দেশে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে। অর্থনৈতিক টানাপড়েন ও মানসিক বিষণ্ণতার কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করছেন বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রকাশনা হেলথ বুলেটিন অনুসারে, সারা দেশে বছরে বিষক্রিয়ার ৬৪ হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। অর্থাৎ দৈনিক ১৭৫ জন বিষ খেয়ে হাসপাতালে আসছেন। বিষক্রিয়ার রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর দু’ শতাংশ।
এমআইএসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে দেশের ৪৯৫টি উপজেলা হাসপাতালে ২২ হাজার ১১০ বিষক্রিয়ার রোগী ভর্তি হন। ২০২৩ সালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৪৪২ জনে দাঁড়ায়। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৩৬৭ জন। উপজেলা হাসপাতালে সাধারণত গ্রামের রোগী ভর্তি হন। এর বাইরে রয়েছে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতাল। সেখানেও বিষক্রিয়ার অনেক রোগী ভর্তি হন। বিষক্রিয়া গবেষকরা বলছেন, বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর হিসাব সঠিক ভাবে রাখা হয় না। এম আইএসের কাছেও এ বিষয়ে পৃথক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এম আইএস বলছে, হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া রোগী ন’ শতাংশ ঝখম ও বিষক্রিয়ার। গবেষকরা বলছেন, বিষ খাওয়া অনেকে রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। তাদের মোট সংখ্যা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা মনে করেন, ঝিনাইদহ এলাকায় বিষপানের ঘটনা বেশি। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার নাম সবার আগে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনারমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্য বলছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিষ খাওয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। কিন্তু একই সময়ে দেখা যায়, দোকাপে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি। শৈলকূপা উপজেলা হাসপাতালে গত বছর ৭৭ জন রোগী ভর্তি হন। সেখানে দাকোপ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, ১৫৯ জন রোগী। অধিকাংশ রোগীই কীটনাশক বা আগাছানাশক বিষ পান করে থাকেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব কীটনাশক সহজেই বাজার থেকে পাওয়া সম্ভব। কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়া এগুলো যে কেউ সংগ্রহ করতে পারেন। বিশ্বের অনেক দেশই ক্ষতিকর কীটনাশক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেগুলোর ব্যবহার চলছে। ফলে বিষদগ্রস্থ মানুষ তা সহজে সংগ্রহ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকে। ভাগ্যক্রমে কেউ বেঁচে গেলে, তারা নিজেরা হীনমন্যতায় ভুলতে থাকেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের জন্য হাসপাতালে নির্ধারিত কোনো বিছানা নেই। ফলে তাদের হাসপাতালে মেঝেতে স্থান হয়। আত্মহত্যা প্রচলিত আইন অনুসারে অপরাধ। সে কারণে রোগী তার চারপাশের লোকেদের থেকে দূরে থাকেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, বিষাদগ্রস্থ মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও জীবন যুদ্ধের পরাজিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করতে সহজলভ্য কীটনাশক বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণ আনা উচিৎ। সেই সাথে ক্ষতিকারক কীটনাশক নিষিদ্ধ করা এখন সময়ে দাবি। আর তা যতদ্রুত করা সম্ভব ততোই কল্যাণকর।