নিজস্ব প্রতিবেদক
উচ্চশিক্ষায় বাংলা প্রবর্তন না করার জন্য আমাদের ইচ্ছার অভাবকে দায়ী করেছেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাকে ভালো ভাষা বলার পক্ষপাতি না। কিন্তু পৃথিবীতে যে দশটা ভালো ভাষা আছে, বাংলা অবশ্যই তার একটি। তাহলে বাংলাতে পড়া যাবে না কেন? আর আমি শুধু বাংলার পক্ষপাতি না, পৃথিবীর সবখানে যেটা মাতৃভাষা সেটায় করা উচিৎ। তাহলে আমাদের অভাবটা কোথায়? সেটা হলো ইচ্ছা! আমাদের ইচ্ছার অভাব হয়েছে।’
শুক্রবার (১৭মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনে আয়োজিত ‘উচ্চশিক্ষায় বাংলা প্রবর্তনের সমস্যা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং লেখক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
তিনি আরো বলেন, মনে করা হয় বাংলা ভাষায় যেহেতু বই নাই, তাই ইংরেজিতে পড়তে হবে। আরেকটা কারণে আমাদের উচ্চশিক্ষায় বাংলা প্রবর্তন হচ্ছে না। সেটা হলো আমাদের সামাজিক মর্যাদা, অহংকার। ইংরেজি পড়লে একটু অনেক বেশি জ্ঞানগর্ভ মনে হবে। এটা সত্য কথা কারণ এটা ক্ষমতার সাথে জরিত। আর এই কারণেই আমাদের দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ইংরেজি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা জানি না, তবে পরিমাণগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জ্ঞানের বিকাশকে সর্বজনীন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি আপনি জ্ঞানের বিকাশকে সর্বজনীন করতে চান, তাহলে তার যে ভাষায় জ্ঞান চর্চা সহজতর হবে সেটা করতে হবে। আর এটা করবেন একজন শিক্ষক। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে ইউরোপ আমাদের থেকে বেশি নয় ৩০০ বছর এগিয়ে গিয়েছিলো অষ্টাদশ শতাব্দী নাগাত। সুতরাং পদার্থ বিজ্ঞান খ্রিস্টানদের তাই ভেবে আমরা আর পদার্থ বিজ্ঞান চর্চা করব না এমন মান অভিমান করলে চলবে না। পদার্থ বিজ্ঞান যেহেতু ইহুদিদের এই ভেবে যদি ইরান আর অনু-পরমাণু নিয়ে গবেষণা না করতো। তাহলে ইরান এইযে একটু মাজা দাঁড়িয়ে কথা বলছে এটা বলতে পারত না।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ আসে বাংলা মাধ্যম থেকে কেউ আসে ইংরেজি মাধ্যম থেকে। এখন আপনি লেকচার দেন যে ভাষায় দেবেন না কেন। বাংলা ভাষায় লেকচার দেওয়া সম্ভব না যে বিষয়ে তাহলে অর্ধেক ইংরেজি এবং বাংলায় দেন। পাচ বছর পর এটা পুরোপুরি বাংলা হয়ে যাবে।
হয়ত প্রথম দিকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বাংলায় পড়া কষ্টসাধ্য হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে সবাই।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা তারিকুল আহসান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজের সভাপতি মাহমুব সিদ্দিকী।
অধ্যাপক আ-আল-মামুন বলেন, আমাদের যদি মাতৃভাষায় উন্নতি করতে হয় তাহলে আমাদের প্রচুর অনুবাদ করতে হবে। তবে এই অনুবাদের বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের একটা প্যাশন ছিল, আমরা পণ করেছিলাম ইংরেজি ভাষায় লিখব না, আমি সেই থেকে ১২ বছর ইংরেজিতে লিখি না। বাংলাতেই লেখার চেষ্টা করি। ভাষা হচ্ছে জ্ঞানের বাহন, শুধু বলার মাধ্যম না। ওই ভাষাটাই হচ্ছি আমরা। এটা না বুঝতে পারার কারণ হলো ভাষা নিয়ে আমাদের অনীহা।
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সমাজকর্মীসহ প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।