বিদিশার জন্ম ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেয়া হয় তাকে ইংল্যান্ডের নাগরিক পিটার উইসনের সঙ্গে।
বিদিশা লেখাপড়া করেছেন ইংল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের উপর ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি লা-সালের সিঙ্গাপুর শাখা থেকে। ১৯৯৮ সাল থেকে জড়িয়ে পড়েন সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের সঙ্গে এক গভীর সম্পর্কে। এর পরিণতিতে বিয়ে, সংসার। ২০০৫ সালে ভেঙ্গেও যায় এ বিয়ে। তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘শত্রু র সঙ্গে বসবাস’ এবং ‘স্বৈরাচারের প্রেমপত্র’। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মৃত্যুর পরে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেন নানা প্রসঙ্গে।
প্রশ্ন: আমরা আপনাকে কী নামে সম্বোধন করবো- বিদিশা সিদ্দিকী, বিদিশা এরশাদ নাকি এরিকের মা?
বিদিশা: নিশ্চয়ই এরিকের মা।
প্রশ্ন: সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আপনি সাবেক সহধর্মিনী। তিনি যেদিন মারা যান সেদিন আপনি আজমীর শরীফে ছিলেন। সেখান থেকে ভীষণ আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দেন ফেসুবকে। আপনার মনে হয়েছিল, তিনি যদি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন- আপনি নীল শাড়ী পরে তার সাথে ঘুরতে যাবেন। আর যেদিন তিনি মারা যান সেদিন আপনি স্ট্যাটাস দিলেন- ‘তোমার সাথে শেষ দেখা হলো না। ওপারে অপেক্ষায় থাকবো তোমার সাথে দেখা হওয়ার।’ এই মানুষটির সাথে আপনার ৫ বছরের সংসার। তারপরে দীর্ঘ বিচ্ছেদ। আপনি বই লিখেছেন এই সব নিয়ে। ভালবাসা আর ঘৃণা দুটো পাল্লাই সমান ছিল। এখন তিনি নেই। কোন পাল্লা ভারী?
বিদিশা: আমি ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। অনেক অল্প সময়ের সংসার ছিল আমাদের। সংসারের আগে প্রেম ছিল। তারপরে পরিণয়, বিয়ে এবং সংসার।
প্রশ্ন: কে আগে প্রেমে পড়েছিল- আপনি নাকি এরশাদ?
বিদিশা: তিনি পড়েছিলেন এবং তিনিই আমাকে তার প্রেমে পড়িয়েছিলেন।
প্রশ্ন: তিনি আপনার প্রেমে পড়েছিলেন এবং সব প্রেম শেষ করে আপনাকে একা করে চলে গেলেন? আপনি কি এখনো তার তার প্রেমে পড়ে আছেন?
বিদিশা: হ্যাঁ। আমি এখনো এরশাদের প্রেমে পড়ে আছি।
প্রশ্ন: সেই প্রেম কী? ঘৃণাও তো ছিল?
বিদিশা: ছিল। ঘৃণা, রাগ, অভিমান ও দুঃখ সবই ছিল। কারণ, আমি যে কাজগুলো করিনি তার জন্যে আমাকে সাফার করতে হয়েছে। আমাকে জেলে- এমনকি রিমান্ডে নেওয়া। আমার নখ উপড়ানো হয়েছে। অবভিয়াসলি আমার কষ্ট হয়েছে। আমাকে মোবাইল চোর সম্বোধন করে অনেক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তারপরে শুরু আমার বাচ্চা নিয়ে যুদ্ধ। তাই রাগ, অভিমান, ক্ষোভ ও ঘৃণা সবই ছিল। কিন্তু তিনি এমনই একজন মানুষ যে, তার ভালবাসার কাছে সবাই মাথা নত করতে বাধ্য।
প্রশ্ন: শত্রুর সাথে বসবাসের পরেও এই যে প্রেম?
বিদিশা: আপনি বইটি পড়েছেন কিনা আমি জানি না? বইটা এরশাদকেই উৎসর্গ করেছিলাম। শত্রু বলতে বুঝিয়েছিলাম ওই সারাউন্ডিংটা। ওই সময়টা যারা মেকানিজম করেছিল- সাবেক গভর্নমেন্টের ওই পার্টটা। শত্রু বলতে সমাজের অনেকেই ছিল?
প্রশ্ন: শুধু একজন এরশাদ না?
