কটিয়াদীতে স্কুল কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ, সাবেক ছাত্রদল নেতা নিহত

এম.এ. কিবরিয়া, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ছাত্রদলের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন আহত হন।

আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে কমিটি গঠন নিয়ে সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবকের নাম আশিক খাঁ (২০)। তিনি মুমুরদিয়া ইউনিয়ন চাতল গ্রামের আরব আলী খাঁর ছেলে এবং মুমুরদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

এদিকে আশিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে কটিয়াদী মডেল থানায় যান ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা।

আশিকের চাচাতো বোন রিমার অভিযোগ, ‘পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও দলের নেতা-কর্মীদের সামনে আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তিনি। যাঁদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা মারামারি শুরু হলেই ভেগে যান। তাঁদের তো কিছু হয়নি, হয়েছে আমার ভাইয়ের। আমার ভাই মরছে। তাঁদের কিছু হবেও না। তাঁরা তলে তলে টাকা দিয়ে দেবেন, বিচার কিছুই হবে না।’

মুমুরদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলা উদ্দিন সাবেরী বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জসিম উদ্দিন দীপক কলেজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১৯টি মামলা করেছেন। আওয়ামী লীগের কিছু লোক, যারা এই জসিমকে দিয়ে ১৭ বছর মামলাগুলো করিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। পরে বিদ্যালয়ের কমিটিগুলো ভেঙে যায়।’

আলা উদ্দিন সাবেরী বলেন, ‘এবার আমি অনেক কষ্ট করে কমিটির জন্য একটি তালিকা পাঠিয়েছি। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক নুরুজ্জামান চন্দনকে ১ নম্বরে, আলী হায়দার বাবলুকে ২ নম্বরে এবং হান্নান সরকারকে ৩ নম্বরে দিয়ে কমিটির তালিকা (সংশ্লিষ্ট দপ্তরে) পাঠাই। পরে আলী হায়দার বাবলু একটি আবেদন করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাদ দিয়ে ১ নম্বরে চন্দনকে দিয়েছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড থেকে তদন্ত আসে। এরপর আমরা ৫-৬ জন বৈঠকে বসি। এ সময় অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তখন আমি বলি, “চেয়ারম্যান হিসেবে বলছি, আপনারা যদি শান্ত থাকেন, তাহলে আপনাদের সবার কথা শুনব। তাঁরাও বলেছেন, কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করবেন না। পরে হঠাৎ রঞ্জন নামের একজন সমন্বয়ক প্রতিবাদ করলেন। এ সময় নজরুল নামের একজন চিৎকার করে ওঠেন। তখনই চানপুরের ছেলেগুলো দা নিয়ে অতর্কিত হামলা করেন। সব ভিডিওতে আছে। কে কি করেছেন? কলেজে ঢুকে তাঁরা প্রিন্সিপালকেও মারধর করেন।’

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফাজ্জল হোসেন-এর সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘প্রিয়দেশ’কে বলেন, স্কুল কমিটি নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে আশিক নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। এ বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে কটিয়াদী উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা আশিকের লাশ কাঁধে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ দেখান। পরে আশিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভকারীরা কটিয়াদী মডেল থানায় যান।

কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান কাঞ্চন বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা অপরাধী। কাজেই অপরাধীর কোনো ক্ষমা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাই।’

মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল বাগহাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ করেই হামলা চালিয়েছে। আমার ওপরও হামলা হয়। আমি গুরুতর আহত। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

কিশোরগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার মাকছুদা বলেন, ‘আমি আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে