্যবসায়ীরাও, নিজেদের মধ্যে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি হওয়ার পর। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর একটি রীতি এই হ্যান্ডশেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মানুষ এখন একে অন্যকে স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছে। তাহলে কি এই হ্যান্ডশেকের ইতি ঘটতে চলেছে? যদি তাই হয় তাহলে এর বিকল্প কী হতে পারে?
যেভাবে এলো হ্যান্ডশেক?
হ্যান্ডশেক নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। একটি ধারণা হচ্ছে এর উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিসে। দুজন মানুষের মধ্যে শান্তির প্রতীক হিসেবে। কারণ হ্যান্ডশেকের সময় এটা দেখানো যায় যে কারো হাতেই অস্ত্র নেই। আরেটি ধারণা হলো হ্যান্ডশেকের রীতি চালু হয়েছে মধ্যযুগীয় ইউরোপে। সামরিক পদমর্যাদার নাইটরা একে অপরের হাত ধরে নাড়তে থাকতেন যাতে কেউ অস্ত্র লুকিয়ে রাখতে না পারে।
এর পর থেকে ধীরে ধীরে নানা কারণে এই করমর্দন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। "মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগের একটি শারীরিক ভাষা এই হ্যান্ডশেক এবং মানুষ কীভাবে ক্রমশ সামাজিক ও স্পর্শপ্রবন প্রাণী হয়ে উঠেছে তারই প্রতীক এই করমর্দন," বলেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টিন লিগার। তাহলে হাজার হাজার বছর ধরে চালু এমন একটি রীতি কি এক করোনাভাইরাসের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাবে?
মনোবিজ্ঞানী লিগার বলছেন, "স্পর্শের গুরুত্ব বোঝাতে এর বিকল্প হিসেবে আমরা কনুই দিয়ে আরেকজনের কনুইতে টোকা দিচ্ছি। কারণ আমরা শারীরিক সংযোগের এই প্রথাকে হারাতে চাই না।"
শারীরিক এই স্পর্শ করার প্রবণতা অন্যান্য প্রাণী জগতের মধ্যেও দেখা যায়। ১৯৬০ এর দশকে আমেরিকান এক মনোবিজ্ঞানী হ্যারি হারলো গবেষণা করে দেখিয়েছেন লীসাস প্রজাতির বানরদের মধ্যে শারীরিক স্পর্শ কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
শিম্পাঞ্জিরাও শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে হাতের তালু স্পর্শ করে, একে অপরকে হাগ করে বা জড়িয়ে ধরে এবং কখনও কখনও চুমু খায়। জিরাফ তার লম্বা গলা দুই মিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে স্পর্শ করে আরেকজনের গলা। একে বলা হয় 'নেকিং'।
তবে শারীরিকভাবে স্পর্শ না করেও শুভেচ্ছা জানানো হয়। মানব জাতির বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে এধরনের নানা প্রথা চালু আছে। যেমন সামনের দিকে সামান্য নুয়ে কাউকে সম্ভাষণ করা, মুসলিমরা সালাম দিয়ে কিম্বা নিজের বুকের ওপর হাত রেখে শুভেচ্ছা জানায় আবার হিন্দুরা শুভেচ্ছা জানায় হাতজোড় করে যা 'নমস্তে' নামে পরিচিত।
সামোয়াতে মুখে বড় হাসি ঝুলিয়ে ও ভ্রু নাচিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
মানব ইতিহাসে শারীরিক স্পর্শের বিষয়টিকে এর আগে কখনো এরকমভাবে দেখা হয়নি এবং এনিয়ে এতো বড়ো ঝুঁকিও কখনো তৈরি হয় নি। তবে এই স্পর্শ করা যে সবসময়ই এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাও নয়।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে অনেক মনোবিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন যে স্পর্শের মাধ্যমে শিশুকে আদর করা নিতান্ত আবেগ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর ফলে কোন লাভ হয় না, বরং স্পর্শের মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের একজন আচরণ বিজ্ঞানী এবিষয়ে একটি বই লিখেছেন- 'ডোন্ট লুক, ডোন্ট টাচ'।
