১৮৭২ সালে ডারউইন এ বিষয়টিতে সমর্থন জানিয়ে বলেন যে, মুখের মনোভাব পরিবর্তন করলে আবেগগত পরিবর্তনও চলে আসে।একে তিনি বলেন ‘ফেসিয়াল ফিডব্যাক রেসপন্স’ থিওরি।সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন গবেষণায় ডারউইনের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যে, মুখের ভাব শুধু মনোভাবের ফলই নয়, বরং মুখের ভাব মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।
হাসিখুশি মানুষরা অন্যের বিশ্বাসভাজন হয়। এ ছাড়াও অন্যরা হাসিখুশি মানুষদের অন্যদের তুলনায় নিষ্ঠাবান, সামাজিক ও দক্ষ বলে মনে করে।অরবিট কমপ্লিট এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ ভাগ মানুষ হাসিখুশি নারীদের বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করে।এটি এমনকি মেকআপের চেয়েও বেশি কার্যকর।হাসিতে আপনার মানসিক চাপ কমবে, সম্পর্ক উন্নতি হবে এবং আপনার আয়ু বেড়ে যাবে। ফলে অপেক্ষা না করে এখন থেকেই যতপারেন হাসি দেওয়া শুরু করুন।
হাসি বাস্তবে আপনার দীর্ঘ জীবন এনে দেবে।এ বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে। ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটি ১৯৫২ সালের বেসবল খেলোয়াড়দের হাসি নিয়ে গবেষণা করে। তারা দেখে যে হাসিখুশি খেলোয়াড়রা গড়ে ৭৯.৯ বছর বেঁচে থাকেন। এটি সেখানকার গড় আয়ুর চেয়ে দুই বছর বেশি।এ ছাড়া সেই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব খেলোয়াড়দের কোনো ছবিতে একবারের জন্যও হাসতে দেখা যায়নি, তারা গড়ে ৭২.৯ বছর বেঁচে ছিলেন। ফলে হাসিখুশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে গম্ভীর খেলোয়াড়দের জীবনকালের পার্থক্য দেখা যায় প্রায় সাত বছরের।এ ছাড়াও হৃৎযন্ত্রের সুস্থতার জন্য হাসি কাজে আসে। আর পর্যাপ্ত হাসি ছাড়াও উপযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক পরিশ্রম আপনার জীবনে যোগ করতে পারে কয়েকটি মূল্যবান বছর।
হাসিখুশি মানুষের থাকতে পারে সফল বিবাহিত জীবন।২০০১ সালের এক গবেষণায় কেল্টনার ও হার্কার নারীদের মাঝে এক গবেষণায় দেখেন যারা ইয়ারবুকে হাসিখুশি ছবি দিয়েছে তারা ৫২ বছর বয়সে বিবাহিত জীবনেও অন্যদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট। ২০০৯ সালে এ ধরনের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের হাসি বেশি তাদের মাঝে ডিভোর্সের হারও কম।এ ছাড়া দেখা গেছে যাদের খুব সামান্য বা একেবারেই হাসি দেখা যায় না, তাদের ডিভোর্সের হার অন্যদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এসব গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা বেশি হাসে তারা ইতিবাচক, আনন্দদায়ক ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল জীবনযাপন করে।
গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া এবং সামান্য মুখের পেশির নড়াচড়ায় এন্ডোরফিনসের আগমন ঘটে। ফলে কর্টিসল দ্রুত ভেগে যায় এবং এতে মানসিক চাপ কমে যায়। তা ছাড়া শুধু হাসি হাসি মুখ করে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও স্ট্রেস কমিয়ে ফেলা যায়।
প্রত্যেকবার কারো প্রতি আপনার হাসি একটা উপহার হতে পারে। একটা খুব সুন্দর বিষয়।’ মাদার তেরেসার এ উক্তি ছিল খুবই সঠিক এক উপলব্ধি।গবেষণাতেও দেখা গেছে অন্য কারো হাসিমুখ দেখলে তা হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের উপকারে লাগে। এটি চকলেট খাওয়া, যৌনতা বা অর্থ গ্রহণের মতোই ইতিবাচকভাবে কাজ করে।