বিদিশা: হ্যাঁ। শুধু এরশাদ না। বলিষ্ঠভাবে আমি নাম দিয়ে দিয়ে বলেছি। তার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক বা ঘটনা তা লেখা আছে। আবার মন্দ যা হয়েছে তাও লেখা আছে। এটার জন্য আমি দুঃখিত না। এই বই বের করার পরে তিনি যে রাগ করেছেন তাও তো না।
প্রশ্ন: আপনার সাথে এরশাদের যোগাযোগ ছিল?
বিদিশা: হ্যাঁ। সবসময়ই যোগাযোগ ছিল।
প্রশ্ন: শেষ যোগাযোগ হয়েছিল কবে?
বিদিশা: শেষ যোগাযোগ হয় মে মাসের ২০-২৫ তারিখের ভেতরে। আমরা রেগুলার মেসেজ পাঠাতাম, জোকস এবং বুকস পাঠাতাম। দুই বাড়িতে দুইজন থাকতাম কিন্তু ছেলের কারণে আমাদের সম্পর্ক টিকে ছিল।
প্রশ্ন: আপনি এরিককে দেখতে যেতে পারেন না। এরশাদকেও শেষ দেখা দেখতে পারেননি। এখন এরিকের কী হবে? এরিকের সম্পত্তির জন্য কি এরিকের মা তাকে ফিরে পেতে চায়?
বিদিশা: একজন মায়ের কাছে তার সন্তান হলো সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমি ১৪ বছর একা থেকেছি। এই ১৪ বছরে ১৪ টাকাও আমি এরশাদ সাহেবের কাছ থেকে নেইনি। নিজের টাকা এবং সহায় সম্পত্তি দিয়ে আমি গুলশানের মত জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছি। নিজের ফ্ল্যাট, ফাউন্ডেশন, বিজনেস, রেস্টুরেন্ট, বুটিক এবং ফুড বিজনেস এই সব নিয়ে যা আছে আমার- তা দিয়ে আরও ১০টা এরিককে স্বাচ্ছন্দ্যে বড় করতে পারি। আমার আমলনামা সবার কাছে ওপেন। সরকারের যেকোন বিভাগ তা যেকোন সময় ইনকোয়ারি করতে পারে। তারা দেখতে পারেন। এখানে আমার লুকানো কোন কিছু নেই। যার জন্য আমি ভয় পাবো। আর এরিকের সম্পদের কথা বলছেন। যারা এরিককে আটকে রেখেছে- তারাই এরিকের সম্পদের জন্য এসব করছে।
প্রশ্ন: কারা এরিককে আটকে রাখছে?
বিদিশা: আই ডোন্ট নো। সেটা এখনো ক্লিয়ার হয়নি। আস্তে আস্তে ইনফরমেশনগুলো আরও কালেক্ট করছি।
প্রশ্ন: ১৮ বছরে বিদিশা কেন তার সন্তানকে ফেরত পেতে চাইলো না? এখন কেন চাইছে এরিককে?
বিদিশা: আমার সাথে এরশাদ সাহেবের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল যে, যতদিন তিনি জীবিত থাকবেন ততদিন আমি এরিককে তার কাছেই রাখবো। তাই এরশাদ সাহেবের জায়গায় তো আরেক এরশাদের জন্ম হয়নি এখন? নতুন কতজন এখন বাবা হওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু তারা তো এরিকের জন্যে কিছুই করেননি।
প্রশ্ন: অনেকেই এরিকেই বাবা হতে চাইবে কিন্তু বিদিশা কি আবার কারো বউ হতে চাইবে?
বিদিশা: নট অ্যাট অল। আমি এরশাদ সাহেবের কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে, আর কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। সেই কথা আমি এতো বছর রেখেছি। সামনের দিনেও রাখবো। বাকী জীবন সন্তানের সাথে কাটিয়ে দেব।
প্রশ্ন: আপনার আরও সন্তান আছে। কিন্তু কেন এরিককে আপনার প্রয়োজন?
