
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ইজরায়েলি বর্বর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মার্চ ফর প্যালেস্টাইন অনুষ্ঠিত।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ও দোয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রম দা রিভার টু দা সি, প্যালেস্টাইম উইলবি ফ্রি’,‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জায়োনিজম নো মোর’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘হামাসের যোদ্ধারা, লও লও লও সালাম’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ যখন সাহরি-ইফতার করছি, তখন ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নারী শিশুদের উপর যে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে আমরা বাংলাদেশ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মুসলিম সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধভাবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমরা পুর্বে যেমন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখনো দাঁড়িয়েছি। সারাবিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে ইজরায়েলের মতো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যদি লড়াই না করেন তাহলে বারবার এই পৃথিবীতে মুসলিম সম্প্রদায়কে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আমরা ঘরে বসে সামাজিক মাধ্যমে নারী ও শিশুদের নির্যাতনের যেসব ভয়াবহ চিত্র দেখি হয়তো বাস্তবে তার চেয়েও করুণ। অনতিবিলম্বে ইজরায়েলি বাহিনীকে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এই মুসলিম সম্প্রদায় একতাবদ্ধভাবে ইজরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আজকে আমেরিকা, ইসরায়েলের মতো দেশ টেরোরিজম, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কথা বলে। অথচ আমরা দেখি তারাই সন্ত্রাসবাদের ধারক বাহক। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আমরা সন্ত্রাসবাদ, টেরোরিজম এর বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। আমরা যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ রুখে দিতে প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো সুযোগ আসলে আমরা তা লুফে নিতে দু’বার ভাববো না। আমরা আজকের এই মার্চ ফর প্যালেস্টাইন কর্মসূচি থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের প্রতি যেনো আর কোনো অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন করা না হয়। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলতে চাই, আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের সংগঠক আলী জাকি শাহরিয়ার বলেন, “আমরা জানি ইহুদিদের ইতিহাস আল্লাহর অবাধ্যতার ইতিহাস। বারবার শাস্তি পেয়েও অবাধ্যতার ইতিহাস। আল্লাহ তাদের অভিশপ্ত জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা মুসলিম জাতি বদর, উহুদে লড়াই করেছি। আমরা এমন এক জাতি, যাদেরকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করা হলে মদিনায় গিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে মক্কা বিজয় করেছি। আমাদের অভিধানে পরাজয় বলে কোনো শব্দ নেই। শুধু ফিলিস্তিনে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও হিন্দুত্ববাদীরা আমাদের মুসলিম ভাইদের নির্যাতন করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেই জাতীসংঘ যদি এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যার্থ হয়, তাহলে আমরা এই তারুণ্য শক্তি হিন্দুত্ববাদীদের নির্মূল করে হামাসের ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত কতে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।”
সমাপনী বক্তব্যে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “পবিত্র রমজানে আমরা যখন সন্ধায় ইফতারের পর সেহেরির খাবারের বন্দোবস্ত করি, সেখানে আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনেরা তারা সেহেরি পর্যন্ত বেঁচে থাকবে কি না সেই নিশ্চয়তা তাদের নাই। বহু অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, আর নয়। জাতিসংঘ নামে যে মুলার সংগঠন আমাদের কাছে মানবতার ছবক নিয়ে আসে, কিন্তু ইজরায়েলের মানবতা লঙ্ঘন বন্ধে তাদের কোন কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ে না। জাতিসংঘের এই নিলীপ্ততাকে তীব্র ঘৃণাসহকারে প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি আরো বলেন, “মুসলমানদের সংগঠন ওআইসির নেতারা আজ ভোগবিলাসে ব্যস্ত আছে, এদিকে আমাদের মা-বোনরা নির্বিচারে হত্যা হচ্ছে। আমরা মুসলামদের এই মুলার সংগঠনকে থাকার দরকার বলে মনে করি না। যারা ফিলিস্তিনির পক্ষে থাকবে, ইসরায়েল বিরুদ্ধে কথা বলবে সেসকল রাষ্ট্রকে নিয়ে একটি নতুন সংগঠন হবে। আমরা যারা ফিলিস্তিনির পক্ষে কথা বলতে চাই দরকার পড়লে আমরা হামাস বাহিনীর সাথে যোগদান করবো। মুসলিম বিশ্বের সকল নেতাদের আহ্বান করছি আপনারা সকল ভেদাভেদ ভুলে, ফিলিস্তিনি শিশুদের দিকে তাকিয়ে সকলে মিলে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রতিহত করূন।