হাসির কারণে মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিনস নামে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়।এই হরমোন সুখের অনুভূতি দেয়। হাসি আসল বা মেকি যাই হোক না কেন, এই হরমোন ক্ষরণ হয়। ফলে অযথা হাসলেও মনটা ভালো হয়ে যাবে।এন্ডোরফিনস হরমোন বিষনাশক হিসেবেও কাজ করে।এই হরমোন ক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে কর্টিসল নামের আরেক হরমোন কমে যায় যা কষ্টের অনুভূতি দেয়।তা ছাড়া হাসির ফলে বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।আর এসব কারণেই বলা হয়, হাসি সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ।
হাসির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় আপনার আত্মবিশ্বাস, প্রতিযোগী মনোভাব এবং পেশাদারত্ব। তাই কর্মক্ষেত্রে হাসি আপনাকে সফলদের একজন করে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই হাসির মাধ্যমে কর্টিসল হরমোনকে বিদায় দিয়ে শুধু স্ট্রেস কমানোই নয়, সফলতাকেও উপভোগ করতে পারেন।
যখন সত্যি সত্যি আন্তরিকভাবে হাসেন আপনি, তখন মুহূর্তেই সব বদলে যায় আপনার।মুখের সমস্ত পেশি ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।চোখের চারদিকের পেশি জানিয়ে দেয় হাসিটি আন্তরিক, নাকি মেকি।যেকোনো সময়কে তৎক্ষণাত বদলে দেওয়া যায় হাসির মাধ্যমে।চেহারার গড়ন বদলে যায় এবং তারুণ্যের আভা ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্বে।
সবচেয়ে বড় তথ্যটি হলো, হাসি আবেগ বহন করে।হাসিতে রয়েছে সুখ, আনন্দ এবং ভালোবাসা।এ ছাড়া আরো অনেক কারণে আমরা হাসিঅনেক আবেগের সঙ্গে মিশে যেতেও হাসি আমরা।রাগ, দুঃখ অথবা যন্ত্রণা মেনে নিতেও হাসি আমরা।
যে কারনে কিছু দেশর মানুষ কম হাসে
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবার পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড স্মাইল ডে’ বা বিশ্ব হাসি দিবস। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ওই হাসি দিবসেই তার জন্মদিন পালন করেছেন। যদিও এই নেতার মুখে লোকে হাসি দেখেছে কদাচিৎ!
রাশিয়ানদের মতো ইরানি এবং ফরাসিরাও অন্যদের চেয়ে হাসে কম। এজন্য অবশ্য কিছু সামাজিক কারণও রয়েছে।পোলিশ একাডেমি অফ সাইয়েন্স’র সাইকোলজিস্ট কুবা ক্রিজ এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু সমাজের লোক তার চারপাশের অনিশ্চিত পরিবেশ নিয়ে বিরক্ত থাকে।
রাজনৈতিক কারণে অবদমিত এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের মানুষও দেখা মেলে; যেখানে পড়াশোনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সেখানে কঠিন সামাজিক নিয়ম বেছে নেওয়া হয়। এছাড়াও, কিছু সমাজে অপরাধ প্রবণতা নাগরিক সেবার চেয়ে প্রভাবশালী।
এসব কারণে কুবার গবেষণা পত্র অনুযায়ী- রাশিয়া, ইরান এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে হাসিকে খুব কমই স্বাগতম জানানো হয়। আর হাসলেও অনেকাংশেই মনে হয় তা মেকি।
গবেষণায়, ৮টি হাসিমুখ এবং গম্ভীরমুখকে বিবেচনায় নিয়ে ৪৪টি দেশের কয়েক হাজার মানুষের উপর জরিপ চালানো হয়। জরিপ অনুযায়ী, কয়েকটি দেশের লোক মনে করে হাসিতে নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। যেমন- রাশিয়া, জাপান এবং ইরানের মতো কিছু দেশ।
আবার, আর্জেন্টিনা, জিম্বাবুয়ে, ইরান এবং রাশিয়ায় অনেক মানুষই মনে করে হাসিতে অসততা প্রকাশ পায়।হাসির ক্ষেত্রে লিঙ্গ এবং সংস্কৃতিও গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা রাখে বলে গবেষণা পত্রে মন্তব্য করা হয়।
সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট,ইন্টারনেট