একুশের চেতনা ধারণ করে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসিত স্বদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, দুর্নীতিসহায়ক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে প্রশ্নবিদ্ধ যেকোনো বিষয়ে আইন ও বিধিবিধান মেনে সরকার সত্য প্রকাশের সৎসাহস দেখাবে এটাই প্রত্যাশা, যা সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিতর্ক এড়িয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবে, অর্থবহ করবে গণতন্ত্রকে।
শনিবার টিআইবি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক দেশ মহান একুশের চেতনার কেন্দ্রীয় উপাদান। একুশ সমস্ত অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগায়। ‘আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের একুশ যেমন আবেগের, তেমনই সংগ্রাম ও দ্রোহের। একুশের পথ বেয়েই বাঙালি বারবার অন্যায়, অবিচার আর শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সূর্যকে। হার না মানা দৃঢ়তায় অশুভকে রুখে দেওয়ার প্রেরণা আমরা একুশ থেকেই পাই।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেকোনো অন্যায়, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে সমন্বিত প্রতিবাদের প্রেরণা হোক একুশে ফেব্রুয়ারি। একইসঙ্গে একুশ হোক দুর্নীতি প্রতিরোধে অনন্য প্রেরণার উৎস। কারণ দুর্নীতি একুশের চেতনার পরিপন্থি। তাই এই একুশের চেতনা ধারণ করেই দুর্নীতিকে রুখতে হবে, সকল প্রকার বৈষম্য থেকে মুক্তি লাভের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’
‘দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন আর একুশের চেতনা অবিচ্ছেদ্য’ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “একুশের যে চেতনার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, দুর্নীতির জগদ্দল পাথর সেই অর্জন ভূলুণ্ঠিত করছে। বৈষম্যহীন, শোষণহীন, ভয়মুক্ত সমাজ বিনির্মাণের যে শপথ মহান একুশের প্রধান চেতনা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার আমাদের সেই শপথ বিনষ্ট করছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র যে প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে, ছোটখাট দুর্নীতি ও কিছু চুনোপুঁটি টানাহেঁচড়ার বাইরে বড় দুর্নীতি ও রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই প্রত্যয়ও কেবল কাগুজে ঘোষণাই রয়ে গেছে।”
টিআইবির নির্বাহী এ পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে দীর্ঘ এক দশক বাংলাদেশের প্রায় একই অবস্থানে আটকে থাকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থান সেটিই যেন প্রমাণ করে। তাই ঘোষিত প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী কঠোরব্যবস্থা গ্রহণই একুশের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে সরকার ও প্রশাসনযন্ত্রে একরকম অস্বীকারের সংস্কৃতি বা ডিনায়াল সিনড্রোম জেঁকে বসেছে। যেকোনো ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম আর অভিযোগ উঠলেই সেটিকে একেবারে বাতিল বা অস্বীকার কিংবা ঢালাওভাবে ষড়যন্ত্রের বাতাবরণ দেওয়ার চেষ্টা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতিসমূহকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে ফেলছে এবং দুর্নীতিসহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে প্রশ্নবিদ্ধ যেকোনো বিষয়ে আইন ও বিধিবিধান মেনে সরকার সত্য প্রকাশের সৎসাহস দেখাবে এটাই প্রত্যাশা, যা সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিতর্ক এড়িয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবে, অর্থবহ করবে গণতন্ত্রকে।
একইভাবে অবিলম্বে দল-মত-পক্ষ নির্বিশেষে কিংবা ভয় ও অনুকম্পার বশবর্তী হয়ে কাউকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মতো অনৈতিক চেতনার ঊর্ধ্বে উঠে, একুশের চেতনা ধারণ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তবিক অর্থেই কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় যে চেতনার ভিত্তিতে আমাদের মহান ভাষাশহীদ ও মুক্তিযোদ্ধারা অকাতরে জীবন দান করে গেছেন তা অনর্থক হয়ে যাবে।’