বিদিশা: এরিক একটি অসুস্থ বাচ্চা। মায়েদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তার অসুস্থ শিশু নিয়ে। আমার বাচ্চা সেলিবল পলসি। সেলিবল পলসি প্রতিবন্ধী। সে অসম্ভব ইনটেলিজেন্ট। কিন্তু তাকে ম্যানিপুলেট করানো যাবে। ভয় দিয়ে তাকে অনেক কিছু বলানো সম্ভব হবে। এরিককে জিম্মি করে আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করানো যাবে বলে অনেকে মনে করছেন। যাতে আমার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে এবং যাতে আমি রাজনীতিতে ফেরত আসতে না পারি। এই জায়গায় অনেকেই আতঙ্কিত আমাকে নিয়ে।
প্রশ্ন: আপনি কি রাজনীতিতে ফিরতে চান। রাজনীতিতে আছেন আপনি?
বিদিশা: আমি পার্টিতে অ্যাকটিভ না। পার্টির সিনিয়র লিডাররা আমাকে না আনতে চাইলে জোর করে তো কিছু করা যাবে না। কাজেই আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। রাজনীতিতে নির্দিষ্ট সময় বলে কিছু নেই। সময় আসবে, প্রত্যেকেরই সময় আসে। রংপুরের সাধারণ মানুষ আমাকে চায়। এরশাদ সাহেব তাদের সাথে আমার যোগাযোগ করে দিয়ে গেছেন তা এখনো আছে।
প্রশ্ন: তৃণমূল আপনাকে চাইছে। শুধু কি রংপুর?
বিদিশা: নট অ্যাট অল। আপনি দেখেন- আমার নিউজ যখন হয়। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়। আমার ভিউয়ার বাড়ে। আমার ফেসবুক দেখেন। মিডিয়া নিউজগুলো দেখেন আপনারা। নিজেরা জরিপ করে দেখেন- আমি পপুলার কি না? এর সাথে বিদিশা ফাউন্ডেশন নামে আমার প্রতিষ্ঠান আছে। এর মাধ্যমে আমি সোশ্যাল ওয়ার্ক করি। আমি তো শুধু জাতীয় পার্টি নিয়ে পড়ে নাই। গেলো ১৪ বছর আমি জাতীয় পার্টি করিনি। অ্যাট দ্যা মোমেন্ট- এরিকের উপরে আমার বড় কিছু নেই। এরিককে মুক্ত করতে হবে আমাকে। এরিককে আমার কাছে নিয়ে আসতে হবে। আপনি এরিকের সম্পত্তির কথা বললেন। আহামরি কোন সম্পদের মালিক সে না। ওই সম্পত্তি দিয়ে বা আমার সম্পত্তি আমি দিয়ে দেব- যদি এরিক আমার কাছে আসে। সব সম্পত্তি দিয়ে হলেও আমি আমার সন্তানকে ফেরত চাই।
প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন- আপনি এরিককে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করছেন। জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতাও বলেছেন, ওই মহিলা কে? এরিক কি আপনার কাছে ফিরতে চায়?
বিদিশা: আমি আগেই বলেছি- এরিক একটি প্রতিবন্ধী শিশু। তাকে ম্যানিপুলেড করা যায়। সে একটি আইসক্রিমকে মনে করে- ঠান্ডা খাওয়া যাবে না, গরম করে খেতে হবে। সে একটি বেলুনকে ভয় পায়, মোমবাতিকে ভয় পায়। তাই এই ধরণের স্পেশাল চাইল্ডকে বড় করে শুধুমাত্র বাবা এবং মা।
আর আপনি যে লিডারের কথা বললেন- আমার মনে হয় তার মা নেই। যদি তার মা থাকতো তাহলে তিনি এই কথা বলতে পারতেন না। মা তার সন্তানের কাছে যাবে। সন্তান তার মার কাছে যাবে। উনি বলার কে? তার ভাষা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আজকে যদি এরিকের বাবা জীবিত থাকতেন তাহলে মনে হয় আমার সাথে সে এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন না- একটা মহিলা? ঠিক আছে আমি মহিলা? আমি তো এরিকের মা? আমাকে তো সেই সম্মান দিয়ে তারা কথা বলবেন। এইটুকু সম্মান দেওয়ার মত কার্টেসি বোধ তাদের নেই।
প্রশ্ন: আপনাকে ভয় পায় কেন তারা?