তিনি লিখেছেন, হ্যান্ডশেক ও গালে চুম্বন করার মতো বিষয় শুভেচ্ছা জানানোর রীতি হিসেবে চালু আছে কারণ যারা এভাবে শুভেচ্ছা জানান তাদের একজনের প্রতি আরেকজনের এতোটা আস্থা রয়েছে যে তারা জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকিও নিতে পারেন।
ঊনিশশো কুড়ির দশকে আমেরিকান জার্নাল অফ নার্সিং-এ কিছু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল যাতে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে মানুষের হাত ব্যাকটেরিয়ার বাহক হতে পারে। সেকারণে চীনারা যেমন নিজের দুটো হাত এক সাথে মিলিয়ে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়, আমেরিকানরাও যাতেই সেই প্রথা গ্রহণ করে তার জন্য সেসব নিবন্ধে সুপারিশ করা হয়েছিল।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, অতি সাম্প্রতিক কালেও হ্যান্ডশেকের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিএলএ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে 'হ্যান্ডশেকমুক্ত এলাকা' তৈরি করা হয়েছিল। তবে সেই নীতি টিকেছিল মাত্র ছয় মাস।
অনেক মুসলিম নারীও হ্যান্ডশেক করেন না, সেটা অবশ্য ধর্মীয় কারণে। এসব আপত্তি সত্ত্বেও বিংশ শতাব্দীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য মোটামুটি সারা বিশ্বেই একটি স্বাভাবিক রীতি হিসেবে চালু আছে হ্যান্ডশেক। এটি হয়ে উঠেছে পেশাদারী শুভেচ্ছারই এক প্রতীক।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে এরকম একটি প্রথার কারণে মানুষের মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশকে কীভাবে সক্রিয় করে তুলতে পারে, যেমন উদ্দীপ্ত করতে পারে ভাল খাবার, পানীয় কিম্বা সেক্স।
হ্যান্ডশেক দেখে মানুষ চেনা
ঠিক কতটা আলাপ হলে তবে মানুষ চেনা যায়? যদি বলি প্রথম আলাপেই? একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল? চোখ, কান খোলা রেখে কিছু বডি ল্যাঙ্গোয়েজ খেয়াল করলে কিন্তু চরিত্রের আভাস পাওয়া যায়। যেমন প্রথম আলাপের হ্যান্ডশেক আপনাকে বলে দিতে পারে কেমন হতে পারেন মানুষটা। বিশেষ করে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে কম আলাপে মানুষ চিনতে ভরসা রাখতে পারেন করমর্দনের উপর।
হ্যান্ড হাগ- দু’হাত দিয়ে যখন কেউ আপনার হাত জড়িয়ে নেবে তখন বুঝতে হবে মানুষটা উষ্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ, সত্ ও বিশ্বাসযোগ্যতার সম্পর্ক চাইছেন। প্রথম আলাপে এই ধরনের হ্যান্ডশেক বোঝায় মানুষটা ভরসা যোগ্য, আবেগপ্রবণও বটে।
ডমিনেটর- যখন কেউ হাত উপুর করে হ্যান্ডশেক করেন বা, আপনার বাড়ানো হাত ধরে এমন ভাবে উল্টে দেন যাতে আপনার খোলা চেটোর ওপর থাকবে তাঁর হাত তবে বুঝতে হবে এই মানুষ অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে ভালবাসেন।
ঠান্ডা ও আবেগহীন- হ্যান্ডশেকের করার সময় হাত যদি ঠান্ডা হয়ে যায়, ঘামতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে মানুষটা দুর্বল চরিত্রের অধিকারী। প্রথম আলাপে এমন হ্যান্ডশেক নার্ভাসনেসও বোঝায়।
