দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় এলাকা ধরে ধরে লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী গত ১০ জুন থেকে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা এবং ঢাকার বাইরে তিন জেলার নির্বাচিত এলাকাগুলোয় জোনিং সিস্টেম চালু করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার বাইরে জেলা তিনটি হলো- গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদী। পরে গত ১৩ জুন শনিবার ঢাকা শহর ও এর আশপাশের এলাকা এবং চট্টগ্রামের ‘রেড জোন’ তালিকা সংশ্লিষ্ট মেয়রদের কাছে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম অর্থাৎ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে।
অধিদপ্তরের নির্দেশনার ১০ দিন পর গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঢাকার মধ্যে কেবল পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন শুরু করা গেছে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে চার জেলার মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন, অর্থাৎ ছয়টি রেড জোন এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে। অথচ ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের চিহ্নিত রেডজোনের সংখ্যা ৪৫টি এবং ঢাকার বাইরে ৭৩টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে চিহ্নিত ১১টি রেড জোন এলাকার মধ্যে মাত্র ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে গত মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। গাজীপুরের পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন মিলে মোট ১৯টি রেড জোনের মধ্যে গত ১২ জুন মধ্যরাত থেকে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে। একইভাবে নরসিংদীর ৬ উপজেলার ১৪ রেড জোন এলাকার মধ্যে মাত্র মাধবদী পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর বিরামপুর ও দক্ষিণ বিরামপুরকে আংশিক রেড জোন করে লকডাউন শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন পুরা ২৭টা ওয়ার্ড এবং আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলার পুরোটা রেড জোন। এর মধ্যে গত ১৬ জুন থেকে মাত্র রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন শুরু হয়েছে।
এসব জেলার অন্য রেড জোনগুলোতে ঠিক কবে থেকে লকডাউন শুরু হবে সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তাদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখন অবধি নতুন করে লকডাউনের কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত আকারে লকডাউনে যেতে।
অন্যদিকে, এসব লকডাউন এলাকায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার হলেও ছয়টি এলাকার মধ্যে চারটিতেই উপসর্গ দেখা দেওয়া জনগোষ্ঠীর নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। তিন-চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে নমুনা দিতে হচ্ছে। আবার পরীক্ষার ফল আসতেও লাগছে গড়ে সাতদিন। এসব এলাকার মানুষের নমুনা পরীক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। উপসর্গ দেখা দেওয়া মানুষ নিজের ইচ্ছে হলে নমুনা পরীক্ষা করছেন। এমনকি আক্রান্তদের সংস্পর্শ থাকা লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য এলাকা বা এলাকার বাইরে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নেই। তাদের স্থানীয় প্রশাসন থেকে বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে।
এ ধরনের লকডাউনে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ নতুন গতি পেয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে। আগে যেখানে পরীক্ষা অনুপাতে আক্রান্তের হার ছিল গড়ে ২০ শতাংশ, সেটা এখন ২৩ শতাংশে চলে গেছে। তার মানে রোগী আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে হলে অবশ্যই লকডাউন তাড়াতাড়ি করতে হবে। লকডাউন ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি নেই। লকডাউন এলাকায় দ্রুত সবার পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করে আইসোলেট করতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাবে না। একটা সেন্টারে আইসোলেশন করতে হবে। সেখানে ডাক্তার নার্সসহ চিকিৎসার সুবিধা রাখতে হবে। যারা পজিটিভ হবেন, তারা সেন্টারে থাকবেন। আর যারা নেগেটিভ তারা বাসায় থাকবেন। তা হলে ওই এলাকা একেবারে রোগমুক্ত হবে।
একইভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ধাপে ধাপে না করে একসঙ্গে ৫-১০ হাজার এলাকায় লকডাউন করতে পারলে ভালো হতো। লকডাউনটা দ্রুত করতে হবে। সংক্রমণ যদি আরও ছড়িয়ে যায়, তখন লাল বা হলুদ জোন করে কোনো লাভ হবে না।
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন শুরু হয়েছে গত ১০ জুন। এলাকার নাজনীন স্কুলে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করেছে ব্র্যাক। বুথের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ব্র্যাকের ডা. ফারহানা রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকাল পর্যন্ত ১৫৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০টা করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে তাদের সক্ষমতা ৩০টি। এসব নমুনার মধ্যে ৩৩ জনের পজিটিভ এসেছে বলে জানান লকডাউন এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দলের সমন্বয়কারী মাসুদ হোসেন সুমন। তিনি বলেন, এখানে ৫০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন ৩০টা করে নমুনা নেওয়া যায়। প্রত্যেকের বাসার নিচে নমুনা বুথের লোকজনের নাম্বার দেওয়া আছে। কেউ যদি তথ্য গোপন না করেন তা হলে মোটামুটি আক্রান্তদের শনাক্ত করা গেছে। কারণ তিনদিন ধরে নমুনার সংখ্যা কমে এসেছে। লকডাউনের আগে রোগী ছিল ৩৯ জন। লকডাউনের পর একজনের মৃত্যু হয়েছে। এখানে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। কিংবা কেউ চাইলে বসুন্ধরা সেন্টারেও যেতে পারেন। আক্রান্তরা নিজ পছন্দমতো হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারেন।