বিদিশা: আমাকে না। আমার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় তারা। আমি কোথাও কথা বলতে গেলে- আমাকে মানুষ ভাড়া করে নিয়ে আসতে হয় না। জাতীয় পার্টিতে এক টাকাও চাঁদাবাজির কোন বদনাম আমার নেই। আমি দিয়েছি। আমার দেওয়ার সুনাম আছে কিন্তু কোন বদনাম নেই। আমি কমিটি করেছি এবং টাকার বিনিময়ে কাউকে পদ দিয়েছি এমন কোন অভিযোগ নেই- যা এখন হচ্ছে। টাকা দিলে এখন এমপি হওয়া যায়। দলে পদ পদবী পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: রংপুরে এরশাদের আসনটি শূন্য হয়ে গেছে। সেখানে এরশাদ কে সমাহিত করার পেছনে আপনার ভুমিকা রয়েছে। আপনি কি রংপুর থেকে উপ নির্বাচন করতে চাইছেন?
বিদিশা: রংপুরের মানুষই বলে দিবেন যে, তারা কাকে চাইছেন? রংপুরের মানুষ চেয়েছিল এরশাদ সাহেবের দাফন হবে রংপুরে। আমি সে ব্যাপারে তাদের প্রতি সম্মতি জানিয়েছি যে, হ্যাঁ-এরশাদ সাহেব আমাকে বলেছিলেন অনেক আগে, এই পল্লী নিবাসে আমাকে দাফন করো। তখন আমি এতোটা বুঝতাম না। মৃত্যুর কথা নিয়ে এতোটা আলাপও করতাম না। কিন্তু যখন তিনি মারা গেলেন। তখন ফ্যামিলির সবাই বলছেন যে, বনানী সেনানিবাসে তাকে সমাহিত করা হবে। তখন রংপুরের মানুষরা আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমার সাথে যোগাযোগ করা খুব সহজ। ২৪ ঘণ্টা আমার ফোন খোলা থাকে এবং আমি সবসময়ই মানুষের ফোন রিসিভ করি। যখন তারা কান্নাকাটি শুরু করলো। বললো- আপা আপনি কি বলেন? আমি বললাম, আমি বললে তো কোন লাভ নাই। আমার কথা তো জাতীয় পার্টির সিনিয়র যারা আছেন তারা তো আর শুনবেন না? তারা বললো- আপা, আমরা জীবন দিয়ে দেব কিন্তু এরশাদ সাহেবের লাশ ফেরত দিবো না। আমি বললাম- ঠিক আছে তোমরা চেষ্টা করো। তোমরা যদি পারো। আরেকটা বিষয় দেখেন- এরিকের বাবা তাকে এই পল্লী নিবাস দিয়ে গেছেন। লিচু তলায় তার বাবার লাশ দাফন হয়েছে। কিন্তু এরিককে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বাবার কবরে এরিক একমুঠো মাটিও দিতে পারেনি। এই ইনজাস্টিসগুলো কে করছে?
প্রশ্ন: কেন এরিক বাবার কবরে মাটি দিতে পারলো না?
বিদিশা: আই ডোন্ট নো- এখানে কে রাজনীতি করছে? কে এরিককে আটকে রাখছে? এরিকের সম্পত্তির লোভ যদি আমার থাকতো তাহলে আমি কোর্টে গিয়ে বলবো- কোর্ট থেকে রিসিভার দেওয়া হোক। যাতে এরিকের এই সম্পত্তিগুলো ঠিকমতো বন্টন করা হয়। মানে এখান থেকে কী আয় হচ্ছে কী ব্যয় হচ্ছে? দেখা গেলো- আয় হচ্ছে ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এরিকের পেছনে খরচ হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কিনা? আর এরিকের তো এতো টাকা পয়সার দরকার নেই। বাকী টাকাগুলো কোথায় খরচ হচ্ছে? আমি কোর্ট’কে বলবো যে, আপনারা একজন রিসিভার নিয়োগ করেন। সেই রিসিভারের বেতন না হয় আমি দেব। এরিকের সহায় সম্পত্তির প্রয়োজন আমার আছে বলে মনে করি না।
প্রশ্ন: ভালবেসে বিয়ে। তারপরে নানা বিতর্ক। বিদিশা কি ভেবেছিল কখনো জীবনটা এই রকম হবে?
