হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর হাটহাজারী মাদ্রাসার অফিশিয়াল পেজে তার অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযোগের তীর জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘আহ! তোমরাই পেরেছিলে গেইটে হযরতের অক্সিজেন সাপোর্ট টান দিয়ে খুলে ফেলতে…।’
এমন সময় এ অভিযোগ উঠলো যখন শীর্ষস্থানীয় কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদ্রাসার দখল নিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী গ্রুপ এবং আহমদ শফীর ছেলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুর আগের দিন পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী। বাবুনগরীর অনুসারীরা অসুস্থ আহমদ শফীকে হাসপাতালে আনতে বাধা দিয়েছিল বলেও ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর (বড় মাদ্রাসা) সদ্যসাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (১০৩) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে আহমদ শফী মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বড় হুজুর আজ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আহমদ শফী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হেফাজতের আমিরকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠের পাশে অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির সভায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও শুরা সভার প্রধান হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়েছিল।
আল্লামা আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা।
আহমদ শফী ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামী শিক্ষালাভের উদ্দেশে ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায়। সেখান থেকে হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৪১ সালে চলে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ এবং তার খেলাফতপ্রাপ্ত হন।
ভারত থেকে দেশে ফিরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৮ সালে আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আল্লামা আহমদ শফি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার লেখা ‘হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব’, ‘ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা’, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’, ‘হাদিসসমূহের ব্যাখ্যা’সহ ২২টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ৫০ লাখের বেশি মুরিদ ও ভক্ত রয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর।