প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য বাজেট বাড়িয়ে একটি উদ্ভাবনী শিক্ষা ইকোসিস্টেম (আইইই) প্রণয়ন করছি। আমরা ন্যাশনাল ব্লেন্ডড লার্নিং পলিসি-২০২১ তৈরি করছি। এইসব নীতির মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তিগত ব্যবধান ঘুচিয়ে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে পারব।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব-২০২১ শীর্ষক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন নতুন আবিষ্কারের পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশকেও সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হলেও শিল্পায়ন প্রয়োজন। আমাদের কৃষি এবং শিল্প দুটোই দরকার। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে তিনটি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে- (১) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ (২) দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি এবং (৩) পরিবেশের সুরক্ষা।
তিনি বলেন, শিল্পায়নের লক্ষ্য মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, নতুন পণ্যের বাজার তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করা। প্রায় ১০০ বছর পর শিল্পায়নের যুগান্তকারী এই বিবর্তন অসাধারণ। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় অতিক্রম করে মানবজাতি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঊষালগ্নে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে অদূর ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডিভাইসের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান হবে। ফলে বেশ কিছু নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের মতো করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। এ জন্য প্রযুক্তিকে সহজলভ্য এবং সহজে হস্তান্তরযোগ্য করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলা, বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং প্রযুক্তিতে দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলরে কাজে মনোযোগ দিয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনে না জয়লাভের পর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি শিল্প খাতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলস্বরূপ, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১২০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই ৫ জি নেটওয়ার্ক চালু করবো। এটি দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাব্যবস্থা, জীবনযাত্রার মান এবং প্রচলিত ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়াকে পুরোপুরি বদলে দেবে। আমি বিশ্বাস করি, আইসিটি এবং সফ্টওয়্যার শিল্প ভবিষ্যতে আমাদের রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধ করবে। আমরা বাংলাদেশে গবেষণা-উন্নয়ন ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদেশি শিল্পকে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ, এর সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়। এসময় তিনজন নোবেল বিজয়ী এবং ছয়জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এছাড়া ‘মুজিব-১০০ আইডিয়া কনটেস্ট’ ও ‘মুজিব-১০০ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সিবিট’ নামে দুটি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১৭টি দেশ থেকে মোট ৫২৫টি গবেষণা পত্র জমা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
এছাড়াও কয়েক হাজার আইডিয়ার মধ্যে থেকে ১০টি সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচিতদের প্রত্যেকে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার পাবেন।