বিদিশা: বিতর্ক না। এটা আসলে লড়াই। এই লড়াই আমাকে অনেক শক্ত করছে এবং মানুষের কাছে যাওয়ার পথ অনেক সহজ করে দিচ্ছে এবং আমার ধৈর্য্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষের কাছ থেকে আমি ভাল কথাও শুনি, খারাপ কথা বা গালিও শুনি- ফেসবুক এবং পেজে সব জায়গায়। আমি সাদা শাড়ি পড়ি নাই কেন? এটার জন্যে গালি। আমার চুল খোলা কেন? এটার জন্যে আবার গালি। স্বামীর জন্যে কাঁদছে কেন? সে তো তার সাবেক স্বামী। আবার বলবে- আমি ডাইনি এবং রাক্ষুসী। সন্তান ফেরত চাই সম্পত্তির জন্যে। সারাক্ষণ এই সব শুনছি। শুনতে শুনতে আমার ধৈর্য্য এমন হয়ে গেছে যে, আমি আরও শক্ত ও পরিণত হচ্ছি।
প্রশ্ন: এরশাদকে ভালবেসে বিয়ে করাটাই কি পাপ ছিল আপনার জীবনে?
বিদিশা: নট অ্যাট অল। আমি তো এনজয় করেছি তার সাথে প্রেম ও ভালবাসা। কেন পাপ বলছেন? ওই সময়টুকুই তো আমার মেমোরিতে আছে। এর ভাল স্মৃতি নিয়েই তো আমি বাকী জীবন কাটাবো। আমার সন্তানের জন্যে তো প্রয়োজন।
প্রশ্ন: বিশ্বপ্রেমিক এরশাদ। এতো এতো নারীর সাথে প্রেম করেছেন। কিন্তু বিদিশাকে কেন বিয়ে করেছিলেন- কী ছিল বিদিশার?
বিদিশা: তার লেখা প্রচুর চিঠি আছে আমার কাছে। আমার মধ্যে হয়তো কোন কোয়ালিটি দেখেছেন, ফিল করেছেন। আর যার জন্যে তিনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন। তার বান্ধবী করে রাখেননি আমাকে। তার কারিশম্যাটিক লিডারশিপ, পল্লীবন্ধু, বিশ্বপ্রেমিক কিংবা কবি মন। তার স্পেশাল একটা মন ডেফিনেটলি ছিল।
প্রশ্ন: আপনাকে বিয়ে করার পরে তার সেই প্রেমিকাদের ভাটা পড়েছিল? নাকি ভাটা পড়েনি বলে আপনাকে সরে আসতে হয়েছিল?
বিদিশা: তা নয়। রাজনৈতিক কারণে এরশাদের কাছ থেকে আমাকে চলে আসতে হয়েছিল। আমি তখন মহাজোট করতে চেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: মহাজোট আপনি নিজের হাতে করেছিলেন- এটি কতোটা সত্যি?
বিদিশা: এটি অবশ্যই বড় সত্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আমি। আজকে আমার এবং আমার বাবার পরিচয় হতো না- এই দেশ স্বাধীন না হলে। দেশ স্বাধীন না হলে আমার জন্ম বৃথা হতো বলে আমি মনে করি। তাই আমি মনে করেছিলাম- জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগের সাথে মহাজোট করে তাহলে খুব ভাল হবে। মহাজোটের গাছ আমি লাগিয়েছি; তার ফল এখন খাচ্ছে অন্যরা।
প্রশ্ন: এরশাদের শূন্য আসনে রংপুরে সাদ এরশাদ নাকি বিদিশা- কে লড়বেন?
বিদিশা: সাদ এরশাদ এবং বিদিশা এরশাদ এরিকের মা- একই তো? সম্পর্ক তো মা সন্তানই হয়ে যাচ্ছে। মা কখনো সন্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না। তাহলে সেই মা আর মা থাকবে না। ডাইনি হয়ে যাবে। সে আমার পেটের সন্তানই হোক, সৎ সন্তানই হোক কিংবা পালক সন্তানই হোক। এটা সম্ভব না। সাদ এরশাদ যদি নির্বাচন করে তাহলে রংপুরের মানুষকে বলবো তাকে সমর্থন করতে। কারণ বাবার সিট থেকে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার তার আছে।
প্রশ্ন: বিদিশার তাহলে কী হবে?
বিদিশা: আমার কি আর কোন কাজ নেই? আমি কি এরশাদের মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলাম? সে মারা গেলে তার সিটে দাঁড়িয়ে আমি এমপি হবো- এই কি আমার লক্ষ্য? আমি কিন্তু এমন কোন লক্ষ্যে কাজ করছি না। আমি আমার সমাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি ।