বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি বহুল প্রতীক্ষিত ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট এর উদ্বোধন করা হয়েছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য অনলাইনে এবং সরাসরি আবেদন করা গেলেও ই পাসপোর্ট এর আবেদন করা যাবে শুধুমাত্র অনলাইনেই।
ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করতে হলে গ্রাহককে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে (Directly to online application) অপশনে ক্লিক করতে হবে।
প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।
তৃতীয় ধাপে মেয়াদ ও পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি জমা দিতে হবে। তবে বর্তমানে ই-পাসপোর্টের অনলাইন পেমেন্ট বন্ধ রয়েছে। আবেদনপত্র জমা দিয়ে অ্যাপোয়েনমেন্ট ডেটের আগে অফলাইনে অর্থাৎ সরাসরি নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে ই-পাসপোর্টের ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার নির্ধারিত ব্যাংকগুলো হলো: ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক।
ই পাসপোর্ট ফি
৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৪ হাজার ২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ৭ কার্যদিবসে পেতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে।
১০ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ৭ কার্যদিবসে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে।
৫ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ৭ কার্যদিবসে পেতে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১২ হাজার ৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।
১০ বছর মেয়াদের ৬৪ পাতার ই-পাসপোর্ট ‘রেগুলার ডেলিভারি’ ক্যাটাগরিতে ১৫ কার্যদিবসের পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা, ‘এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ৭ কার্যদিবসে পেতে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ‘সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি’তে ২ কার্যদিবসের মধ্যে পেতে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা রেগুলার ডেলিভারির জন্য আবেদন করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা এক্সপ্রেস ডেলিভারির সুবিধা পাবেন।
যারা দুদিনের মধ্যে অতি জরুরি পাসপোর্ট নিতে চান সেসব আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে আগেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এনে পাসপোর্টের ফরমে প্রি-পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আবেদনের সময় ক্লিয়ারেন্সের কপিও জমা দিতে হবে।
এমআরপি ফি
৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদের নতুন অথবা রি-ইস্যু এমআরপি ৭ দিনে পেতে ৬ হাজার ৯০০ টাকা ও ২১ দিনে পেতে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দিতে হবে।
এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট উভয় ফি’র সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত রয়েছে।
ই-পাসপোর্ট করতে যা যা জমা দিতে হবে
একজন প্রাপ্ত বয়স্কের ই-পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করে সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে। পাশাপাশি পরিচয়পত্রের মুল কপিও অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখাতে হবে।
১৮-এর কমবয়সীদের জন্য জন্ম-নিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অনাপত্তিপত্র-এনওসি এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য অবসরের প্রমাণপত্র হিসেবে পেনশনের দলিল দেখাতে হবে।
ই-পাসপোর্ট এর সুবিধা
ই-পাসপোর্ট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে সহজেই ব্যক্তি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও তাৎক্ষনিক জানা যাবে।
ই পাসপোর্ট অনলাইন চেক
ই পাসপোর্ট পোর্টালে ‘স্ট্যাটাস চেক’ করা যাবে। এজন্য জন্মতারিখ ও আবেদনের ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করতে হবে। অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকে সব আবেদনের অবস্থা দেখতে পারেন।