বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এতদিন বিএনপিসহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা বলে আসলেও এবার এ বিষয়ে সরব হয়েছেন ক্যাসিনো-কাণ্ডে তোপের মুখে থাকা সাবেক এই মন্ত্রী।
তিনি বলেছেন: আমি সাক্ষী, এই নির্বাচনে (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) আমিও নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি, জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) পারে নাই, উপজেলায় পারে নাই।
শনিবার দুপুরে বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলে ওয়াকার্স পার্টির বরিশাল জেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেনন এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন: শেখ হাসিনা, আপনি-আমি মিলে যে ভোটের জন্য লড়াই করেছি, ঘেরাও করেছি আজিজ কমিশনকে, আমরা এক কোটি ১০ লক্ষ ভুয়া ভোটারের সেই তালিকা ছিড়ে ফেলার জন্য নির্বাচন বর্জন করেছিলাম নমিনেশন সাবমিট করার পরও। আজকে কেন আমার দেশের মানুষ, আমার ইউনিয়ন পরিষদের মানুষ, আমার উপজেলার মানুষ, আমার জেলার মানুষ, আমার মানুষ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে কেন ভোট দিতে আসবে না?
ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য মেনন বলেন: উন্নয়ন মানে গণতন্ত্র হরণ নয়। উন্নয়ন মানে ভিন্ন মতের সংকোচন নয়। উন্নয়ন মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ নয়। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের স্পেস কমিয়ে দেওয়া নয়।
১৪ দলের অন্যতম এই শরিক নেতা আরও বলেন: সরকারের উন্নয়নের সাথে সাথে দেশে লুণ্ঠন, দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। একদিকে সরকার উন্নয়ন করছে, অন্যদিকে সরকারের আশপাশের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না দেশের মানুষ।
রাজধানীর একটি ক্যাসিনো পরিচালনা করা ক্লাবের এই সভাপতি বলেন: ক্যাসিনো পরিচালনাকারীরা অসৎ উদ্দেশ্যে দলে অনুপ্রবেশ করেছে। ক্যাসিনো মালিকদের ধরা হচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতির আসল জায়গা নির্বিঘ্ন আছে। কিন্তু আজকে যারা সেই দুর্নীতি করছেন, তাদের বিচার কবে হবে? তাদের সাজা কবে হবে? তাদের সম্পদ কবে বাজেয়াপ্ত হবে? ক্যাসিনো চালকরা শত শত কোটি টাকা কামাই করে ও খেলাপি ঋণের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। দেশের কোটি কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে মেনন বলেন: এতিমের টাকা মেরে দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে, টাকা পাচার করার অভিযোগে ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিচার কবে করা হবে?
কমরেড নজরুল ইসলাম নীলুর সভাপতিত্বে আয়োজিত জেলা সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কমরেড আনিছুর রহমান মল্লিক। এসময় আরো বক্তব্য দেন বরিশাল জেলা ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. টিপু সুলতান, কমরেড শান্তি দাস, কমরেড অধ্যাপক বিশ্বজিৎ বাড়ৈ, শাহজাহান তালুকদার, ফাইজুল হক বারী, কমরেড এস এম জাকির হোসেন প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১১টায় অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জেলা সম্মেলন কার্যক্রমের শুভ সূচনা করা হয়।
পরে জেলা সভাপতি ও জেলা সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা লাল পতাকা নিয়ে নগরে র্যালি বের করে। এটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে এসে শেষ হয়।