হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ: হাইকোর্ট

কোন রোগী যদি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান, তাহলে সেটি ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের হাইকোর্ট আজ সোমবার এই মর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ রুল জারি করেছে। এজন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী হাসপাতালে যাবার পর কোন ব্যক্তির যদি ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ ঘটে, তাহলে সেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন চেয়ে দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আজ এই আদেশ দিয়েছে।

রিটের পক্ষের একজন আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেছেন, আদালত দেশের স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের জন্য ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।”

আদালত বলেছে, গুরুতর অসুস্থ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলে তা ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ বলে বিবেচিত হবে। অবহেলাজনিত মৃত্যু ফৌজদারি অপরাধ, তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।”

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী অসুস্থ ব্যক্তি কোন হাসপাতালে যাবার পর তাকে ভর্তি করা না হলে অথবা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ হাসপাতাল বা ক্লিনিক, কিংবা চিকিৎসক বা কোন স্বাস্থ্যকর্মীর অবহেলায় যদি ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে তাহলে সেটি ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

দণ্ডবিধির ৩০৪ এর ‘ক’ ধারায় বলা হয়েছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।বাংলাদেশে মার্চের আট তারিখে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা পৃথক হাসপাতালে, এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি সরকারি হাসপাতালেই হবে এমন একটি ধারণা চালু ছিল।পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর যৌথভাবে মে মাসের ১১ তারিখে একটি নির্দেশনা জারি করে, যেখানে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য দুইটি নির্দেশনা জারি করে।

এক নম্বর হচ্ছে ৫০ শয্যার উপরে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোভিড-১৯ ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসায় আসা কোন রোগীকেই ফেরত পাঠানো যাবে না।

আইনজীবী মি. রহমান বলেছেন, আদালতের অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে, হাসপাতাল-ক্লিনিকে আসা রোগীদের ফেরত না পাঠানো সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এবং ৫০ শয্যার বেশি সক্ষমতা রয়েছে এমন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ রোগী এবং করোনা রোগীদের কতজনকে কীভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।এ বিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সাধারণ রোগী এবং কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা মনিটর করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রতি ১৫ দিন পরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী মি. রহমান বলেছেন, দেশে আইসিইউ বেড কতটি খালি আছে এবং কতটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে তা প্রতিদিন জানাতে বলা হয়েছে। এবং আইসিইউ বেড ব্যবস্থাপনার তথ্য, হেল্পলাইনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দিতে বলা হয়েছে।সেই সঙ্গে আইসিইউর অতিরিক্ত চার্জ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনার মধ্যে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ ও অতিরিক্ত মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এছাড়া করোনাকালীন সময়ে প্রতি ১৫ দিন পর পর উপরোক্ত নির্দেশনা মেনে হাইকোর্ট রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।