ক্রাশার- যাঁরা এই ধরনের হ্যান্ডশেক করেন তাঁরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসী ও ক্ষমতাবান বোঝাতে পছন্দ করেন। এঁরা হ্যান্ডশেকের সময় এমন ভাবে শক্ত করে অন্যের হাত ধরেন যে ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। ছেড়ে দেওয়ার পর হাতে ব্যথাও হয়। এই করমর্দন আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় দেয়। অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতা ঢাকতেও অনেকে এ ভাবে হ্যান্ডশেক করে থাকেন।
কুইনস ফিঙ্গারটিপস- এই ধরনের হ্যান্ডশেক সাধারণত মহিলারা করে থাকেন। নতুন মানুষটির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে এমন ভাবে হাত এগিয়ে দেন যাতে শুধু আঙুলের মাথা ধরে হ্যান্ডশেক করা যায়। সামনের মানুষটার তুলনায় নিজের সুপিরওরিটি বোঝাতে এই ভাবে হ্যান্ডশেক করেন অনেকে। রানিরা নিজেদের সুপিরিওরিটি বোঝাতে সামান্য ঝুঁকে এই ভাবে হ্যান্ডশেক করে থাকেন।
কিপ ব্যাক- কিছু মানুষ হ্যান্ডশেক করার সময় দূরত্ব বজায় রাখেন। হাত এগিয়ে দেন কিন্তু সামনের মানুষটার থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পা দিয়ে ব্যালান্স করেন। এঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত পরিসরে কাউকে ঢুকতে দিতে চান না।
ইয়াঙ্ক অ্যান্ড পুল- এই হ্যান্ডশেক আসলে পাওয়ার প্লে। এখানে এক জন অন্য জনকে হাত ধরে যতটা সম্ভব নিজের কাছে টেনে নে। এই ধরনের আচরণের তিনটে কারণ হতে পারে। প্রথমত, মানুষটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই আপনাকে কাছে টেনে ভরসা পেতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি এমন কোনও পরিবার বা সংস্কৃতিতে বড় হয়েছেন যেখানে ব্যক্তিগত পরিসর কম দেওয়া হয়। তৃতীয়ত, ইনি আপনাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে আপনার ব্যালান্স নষ্ট করতে চাইছেন। কারণ যাই হোক না কেন এঁরা কিন্তু পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভালবাসেন।
আদর্শ হ্যান্ডশেক- যখন দুজনের হাত লম্বালম্বি থাকে, বু়ড়ো আঙুল একে অপরে জড়িয়ে থাকে এবং দু’জনের হাতের চাপে সাম্য বাজায় থাকে। এই ধরনের হ্যান্ডশেক তিন থেকে ছয় সেকেন্ডের হওয়া উচিত্।
হ্যান্ডশেকবিহীন ভবিষ্যৎ?
বিশ্বের অনেক দেশেই করোনাভাইরাস লকডাউন শিথিল করা শুরু হয়েছে। তবে হ্যান্ডশেকের ভবিষ্যৎ এখনও রয়ে গেছে অনিশ্চিত।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অফিস হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ড. অ্যান্থনি ফাউচি। হ্যান্ডশেক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গত এপ্রিলে তিনি বলেছিলেন: "সত্যি করে বলতে আমার মনে হয়, আমরা আর কখনোই আগের মতো হ্যান্ডশেক করবো না।"
"এটা যে শুধু করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য ভালো উপায় তা নয়, এর ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও নাটকীয়ভাবে কমে আসবে।"
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো যে আরো বহু বছর বহাল থাকবে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য বিষয়ক একজন গবেষক স্টুয়ার্ট উল্ফ বলেছেন, "এর ফলে কাকে স্পর্শ করা যাবে, কে স্পর্শ করতে পারবে এবং কাদের বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে- এভাবে সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে।"
তিনি মনে করেন এর ফলে তৈরি হতে পারে নানা রকমের মানসিক সমস্যা।
করোনাভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যেই তরুণ ও বয়স্ক মানুষের প্রতি সমাজের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে।
হ্যান্ডশেকের বিকল্প কী?