অর্থাৎ এই এলাকায় পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ২১ শতাংশের বেশি এবং পরীক্ষার হার ৩৩ শতাংশ।
চট্টগ্রাম নগরের রেড জোন ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। ওয়ার্ডের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে ১৪টি বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে মোতয়েন রয়েছে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ও এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, লকডাউন এলাকায় চসিকের ব্যবস্থাপনায় কভিড ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসা ও হাসপাতালে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। লকডাউন এলাকার বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ২৪ ঘণ্টা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করতে হবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। সেখানে কাট্টলী ওয়ার্ডের কর্নেলহাটের হাশেম নাজির হেলথ সেন্টারে বুথ স্থাপন করেছে ব্র্যাক। ব্র্যাকের জেলা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হানিফ উদ্দিনের তথ্য অনুযায়ী, বুথ খোলার পর মাত্র তিনদিন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪১টি। এই সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে কম বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, প্রতিদিন বুথের নমুনা সংগ্রহের সক্ষমতা ৩০টি। এই উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে মোট ৭৮ হাজার জনসংখ্যা।
আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লকডাউন এলাকায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। নমুনার ফল আসতে ৫-৬ দিন লেগে যায়। রেড জোন এলাকার কলকারখানা খোলা। ফলে বাইরের লোকজন ভেতরে আসা-যাওয়া করছেন।
অথচ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে সংক্রমণ বেশি চট্টগ্রামে। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৬৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩১ জন। নগরসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় আক্রান্তের একটি পরিসংখ্যান করা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে একটি তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন শুরু হয়েছে। বাকি রেড জোনভুক্ত এলাকায় সরকারি নির্দেশনা পেলেই লকডাউন করা হবে। নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
গাজীপুরে কালিগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ১২ জুন রাত ১২টা থেকে কেএতে লকডাউন ঘোষণা দেয় গাজীপুর জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার রেড জোনগুলোতে লকডাউন করতে হলে কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পকারখানা খোলা রেখে লকডাউন সফল হবে না। লকডাউন ঘোষণার আগে শিল্প-কলকারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সরকারের নির্দেশনা এলে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।
প্রশাসনিকভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেও স্থাস্থ্যগত ব্যবস্থা দুর্বল। প্রতিনিধি জানিয়েছেন, লকডাউন এলাকায় নমুনা সংগ্রহের জন্য কোনো বুথ নেই। পরীক্ষার জন্য এলাকার বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা লোকজনকে বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। আলাদা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নেই। মোট জনসংখ্যা ৩৫ হাজার। প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে ৪০-৫০ জনের।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়নে লকডাউন শুরু হয়েছে ১২ জুন থেকে। এই উপজেলার মধ্যেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেখানেই নমুনা দেন মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের বয়স বেশি তারা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিদের বাসায় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা মানুষদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য আলাদা কোনো সেন্টার নেই। বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। প্রায় দেড় লাখ জনসংখ্যার এই ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০২ জনের।
গত ১২ জুন নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর বিরামপুর ও দক্ষিণ বিরামপুরকে আংশিক রেড জোন করে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। গত ৪ দিন ধরে রেড জোন ঘোষিত এলাকা দুটিতে জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি রয়েছে জেলা পুলিশের সার্বক্ষণিক প্রহরা। রেড জোনকৃত এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহির থেকে যেমন কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না, তেমনি ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। এখানে লোকসংখ্যা ২-৩ হাজার।
এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু কাওসার সুমন বলেন, রেড জোন ঘোষণার আগে এখানে রোগী ছিলেন ১৪ জন। লকডাউন ঘোষণার পর গতকাল পর্যন্ত সাতজনের প্রথম পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। আরেকটি পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেই তাদের সুস্থ বলা হবে। এখন পর্যন্ত ১০০ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনো পজিটিভ পাইনি।