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর এলকে ভেবার বলেন, "অভ্যাস খুব কঠিন বিষয়। কিন্তু একই সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে অভ্যাস ও সামাজিক প্রথা বদলে যেতে পারে, এবং বদলায়ও।"
তবে অন্যকে স্পর্শ না করে শুভেচ্ছা জানানোর উপায় ইতোমধ্যেই চালু আছে। সারা বিশ্বেই এরকম একটি প্রথার উদাহরণ হতে পারে সামনের দিকে শরীর ঝুঁকিয়ে শুভেচ্ছা জানানো।
সামাজিক এই প্রথা চালু আছে থাইল্যান্ডে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এতো কম হওয়ার পেছনে এটিকেও একটি কারণ বলে মনে করা হয়।
আরো আছে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো, মাথা ঝাঁকানো, হাসি দেওয়া, অসংখ্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ানো ইত্যাদি। এসবের জন্য শারীরিক স্পর্শের প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু প্রফেসর লিগার বলেছেন, কোভিড-১৯ এর নিষ্ঠুর আক্রমণের ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে যখন মানুষ আগের চেয়েও অনেক বেশি মানসিক চাপের মধ্যে থাকে এবং এথেকে মুক্তি পেতে তারা অন্যের স্পর্শের ওপর নির্ভর করে।
"ভেবে দেখুন তো কেউ যখন কারো মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত থাকে কিম্বা কারো জীবনে খারাপ কিছু ঘটে তখন আমরা তাকে কীভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি- তাকে জড়িয়ে ধরি, পাশে বসে থাকি অথবা হাত দিয়ে তার কাঁধে ধরি।"
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে অপরের মুষ্টিবদ্ধ হাতে, কিম্বা হাতের কনুই দিয়ে আরেকজনের কনুইতে ঠুকে দেওয়া কি হ্যান্ডশেকের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে?
কারো কারো জন্য শারীরিক স্পর্শ এড়িয়ে চলা খুব কঠিন। তারা সবসময় তাদের প্রিয়জনকে স্পর্শ করতে উদগ্রীব থাকেন। এদের একজন ডেলিনা গার্সিয়া।
সংক্রামক ব্যাধিসহ জনস্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করেন তিনি। ইতোমধ্যেই তিনি বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার ৮৫ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন।
"তিনি তো আমার খুব কাছের মানুষ, আমি তার কাছে গিয়ে তার ছোট্ট মুখখানিতে একটা চুমু দিতে চাই, এবং তাকে বলতে চাই যে আমি তাকে ভালবাসি।"
"মা যখন আমার দিকে এগিয়ে আসেন, আমি টের পাই যে আমার ভেতরে ভেতরে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়- আমি যদি তাকে অসুস্থ করে ফেলি! তাই আমি নিজেকে সরিয়ে ফেলি। কিন্তু যদি তিনি নিজে সরে যেতে চান আমি সেটা মেনে নেই।"
হ্যান্ডশেক না করা কিম্বা শারীরিক স্পর্শ এড়িয়ে চলা যতোই কঠিন হোক না কেন এটার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন অনেকে। প্রফেসরে ভেবার বলেন, "আমি মনে করি না যে মানুষ বাড়াবাড়ি কিছু করছে।"
"টিকে থাকা কিম্বা বেঁচে থাকার চেষ্টা মানুষের স্বভাবজাত। বিকল্প হচ্ছে আমাদের পরিচিত পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়া এবং এর ফলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি না হওয়ার আগে যে আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে সেটাও ভুলে যাওয়া। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হতে আরো অনেক সময় লাগবে।"
মানুষ যে এখনই হ্যান্ডশেক করা বন্ধ করে দেবে ঠিক তা নয়। রোগের জীবাণু এড়িয়ে চলা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য, আবার একই সাথে পরিপূর্ণ একটি সামাজিক জীবন যাপন করাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মনে করেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী আর্থার মার্কম্যান।
"বরং আমরা নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়ে আরো মনোযোগ দিতে পারি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারি। আমরা যাতে বারে বারে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ না করি সেরকম একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।"
তবে অনেকেই বলছেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবীতে হয়তো স্পর্শবর্জিত নতুন এক স্বাভাবিক জীবন গড়ে উঠবে এবং মানুষ তার সামাজিক জীবনে বুঝতেই পারবে না যে সে স্পর্শের মতো কিছু একটা বিষয় মিস করছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত